মেলিন্ডা গেটস সম্প্রতি ঘুরে গেলেন ভারত। তথা উত্তরপ্রদেশ। ভূয়সী প্রশংসা করে গেলেন উত্তরপ্রদেশ সরকারের। কোভিড সামলানোর ক্ষেত্রে। যেভাবে সারা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে টীকাকরণ অভিযান চালানো হয়েছে, তার। বলেছেন যে উত্তরপ্রদেশের টীকাকরণ অভিযান থেকে শেখা উচিত শুধু সারা ভারতের নয়, সারা পৃথিবীর। বলেছেন যে ভবিষ্যতে তিনটি ক্ষেত্রে উত্তরপ্রদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্য, পুষ্টি এবং কৃষি১।
আমাদের মনে আছে, উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদ থেকে (দিল্লীর এক প্রান্ত) হাজারে হাজারে শ্রমিকের বাড়ি ফেরার জন্য বাসে, ট্রেনে ওঠার চেষ্টা। না পেরে, সরকারী সাহায্যের উদাসীনতায়, শ্রমিকদের কষ্টের প্রতি উন্নাসিকতায়, পায়ে হেঁটে, ভারতের আর এক প্রান্তে নিজের বাড়ী ফেরার জন্য লঙ মার্চ। সঙ্গী ছিল, পুলিশের দ্বারা হয়রানি। লকডাউনের শুরুতে। আমার মনে হয়েছে মেলিন্ডা গেটস হয়ত এটা শিখতে বলেছেন, ভারতের অন্যান্য প্রদেশকে এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশকে। এ প্রসঙ্গে ভুলে গেলে চলবে না যে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির করা একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, গোটা পৃথিবীর লকডাউনের সময়ে, সব দেশের মধ্যে ভারতে জনগণের ওপর বিধিনিষেধ ছিল সবথেকে কড়া এবং মানুষকে সাহায্য দেওয়া হয়েছিল সবথেকে কম২।
আমাদের মনে আছে, এই লকডাউনের সুযোগে ভারতে শ্রমিক এবং কৃষকদের ওপর আইনী আক্রমণ নামিয়ে আনা হয়েছিল। শ্রম কোড নামে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এক ভয়ানক আইন আনা হয়েছে। যা, আগের অন্যান্য শ্রম সংক্রান্ত আইনকে বাতিল করে চালু করা হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে তিনটি আইন আনা হয়েছিল কৃষকদের বিরুদ্ধে। এক বছরের বেশী সময় ধরে কৃষকদের আন্দোলনের ফলে, এবং সেই আন্দোলন ভারতের জনগণের অন্যান্য অংশের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার ফলে, আর সেই আন্দোলনের প্রভাব ভারতের সৈন্যবাহিনীর মধ্যে পড়ার ফলে, কৃষি আইনগুলো আপাতত স্থগিত আছে। কিন্তু, এই ঘটনাগুলো আমরা ভুলিনি। ভুলিনি, যে কৃষক আন্দোলনের ওপর দমন পীড়ন, কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে আসা মানুষজনদের হয়রানি, এই উত্তরপ্রদেশে হয়েছিল সবথেকে বেশী। মেলিন্ডা গেটস এটাও শিখতে বলেছেন উত্তরপ্রদেশ সরকারের থেকে।
আমাদের মনে আছে, জোর করে টীকা দেওয়ার দৃশ্য, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা যা পেয়েছিলাম। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে পুলিশ মাইক নিয়ে প্রচার করছিল যে ঘর থেকে বেরোনো নিষেধ, কোভিড টীকা নিতেই হবে, ইত্যাদি। উত্তরপ্রদেশে। কোভিড ভ্যাক্সিন সরকারী ভাষ্যে ঐচ্ছিক বলে প্রচার করেও, সামাজিক চাপ তৈরী করে টীকাকরণ অভিযান। প্রশংসা সেই কারণেই।
মেলিন্ডা গেটস হলেন বিল এ্যন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ সভাপতি। এই ফাউন্ডেশন এখন বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদীদের এক নেতৃত্ব। জনস্বাস্থ্যকে হাতিয়ার করে এরা সারা বিশ্বের জনজীবনকে পরিচালনা করার চেষ্টা করছে। যাতে সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের মতো করে সারা পৃথিবীর পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজিয়ে গুছিয়ে নিতে পারে। সাম্রাজ্যবাদের সংকট কাটানোর চেষ্টা। সেই কাজে উত্তরপ্রদেশের সরকার গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা করেছে। প্রশংসা সেই কারণেই। সেই কাজকেই মডেল হিসেবে তুলে ধরেছেন মেলিন্ডা গেটস। আরো কিছু কথা বলেছেন মেলিন্ডা গেটস। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাতকারে। বলেছেন যে ভারতে আরো অনেক ভ্যাক্সিন তৈরীর কারখানা বানাতে হবে। কিছু তৈরী হয়েছে। যার একটা পুনাওয়ালা গোষ্ঠীর। উল্লেখ্য যে এইরকম কারখানা তৈরীর কথা ২০২১ সালেই বিল গেটস এসে ঘোষণা করে গিয়েছিলেন। গেটস দের যেমন কথা তেমন কাজ। করে দেখিয়েছেন। সেইজন্য কাজের মানুষ যোগীজীকে প্রশংসা করে গেলেন বোধহয়। যাকগে, এখন আমরা একটু পেছন ফিরে তাকাবো। একবার পর্যালোচনা করে নেবো আমাদের সাম্প্রতিক ইতিহাস। প্ল্যানডেমিক এর শুরু থেকে।
