তিলোত্তমা আন্দোলনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হল। আন্দোলনের প্রথম পর্বের ৪০ দিনের অভিজ্ঞতা আমাদের শিখিয়েছে মানুষের সম্মিলিত কলরবের জোয়ারে শাসকের প্রতিরোধে চিড় ধরে, ক্ষমতার মুখোশ খুলে যায়। আমরা বুঝেছি যে তিলোত্তমার প্রাতিষ্ঠানিক খুনের ন্যায়বিচার পেতে হলে এবং রাজ্যের সমস্ত তিলোত্তমাকে সুরক্ষিত রাখতে হলে এই গণআন্দোলন আমাদের চালিয়ে নিয়ে যেতে হবে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ও স্বাস্থ্য শিক্ষা ক্ষেত্রে যে জঘন্য দুর্নীতি, থ্রেট কালচার ও সরকারি পরিসরকে ব্যবহার করে বিভিন্ন বেআইনি কার্যকলাপের পরিমন্ডল আমাদের রাজ্যে তৈরি হয়েছে সেই সিন্ডিকেট রাজকে উপড়ে ফেলতে হলে আমাদের আন্দোলনকে ব্যাপকতর রূপ দিতে হবে।
* তিলোত্তমার নৃশংস হত্যা ও ধর্ষণের সুবিচার এখনো মেলে নি। যেহেতু তিলোত্তমার মৃত্যু একটি প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা তাই এই খুনের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেক দোষীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে হবে। এই প্রথম দাবি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানির তারিখ পেছানো হল স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকে অবস্থান তুলে নিতেই।
* স্বাস্থ্যদপ্তরের আমলা বা পুলিশ কমিশনারের অপসারণ কোন ন্যায় বিচার নয়। তিলোত্তমার প্রাতিষ্ঠানিক হত্যা ও প্রমাণ লোপাটের অভিযোগের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোন বিভাগীয় তদন্ত কেন এখনো শুরু হয়নি এর জবাব রাজ্য সরকার দিক।
* ডিজিটাল রেফারেল ব্যবস্থা চালু করে সরকারি সেট্রাল সার্ভারে রাজ্যের সব সরকারি হাসপাতালে ভর্তি / খালি বেডের হিসাব দেওয়ার যে দাবি রাখা হয়েছিল, সে বিষয়ে লিখিত প্রতিশ্রুতি মিলেছে। কোন সরকারি অর্ডার এখনো বেরোয় নি।
* সমস্ত সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও হাসপাতালে ডাক্তার ও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য সুরক্ষিত বিশ্রামাগার ও শৌচালয় বানানোর দাবি রাখা হয়েছিল। কেবল আর জি কর হাসপাতালের জন্য টাকা স্যাংশন হয়েছে। বাকি রাজ্যের জন্য শুধু প্রতিশ্রুতি।
* রোগী পরিষেবা না পেলে চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য কর্মীর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না। আমাদের রাজ্যে সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরিষেবার বেহাল দশা আজ সকলের কাছে পরিষ্কার। মহকুমা হাসপাতালে সি টি স্ক্যান বা এম আর আই হয় না, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এক্স রে হয় না। সরকারি হাসপাতালে নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ করা হয়। এসবের জেরে নিত্যদিন আমাদের রাজ্যে রোগী ও তার পরিবারের হয়রানি হয়, বহু মানুষ প্রাণ হারায়। পরিষেবা উন্নত করার লক্ষ্যে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ এখনো অবধি রাজ্য সরকার নেয় নি। নিছক প্রতিশ্রুতি যথেষ্ট নয়।
* মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নির্বাচন, হাসপাতালে রেসিডেন্ট ডাক্তারদের মধ্যে নির্বাচন বা রোগী কল্যাণ সমিতির নির্বাচন নিয়ে সরকারের থেকে কোন প্রতিশ্রুতি মেলে নি। এদিকে মেডিকেল কলেজগুলোতে বহুদিন ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন বন্ধ। এই সুযোগে সিন্ডিকেট রাজ ফুলে ফেঁপে ওঠার পথ সুগম হয়েছে। আবার কোন প্ল্যান ছাড়াই মুখ্যমন্ত্রী রোগী কল্যাণ সমিতিগুলি উঠিয়ে দিলেন।
স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান উঠে গেলেও গত দুই দিনের অভিজ্ঞতা আমাদের বলছে যে বাংলা জুড়ে আন্দোলন জারি আছে। ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী ও আপামর জনগণ হাতে হাত মিলিয়ে ধারাবাহিক সংগঠিত আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তিলোত্তমার ন্যায় বিচার ছিনিয়ে আনতে পারে। ধারাবাহিক গণ আন্দোলন স্বাস্থ্য সিন্ডিকেটকে সমূলে উপড়ে ফেলে প্রতিটি প্রান্তিক মানুষের কাছে বিনামূল্যে যুক্তিপূর্ণ সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিতে পারে। এই লক্ষ্য নিয়ে শুরু হচ্ছে তিলোত্তমা ২.০।
আন্দোলনের জেরে আমাদের রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার নগ্ন বীভৎস রূপ আমাদের সামনে ধরা পড়েছে। তার ভিত্তিতে আমরা মনে করছি যে গণ আন্দোলনের দাবিগুলোতে কিছু গুরুত্বপুর্ন সংযোজন দরকার। আমরা আজকের তিলোত্তমা আন্দোলনের দাবিগুলো সকলের সামনে তুলে ধরতে চাই।