২০০৮ সাল থেকে শুরু হয়ে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় এক সংকট চলছে। সেই সংকট কে সামলানোর জন্য সাম্রাজ্যবাদীরা এক নয়া ব্যবস্থাপনার আয়োজন করেছে। বিভিন্ন স্তরে আলাপ আলোচনার পরে রকিফেলার ফাউন্ডেশনের নেতৃত্বে ২০১০ সালের মে মাসে একটা তাত্ত্বিক খসড়া তৈরী হয়। নাম তার Scenarios for the Future of Technology and International Development । সেই থেকে, সেই দিশা অনুযায়ী শুরু হয় সংকট কাটানোর নানান চেষ্টা। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, বিশেষত জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, পরিবেশ ক্ষেত্রে এবং ইন্টারনেট পরিষেবা এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টালিজেন্স ব্যবহার করে যে এই সংকট কাটানো যেতে পারে, এই মতামত উঠে আসতে থাকে, সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে থেকে।
২০১৩ সালের ২৬ থেকে ২৭ শে জানুয়ারী, চীনের বেজিং শহরে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড হেলথ সামিটে, এ বিষয়ে মোটামুটি আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদীদের মধ্যে এক মতৈক্যে পৌছনো সম্ভব হয়। সেই সামিটের রিপোর্ট রকিফেলার ফাউন্ডেশন প্রকাশ করে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে৩।
জানুয়ারী ২০১৭ তে দাভোসের World Economic Forum এর মঞ্চে ঘোষিত হয় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা তৈরী হওয়ার কথা। নাম তার Coalition for Epidemic Preparedness Innovations । প্রতিষ্ঠাতা এবং লগ্নীকারী (ইউ এস ডলার ৪৬০ মিলিয়ন দিয়ে পথ চলা শুরু) সদস্যেরা হলেন Bill and Melinda Gates Foundation, Wellcome Trust, World Economic Forum, এবং নরওয়ে, জাপান, ও জার্মানীর সরকার। লগ্নীকারীদের তালিকায় ছিল Glaxo Smithkline Beecham এর মতো ফার্মা কোম্পানীরাও। পরে এতে যোগদান করে ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়ন, বৃটেন ও ভারতের সরকার৪ ।
২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে জনস হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, নাম তার “ইভেন্ট ২০১” ৭। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে নিউমেরোলজি নামে যে অপসংস্কৃতিটি বর্তমানে চালু সেই ধারা অনুযায়ী ২০১ সংখ্যাটি হল সৌভাগ্যের প্রতীক। এই অনুষ্ঠানের বর্ননা করতে গিয়ে একে বলা হয়েছিল এটি একটি উচ্চ স্তরের করোনা ভাইরাস অতিমারীর মতো অবস্থার অনুশীলন - a high level Corona Virus Pandemic Simulation Exercise। এই অনুশীলনে সাহায্যকারী ভূমিকায় ছিল বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, আর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। অংশগ্রহণকারী হিসেবে ছিল জাতিসংঘ (UN),পৃথিবীর সব বড় ব্যাংক, সব বড় মিডিয়া, সব বড় সরবরাহকারী কোম্পানী, ইত্যাদির প্রতিনিধিরা। এছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হল জনসন এন্ড জনসন, বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনে অবস্থিত CDC এর প্রতিনিধিবৃন্দ। এই CDC বা সেন্টার ফর ডিসিস কন্ট্রোল, হল আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একটি সংস্থা, যার প্রাথমিক উদ্দেশ্য আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ করা এবং সেরকম রোগ নিয়ে গবেষনা করা। এই সংস্থার কিছু শাখা অন্যান্য কিছু দেশেও রয়েছে, যেমন চীনে।
২০শে নভেম্বর, ২০১৯ – পিরব্রাইট ইন্সটিটিউট নামে একটি গবেষনা সংস্থা, ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়নের পেটেন্ট অফিস থেকে কর্মক্ষমতাহীন (attenuated) করোনা ভাইরাসের ওপর পেটেন্ট লাভ করে। এই পেটেন্টের আবেদনে গবেষনার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছিল – হাঁস, মুরগী ইত্যাদির শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণকারী এক ধরনের করোনা ভাইরাসের ওপর গবেষনা; কিন্তু পেটেন্ট দেওয়া হয় কোনো বিশেষ করোনা ভাইরাসের ওপর গবেষনার জন্য নয়, পেটেন্ট দেওয়া হয় সাধারনভাবে করোনা ভাইরাসের ওপর। পেটেন্ট সংখ্যা – ১৫৭৫০০৯৩.৫। আবেদনের তারিখ ২৩।০৭।২০১৫ । এই ২০১৫ সালের মার্চ মাসে অর্থাৎ ৪ মাস আগেই ছিল বিল গেটসের সেই বিখ্যাত ভাষণ যে ভাষণে তিনি 'ভবিষ্যদবানী’ করেছিলেন আসন্ন অতিমারী সম্পর্কে।
এই পিরব্রাইট ইন্সটিটিউট৫ ইংল্যান্ডের সারে তে অবস্থিত একটি সরকারি অনুদানপ্রাপ্ত গবেষনা সংস্থা, কিন্তু এতে বেসরকারি নানান সংস্থাও বিনিয়োগ করে থাকে। পিরব্রাইট ইন্সটিটিউটে দাতা সংস্থাদের মধ্যে আছে বিভিন্ন ট্রাস্ট ফান্ড, যেমন Wellcome Trust।
এর পরে ২০২০ সালের জানুয়ারী থেকে শুরু হয় অতিমারীর নাটক। বিশ্বজোড়া ভাঁওতা অতিমারী। যার নেতৃত্বে ছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। জাতি সঙ্ঘের অংশ এই সংস্থা, ইতিমধ্যে নিজেকে তৈরী করে নিয়েছিল সাম্রাজ্যবাদীদের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে।
এই শতাব্দীর শুরু থেকেই জনস্বাস্থ্যের নানা অজুহাতে নানা রাষ্ট্রের নানা কার্য্যকলাপে এই সংস্থা হস্তক্ষেপ করার প্রচেষ্টা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায়, ২০০৫ সালে এই সংস্থা একটি আন্তর্জাতিক বিধিব্যবস্থা চালু করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০০৫ সালে নিয়ে আসে ইন্টারন্যশনাল হেলথ রেগুলেশন। সেই বিধিব্যবস্থা অনুযায়ী, স্বাক্ষরকারী দেশগুলো এই ব্যবস্থা অর্থাৎ IHR 2005 মানতে বাধ্য,এই ব্যবস্থা অনুযায়ী তাকে নিজের দেশে আইন আনতে হবে এবং সেই আইন এই IHR 2005 এর সঙ্গে মানানসই হতে হবে। এই IHR 2005 অনুযায়ী যে ১৯৬ টি দেশ এতে স্বাক্ষর করেছে, তাদের সরকারদের স্বাস্থ্য, বিশেষত জনস্বাস্থ্য এবং বিশেষত সংক্রামক রোগ সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ ও নেতৃত্বে চলতে হবে। ইতিমধ্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা,নিজেকে ফার্মা কোম্পানি, বা বলা ভালো মেডিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স এর প্রতিনিধি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে ফেলেছে। তার মানে দেখা যাচ্ছে যে জাতি সঙ্ঘ যেমন সামাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলো দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, যেমন NATO (North Atlantic Treaty Organisation) র সদস্য রাষ্ট্রগুলো, তেমনই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের সাম্রাজ্যবাদীদের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। যেমন বিল এ্যাণ্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন।
এই বিল গেটস ফাউন্ডেশন সম্পর্কে আমাদের কিছু তথ্য আর একবার ঝালিয়ে নেওয়া দরকার। FamousKin.com নামের এক ওয়েবসাইটে সার্চ দিলেই দেখা যাবে যে, এই গেটস পরিবার, রকিফেলার পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কিত। যে রকিফেলার পরিবার ‘ইউজেনিক্স’ মতবাদের অন্যতম প্রধান পৃষ্টপোষক। পরবর্তীতে যে রকিফেলার পরিবারের ফাউন্ডেশন সারা পৃথিবীর মানুষকে ঘরবন্দী করার নীল নকশা তৈরী করেছে(আগে দ্রষ্টব্য)। এই দুই পরিবারই বিলিয়নিয়ার। এই দুই পরিবারই আমেরিকার রাষ্ট্রীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী হয়ে থেকেছে। এই ইউজেনিক্স মতবাদ হোলো চার্লস ডারউইনের জীবের বিবর্তন এর তত্ত্বের থেকে বিকৃতি ঘটানো এক তত্ত্ব। বিকশিত হওয়ার পরে এর মূল কথা হোলো, নানান বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে “শক্তিশালী” জাত অর্থাৎ আর্য্য, নর্ডিক ইত্যাদি জাত এর মানুষ ছাড়া, বাকিদের অর্থাৎ বিভিন্ন অন্যান্য বর্ণের মানুষদের, ইহুদিদের, জাত হিসেবে শেষ করে দেওয়া এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে অন্যরকম মানুষদের, এবং চলতি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধীদের নিকেশ করে দেওয়া। এই মতবাদের উত্থান উনবিংশ শতকের শেষের দিকে, ইংল্যান্ডে এবং বাড়বাড়ন্ত হয় বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে৬, সমাজের বর্ণবিদ্বেষী উচ্চশ্রেণীর মধ্যে। তারপর এই মতবাদ ছড়িয়ে পড়ে ইয়োরোপে,বিশেষত জার্মানীতে৭, আর তৎকালীন জার্মান নাৎসিরা এই মতবাদের প্রসার এবং প্রচার ঘটায়। বস্তুত নাৎসিরা তাদের জাতিবিদ্বেষের কর্মকান্ডের এক দার্শনিক ভিত্তি পেয়ে যায় এই ইউজেনিক্স মতবাদের মধ্যে। নাৎসিদের নারকীয় কাণ্ড এই মতবাদকে কিছুদিনের জন্য জনমননে হেয় করে রেখেছিল।
কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কয়েক বছর পর থেকেই এই মতবাদ, ইয়োরোপ এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতি বিজ্ঞানের ও সমাজ বিজ্ঞানের নানা পুরনো ও নতুন শাখার মাধ্যমে। নতুন শাখা যেমন জিন প্রযুক্তি, আর পুরনো শাখা যেমন মনোরোগবিদ্যা। এবং সেই সময় আন্তর্জাতিক ট্রাস্ট ফান্ডগুলো, যেমন রকিফেলার ফাউন্ডেশন বিজ্ঞানের এই সব শাখাকে অর্থ সাহায্য করতে থাকে। অর্থাৎ পুরনো এক ফ্যাসিবাদী সাম্রাজ্যবাদী তত্ত্ব, সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ফ্যাসিবাদের শোচনীয় সামরিক পরাজয়ের পরে, মূলত আমেরিকার (এবং ইয়োরোপেরও) বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঘাটি গেড়ে বসলো। এবং সাম্রাজ্যবাদীদের অর্থে এই তত্ত্ব পুষ্ট হয়ে উঠতে থাকলো। বিজ্ঞান তথা চিকিৎসা বিজ্ঞানের মধ্যে জাতিবিদ্বেষ মূলক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার এটা একটা ধারা। বিজ্ঞান তথা চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়া এবং মেডিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কমপ্লেক্স তৈরী হওয়াকে আমরা ধরতে পারি দ্বিতীয় ধারা। যে ধারার ধাক্কায় চিকিৎসা বিজ্ঞান এখন চলে মানুষের প্রয়োজনে নয়, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে, সাম্রাজ্যবাদী বাজারের প্রয়োজনে। চিকিৎসা পরিষেবা এবং গবেষণা দুইই চলে সাম্রাজ্যবাদীদের অঙ্গুলিহেলনে, তাদের পৃষ্ঠপোষনায়। এই দুই ধারা এসে মেলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায়।
চেষ্টা অনেকদিন ধরে চলছিল। একবিংশ শতাব্দীতে এসে সেই চেষ্টা ফলপ্রসূ হয়। বিশ্বের ফ্যাসিবাদী শক্তিরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মধ্যে তাদের প্রতিনিধিদের মেলাতে পারে। যাতে স্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্যের অজুহাতে গোটা বিশ্বকে, সব দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে কব্জার মধ্যে এনে ফেলা যায়। তাই ২০০৫ সালের এই সব বিধিব্যবস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তৈরী করেছিল। আন্তর্জাতিক ফ্যাসিবাদের নেতৃত্বে। ২০০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া মন্দা এদের কাছে একটা সুযোগ এনে দেয় সারা বিশ্বে এই ফ্যাসিবাদের প্রাধান্য বিস্তার করার। হাতিয়ার জনস্বাস্থ্য।
২০০৮ সাল থেকে সারা পৃথিবীর নানা ঘটনাক্রমের ওপর চোখ বোলালে এবং চিকিৎসা বিদ্যার উলটপুরানের দিকে নজর দিলেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠবে যে এই অতিমারী আসলে ভাঁওতা অতিমারী, এবং কোনোভাবেই প্রাকৃতিক কারণে ঘটেনি৮,৯।
ভাঁওতা বলেই, এই প্যানডেমিকের পেছনের আসল কারণ অর্থনৈতিক বলেই, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ডিরেক্টর ক্লস শোয়াব, বই লিখে দাবী করেছেন যে কোভিড ১৯ এর প্যানডেমিক এর ফলে লকডাউন হয়ে পৃথিবীটা আবার নতুন করে সেজে উঠতে চলেছে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ত্বরান্বিত হচ্ছে, যে শিল্প বিপ্লবের চালিকা শক্তি হোলো এ আই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স)১০।
কিন্তু এই অতিমারীর জুজু দেখিয়ে সারা পৃথিবী জুড়ে লকডাউন করেও, সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের চাহিদামতো অতি মুনাফা তৈরী করতে পারেনি। এর নানা কারণ আছে।
একটা কারণ যেমন, এই পৃথিবীটাকে সাম্রাজ্যবাদীরা, এককেন্দ্রিক করে রাখতে পারেনি বেশীদিন। "ঠান্ডা যুদ্ধ” এর অবসানের মধ্যে দিয়ে আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে পৃথিবীটা একটি এককেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থায় ঢুকে গিয়েছিল গত শতকের শেষের দিকে। কিন্তু সেটা বেশীদিন স্থায়ী হয়নি। একবিংশ শতকের শুরুতেই আবার রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে ইংল্যান্ড, ইয়োরোপের মূল ভূখণ্ড এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদীদের অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। যা পরে সামরিক যুদ্ধেও গড়ায়, যে ধরনের এক সামরিক যুদ্ধ এখনো একটা চলছে। এবং এক্ষেত্রে অর্থনৈতিক যুদ্ধেরও আর কোনো রাখঢাক নেই। সুতরাং সারা বিশ্বে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদীদের হাত ধরে ফ্যাসিবাদের সারা বিশ্বময় প্রাধান্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। রাশিয়া বা চীন কেউই সমাজতান্ত্রিক নয়, সেই পরিস্থিতিও আজ নেই। সমাজতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার যে ভিত্তি এই দুই দেশে অতীতে তৈরী হয়েছিল, তার প্রতি বর্তমান রাষ্ট্র এবং শাসকদের মনোভাব, মতামত, আমার সম্যক জানা নেই। কিন্তু, আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে একটু নেড়ে চেড়ে দেখলেই এটা বোঝা যায় যে এককেন্দ্রিক, সাম্রাজ্যবাদী, আন্তর্জাল এবং এ আই ভিত্তিক, ফিনান্স পুঁজি নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব ব্যবস্থার বিরুদ্ধে, চীন এবং রাশিয়ার এই অক্ষ এক বড়সড় বাধা। এবং এদের প্রভাবের মধ্যে বেশ কিছু দেশ ইতিমধ্যেই রয়েছে।
দ্বিতীয় আর একটা কারণেও সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের চাহিদামতো অতিমুনাফা পায়নি। পৃথিবীর তথাকথিত অনুন্নত দেশগুলোতে আইনী ব্যবস্থা তেমন আঁটোসাটো নয়। এই যেমন ভারতে। এখানে বিগত ভাঁওতা প্যানডেমিকে, লকডাউন করা হয়েছিল ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এ্যাক্ট বা বিপর্যয় মোকাবিলা আইন এর ভিত্তিতে। কিন্তু এই আইন অতিমারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। অতিমারীর ক্ষেত্রে যে আইন ছিল, সেই আইন ছিল বৃটীশ শাসন কালের। এজন্য আইনী প্রশ্নের মুখে পড়তেও হয়েছে রাষ্ট্রকে। যদিও সাধারণ মানুষের অথবা তাদের পক্ষের কোনো কোনো বুদ্ধিজীবীদের সে সব প্রশ্ন ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সরকার এবং কোর্ট ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আইন পোক্ত না থাকার ফলে, আইনের নানা ফাঁক ফোকর গলে সাধারণ মানুষ কিছু রিলিফ পেয়েছিলেন, ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসা কিছুটা তার ব্যবসা ক্ষেত্র রক্ষা করতে পেরেছিল।
এবার আর সেই সুযোগ্টাও দিতে চায়না সাম্রাজ্যবাদীরা এবং তাদের বশংবদ দেশীয় শাসকরা এবং রাষ্ট্র।
জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রের মাধ্যমে জনজীবনে হস্তক্ষেপ করার জন্য, আটকে দেওয়ার জন্য, অনেক দেশেই কোনো আইন নেই। এই শূন্যতাটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গোচরে এসেছে। তাদের ডিরেক্টর জেনারেল তেদ্রস আধানম ঘেব্রেইসাস খেদোক্তি করেছেন যে “তৃতীয় বিশ্বের” বহু দেশে কোভিড এর অপরিক্ষীত, জিন পরিবর্তনকারী ভ্যাক্সিন সব মানুষকে দেওয়া যায়নি। লকডাউনও ভালোভাবে করা যায়নি বহু দেশে। এবার তাই সাম্রাজ্যবাদীরা জাতিসঙ্ঘের অধীন আর এক অতিরাষ্ট্রিক সংস্থা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে আইনী ব্যবস্থাকে পোক্ত করতে চাইছে। IHR 2005 এর আওতার মধ্যে করতে চাইছে এক অতিমারী চুক্তি। এই IHR 2005, সংশোধিত হতে হতে এখন এমন অবস্থায় আছে যে (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিজের ভাষাতেই), এহোলো এক আইনী ধাঁচা যার মাধ্যমে সব রাষ্ট্রের জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত দ্বায়িত্ব এবং অধিকারের রূপরেখা স্পষ্ট করে তোলা যায়। এটা এমনই এক আইনী বন্দোবস্ত যা জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, নজরদারী, নজরদারী তথ্যের প্রক্রিয়াকরণ, তার ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় প্রতিক্রিয়া, আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় ভ্রমণ ও পরিবহন, ইত্যাদি বিষয়ে, রাষ্ট্রগুলোর দ্বায়িত্ব ও অধিকার সংক্রান্ত আইন তৈরীর ভিত্তি হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেই বলছে যে এই বিধিব্যবস্থা তৈরী হয়েছিল ইয়োরোপের মহামারী গুলোর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে১১। অন্যান্য দেশের মহামারীর কথা কি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিচার্য্য বিষয় হয়ে উঠতে পেরেছে কোনোদিন?
তো এই বিধিব্যবস্থার ভিত্তিতে কি চুক্তি করতে চলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ? একটি মহামারী চুক্তি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় এখন আলোচনার পর্য্যায়ে রয়েছে। সেই চুক্তির বর্তমান অবস্থায়, দেখা যাচ্ছে যে -
ক। অন্যান্য আন্ত র্জাতিক চুক্তির সঙ্গে এই চুক্তি হাতে হাত রেখে চলবে; যদি অন্য কোনো চুক্তি বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে বিরোধ বাধে তাহলে অতিমারী মোকাবিলার স্বার্থে এবং সেই লক্ষ্যে সেই বিরোধ মিটিয়ে নিতে হবে (বকলমে বলা যে এই চুক্তির কথাই প্রাধান্য পাবে)।
খ । সদস্য রাষ্ট্রগুলো অন্যান্য ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে চুক্তি করতে পারবে কিন্তু দেখতে হবে যাতে এই চুক্তির ধারাগুলো কোনোভাবে বিঘ্নিত না হয়। অর্থাৎ, এখন থেকে এই চুক্তিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি যা আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
গ। এই চুক্তির আওতায় ধরা হয়েছে এই বিষয়ে উপস্থিত কোনো আইন যেমন IHR 2005, অথবা পরে এ সংক্রান্ত যে আইন ও বিধিব্যবস্থা হবে তা। অর্থাৎ এই চুক্তিতে একবার সম্মতি দেওয়ার অর্থ হোলো ভবিষ্যতের এই সংক্রান্ত সমস্ত আইন, ও বিধিব্যবস্থা, যা কি না এখনো সামনে আনা হয়নি, তাতেও না জেনে সম্মতি দেওয়া।
ঘ। এই চুক্তি করার উদ্দেশ্য হোলো অতিমারী আটকানো, যদি তা হয়েই যায় তাহলে চটপট প্রতিক্রিয়ায় ঝাঁপিয়ে পড়া, এবং বৈজ্ঞানিক প্রমানভিত্তিক প্রতিক্রিয়া করা। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য, যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতিমারী আটকাতে চাইছে, যা একদেশ থেকে অন্যদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে, বা ধরা যাক এশিয়া বা আফ্রিকা থেকে ইয়োরোপে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এরা কিন্তু মহামারী আটকাতে চাইছে না, যা কিনা একটা দেশের মধ্যে কোনো সংক্রামক রোগ ছড়িয়ে পড়লে বলা হয়ে থাকে। আগেও দেখেছি যে এনারা ইয়োরোপে মহামারী নিয়ে চিন্তিত হয়ে IHR 2005 নামক বিধিব্যবস্থা তৈরী করেছিল। মানে এবারো কি চাইছে যাতে, এশিয়া বা আফ্রিকায় হলে হোক, কিন্তু সেটা তথাকথিত উন্নত দেশগুলোতে ছড়িয়ে না পড়লেই হোলো? সেটা আটকানোর উপায় কি ভ্রমণ এবং পরিবহন আটকে? আর আফ্রিকায় এবোলা ভাইরাসের মতো ভাইরাস দিয়ে, বা ল্যাবরেটরিতে রক্ষিত প্লেগ বা স্মল পক্স এর মতো ভাইরাস দিয়ে তো কিছু এক্সপেরিমেন্ট করাই যায়, তাই না? কালো মানুষ, বাদামী মানুষরা তো আসলে দুর্বল এবং নীচ জাত! ইউজেনিক্স তো তাই বলে। আর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ? বিজ্ঞানকে যে সাম্রাজ্যবাদীরা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো পরিবর্তন করে থাকে, তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ বিগত ভাঁওতা প্যানডেমিক। ওটা নিয়ে আর বেশী কথা না বলাই ভালো।
ঙ। এই চুক্তি অনুযায়ী,
১। সব রাষ্ট্রকে নিজেদের রাষ্ট্রীয় এলাকায় অতিমারী সংক্রান্ত নীতি, প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা, আইন, বিধিব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রীয় পদ্ধতি প্রকরণ ইত্যাদি তৈরী করতে হবে। অর্থাৎ নিজের মতো আইন আর সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলো তৈরী করতে পারবে না। তাহলে তাদের সার্ব ভৌমত্ব কোথায় রইল?
২। এই আইনী ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে এবং অন্যান্যদের জানাতে হবে এবং এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখতে হবে। যোগাযোগ রাখতে হবে অন্যান্য সদস্য রাষ্ট্র, নিজ রাষ্ট্রের অন্যান্য দপ্তর, সমাজের বিদ্বজ্জন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সঙ্গে। অর্থাৎ, ভারতের মতো দেশগুলোতে সরাসরি বৈদেশিক হস্তক্ষেপ এর ব্যবস্থা।
৩। এদের সঙ্গে তথ্য, এবং ভবিষ্যদ্বাণী আদানপ্রদান করতে হবে। অর্থাৎ বিল গেটস নেবে আমাদের তথ্য আর তার বদলে আমাদের দেবে কিছু ভুলভাল ভবিষ্যদ্বাণী, সমাজে আতংক ছড়ানোর জন্য।
৪। অতিমারী মোকাবিলার স্বার্থে নিজের রাষ্ট্রীয় এলাকায় বিশেষজ্ঞদের ঢুকতে দিতে হবে, তাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। অর্থ এবং লোকবল নিয়ে অতিমারী মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক ফিনান্স এবং পণ্যকে সদস্য দেশগুলোতে ঢুকতে দিতে হবে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদী ফিনান্স পুঁজির রাস্তা মসৃণ করার কাজ চলবে।
৫। অতিমারী নিয়ন্ত্রণ এর জন্য এবং নজরদারীর জন্য সরকারের সমস্ত দপ্তরকে এবং আইনসভা, বিচারসভাকেও একযোগে চলতে হবে। অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদীদের চলার পথে যাতে আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার কোনো কাটা না থাকে, সে ব্যবস্থা করার দায় আমাদের রাষ্ট্রের ওপরই বর্তাবে।
খুঁটিয়ে পড়লে এরকম আরো নানা আইনী ধারা চোখে পড়বে যা সহজ করে বললে দাড়ায় যে আমাদের ওপর সাম্রাজ্যবাদীদের ফাঁস আরো শক্ত করে যাতে চেপে বসে সেই ব্যবস্থা আসন্ন১২। এবং এই চুক্তির মাধ্যমে। (এই চুক্তি তৈরীর তৃতীয় মিটিং হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে। এই লেখা তৈরী হওয়ার সময় পর্য্যন্ত সেই মিটিঙের সিদ্ধান্ত আমাদের হাতে এসে পৌঁছায়নি)
এবার কি একটা আন্দাজ পাওয়া যাচ্ছে? মেলিন্ডা গেটস এসে নজরদারীর জন্য যোগী আদিত্যনাথকে প্রশংসা করলেন কেন? অথবা ভারতের সার্বভৌমত্বের কি অবস্থা? অথবা আমার দেশে লকডাউনের সিদ্ধান্ত বা অতিমারীর নাম করে এরকম আরো বহু সিদ্ধান্ত কোথায় বসে নেওয়া হতে পারে? বোঝা যাচ্ছে কি এই ভাঁওতা অতিমারীর আসল উদ্দেশ্য?
বৃটীশ সাম্রাজ্যবাদের সামরিক শাসনে থাকার সময়ে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ সম্পদ লুঠ হয়েছিল। বৃটিশদের সামরিক শাসন চলে যাওয়ার পরেও ভারত থেকে গেছে বৃটীশ, ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ফিনান্স পুঁজির অর্থনৈতিক রাজনৈতিক দাসত্বে। লুণ্ঠন এখনো চলছে অবাধে। জনগণের প্রতি রাষ্ট্রের দ্বায়িত্বের ক্ষেত্র সংকুচিত করে আনা (স্ট্রাকচারাল এ্যডজাস্টমেন্ট), জনগণের সম্পদের ওপর আইনী বৈধতার নাম করে (বিলগ্নীকরণ) অথবা অবৈধভাবে (অপারেশন গ্রিন হান্ট) দখলদারি দিয়ে দেওয়া, এস ই জেড থেকে শ্রম কোড এর মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার হরণ, জি এস টি এবং নোটবন্দীর মাধ্যমে মঝারি, ছোট ও ক্ষুদ্র ব্যবসার বাজার দখল করার চেষ্টা, এত শোষন লুণ্ঠন করেও পেট ভরছে না সাম্রাজ্যবাদের। সাম্রাজ্যবাদের খাঁই এর শেষ নেই, এ অনন্ত। "রক্ত করবী" র রাজা যেন এই আমাদের সময়ের রাজা। সাম্রাজ্যবাদ। এত করেও ভারতের বাজার সম্পূর্ণ দখল হয়নি। ভারতের কৃষকেরা মাথা নোয়ায়নি । শ্রমিক শ্রেনী লড়াই ভুলে যায়নি। নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রে (যেমন ডেলিভারী শ্রমিকেরা) নতুন ভাবে লড়াই এ নামছে। তাই লকডাউন। তাই ভাঁওতা অতিমারী। সেই অতিমারীর ভাঁওতা মানুষ ধরে ফেলেছে। তাই চাই আইন। কঠোরতম আইন। আতংকের সদাগরদের চিনে ফেললেও আইন তো মানুষ অমান্য করতে পারবে না। এই আশায় বুক বেধে সাম্রাজ্যবাদ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব ফ্যাসীবাদ কায়েম করতে।
ইতিহাস অবশ্য দেখিয়েছে যে মানুষ বারে বারে এসব মানুষ মারা আইন ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে। এবারো তারা তাই করবে। ফ্যাসিবাদ জিতবে না। নো পাসারন।
আমারে বাঁধবি তোরা, সেই বাঁধন কি তোদের আছে?
১ - http://www.uniindia.com/up-a-model-not-only-for-india-but-for-the-world-melinda-gates/north/news/2874582.html
২ – Pgs 32-34, Crisis and Predation: India, COVID 19 and Global Finance, by Research Unit for Political Economy, pub. Three Essays Collective, First Indian Edition, 2020 (Originally published by Monthly Review Press, New York)
৩ - Dreaming the Future of Health in the Next 100 years: White Paper from the Global Health Summit, Beijing, China, January 26‐27 2013, Written by Dr Rene Loewenson, Training and Research Support Centre, Funded by the Rockefeller Foundation, April 2013. Generated by R Loewenson at http://www.wordle.net/
৪ - https://en.wikipedia.org/wiki/Coalition_for_Epidemic_Preparedness_Innovations
৫ - https://en.wikipedia.org/wiki/Pirbright_Institute
৬ - https://en.wikipedia.org/wiki/Eugenics
৭ - https://en.wikipedia.org/wiki/Eugenics_in_the_United_States
৮ - ভাস্কর চক্রবর্তী, করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ; করোনা কালের কিসসা, ডিসেম্বর ২০২০।
৯ - https://janaswasthyajanabarta.blogspot.com/2022/04/the-backdrop-of-pandemic-note.html
১০ – KLAUS SCHWAB, THIERRY MALLERET, COVID-19: THE GREAT RESET, FORUM PUBLISHING, 2020
১১ – International Health Regulations, 2005, 3rd Edition, WHO, 2016; https://www.who.int/publications-detail-redirect/9789241580496
১২ - Working draft, presented on the basis of progress achieved, for the consideration of the Intergovernmental Negotiating Body at its second meeting; SECOND MEETING OF THE INTERGOVERNMENTAL NEGOTIATING BODY TO DRAFT AND NEGOTIATE A WHO CONVENTION, AGREEMENT OR OTHER INTERNATIONAL INSTRUMENT ON PANDEMIC
PREVENTION, PREPAREDNESS AND RESPONSE, Geneva, 18‒21 July 2022, A/INB/2/3, 13 July 2022.
( পুনশ্চ - এই লেখা লিখতে গিয়ে জন স্বাস্থ্য মোর্চার নেতৃত্ব আমাকে বেশ কিছু তথ্য দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। সাম্রাজ্যবাদীদের আজকের চলন, তার পদ্ধতি এবং সেই পদ্ধতি বর্ননার ভাষা এতই জটিল যে একজনের পক্ষে সেই কাজ করাটা দুরূহ। সুতরাং এর মধ্যে অনেক সীমাবদ্ধতা থাকাটাই বাস্তবতা। সেই সীমাবদ্ধতার দায়ভার আমার নিজের। কেউ এই লেখার সমালোচনা করে একে উন্নত করার চেষ্টা করলে আনন্দিত হবো।)