গ্রাফ ওয়েবসাইটে পূর্ব প্রকাশিত
ভূতাত্ত্বিকরা বর্তমান যুগকে বলেন এন্থ্রোপোসিন। এর মানে, পৃথিবীর জলবায়ু এবং পরিবেশ - এসবের গতি প্রকৃতি মানুষের আচরণ-নির্ভর। ভবিষ্যতের ইতিহাসবিদরা বর্তমান সময়কে হয়তো বলবেন ভ্যাকসিনোসিন, যার মানে হবে, এই সমাজের অর্থনীতি থেকে রাষ্ট্রনীতি, সবই ছিল ভ্যাকসিন নির্ভর! আমরা এমন এক সময়ের সাক্ষী যখন চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং মানবতাকে ঘিরে যেকোনো জরুরি প্রশ্নকেই ভ্যাকসিন প্রচারের অন্ধ গোঁড়ামি দিয়ে আক্রমণ করা সম্ভব হচ্ছে।
স্বাভাবিক নিয়মে সেরে ওঠার সম্ভাবনা যেখানে ৯৮%, এমন একটি অসুখের জন্য আমরা পৃথিবীর জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশ কে কেন টিকা দিতে যাব? যে-সংক্রমণে, সারা বিশ্বের নিরিখে গড় মৃত্যুর হার ০.২৩% [1] এবং আমাদের দেশে মাত্র ০.১%, যা অন্যান্য ভাইরাস ঘটিত শ্বাসতন্ত্রীয় অসুখের থেকে কখনোই বেশি নয়, এমন একটি স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে কেন আমরা জনমানসে ভীতির সঞ্চার করব? যে-ভাইরাস তার পূর্বসূরী, যেমন সার্স (১০%) এবং মার্স (৩০%),[1A] এদের তুলনায় মৃত্যু ঘটাবার ক্ষমতায় খুবই নগণ্য এবং তাৎপর্যহীন, তাকে নির্মূল করতে কেন আমরা পৃথিবী জুড়ে তোলপাড় শুরু করব?
এইরকম একটি অবৈজ্ঞানিক ভাবনাকে তীক্ষ্ণ ভাবে কটাক্ষ করেছেন আমাদের সময়কার মহামারী বিজ্ঞানের এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক অধ্যাপক জন ইওয়ানিদিস। কিছুদিন আগে, প্যারিসের একটি চিকিৎসক সম্মেলনে তিনি বলেছেন, "কোভিড শূন্য পৃথিবী আমিও চাই, ঠিক যেমন করে আমি ক্যান্সার শূন্য এবং যক্ষ্মা রোগ শূন্য পৃথিবী চাই; কিন্তু ভেবে দেখা দরকার, সেটা কার্যত সম্ভব কিনা? আমাদের নির্বোধ প্রয়াস, মৃত্যু এবং অসুখের ব্যাপকতা বাড়িয়ে দেবে না তো? অধ্যাপক ইওয়ানিদিস-এর মত পৃথিবীর বহু বিশিষ্ট গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন, এই বৃহৎ টিকাকরণের প্রয়াস কি এক ধরনের বেপরোয়া ভাবনা নয়?
এম আই টি'র বিজ্ঞানী ড. স্টেফানি সেনেফ সতর্ক করে দিয়েছেন যে, নব্য ‘এম আর এন এ’ প্রযুক্তিনির্ভর যেসব ভ্যাকসিন গুলোর পক্ষে জোরালো ভাবে প্রচার চলছে, সেগুলোর দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া একদমই জানা নেই। তাঁর গবেষণাপত্রে[2] তিনি বলেছেন যে, অটো ইমিউন (আত্ম-বিধ্বংসী অনাক্রম্যতা) এবং নিউরো-ডিজেনারেটিভ ( স্নায়ুতন্ত্রের ক্রমাগত ধ্বংসাত্মক অবনতি), এই দুয়ের আশংকা প্রবল, তবে এগুলো দেখা দিতে অন্ততপক্ষে ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
অধ্যাপক ইওয়ানিদিস এবং সেনেফ বিজ্ঞানের কথা বলছিলেন। কিন্তু বিজ্ঞান তার প্রাসঙ্গিকতা হারায়, যদি সে অতি মুনাফার লক্ষ্যে সাযুজ্যপূর্ণ না-হয়। বিজ্ঞানের জায়গা তখন দখল করে নেয় ফাটকা বাজারী এবং গণকের ভবিষ্যৎবাণী। কোভিড-১৯ আবির্ভূত হবার আগেই, ধনকুবের গণৎকার আগাম জানিয়ে দিয়েছিলেন যে সারা পৃথিবীতে ৩ কোটি মানুষ মারা যাবেন। এখন তিনি ৭০০ কোটি মানুষকে টিকাকরণের ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। তার কল্পনা এবং জল্পনা আমাদের জীবন এমনকী, আমাদের ভবিষ্যতকেও অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে, এটাই বাস্তব। সারা বিশ্বের সুবিস্তৃত ভ্যাকসিনের বাজারে তিনি হচ্ছেন অঘোষিত সম্রাট। তার পরিচালিত বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সঙ্গে যৌথভাবে বিশ্বজুড়ে গণ টিকাকরণের সবচেয়ে জোরালো এবং ধারাবাহিক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। কোভিড ভ্যাকসিনের পক্ষে রাষ্ট্রীয় নীতি এবং জনমত গঠনের মূল ভূমিকা নিয়েছে বিল এবং মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের এডভোকেসি এবং পলিসি বিভাগ।
কোন রাখঢাক না রেখেই ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম ঘোষণা করেছে, "কোভিড ১৯ এর বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি বা গোষ্ঠীর অনাক্রম্যতা গড়ে তুলতে গেলে জনস্বাস্থ্যের আধিকারিকদের বিজ্ঞাপনের তত্ত্ব কাজে লাগাতে হবে”। “ভ্যাকসিন হেসিটান্সি” বা ভ্যাকসিন সম্পর্কে সংশয় দূর করতে তিনটি কৌশল",[3] এই শিরোনামে তারা একটি রিপোর্ট বার করেছে। এখানে তারা লিখেছে, “পৃথিবীর ৬০-৭০% মানুষকে টিকাকরণ করা প্রয়োজন হবে এবং টিকার বিরুদ্ধে সংশয় দূর করাটাই হবে আমাদের জীবদ্দশায়, বিপণন সংক্রান্ত লড়াইয়ের একটি মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ।"
ভ্যাকসিনের প্রচারে বহু বিশিষ্ট এবং তারকা ব্যক্তিরা ইনিয়ে বিনিয়ে নানা কথা বলছেন। সে দিক থেকে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের অবস্থান যথেষ্ট খোলামেলা। তারা স্পষ্টই বলেছেন, "আমরা এখন (ভ্যাকসিনের) যোগান সমস্যা থেকে চাহিদার সমস্যার দিকে অগ্রসর হচ্ছি।"
ওই ঘোষণাপত্রে তারা নিদান দিয়েছেন যে, ভ্যাকসিন নিয়ে সংশয় দূর করার জন্য ইন্সেন্টিভ (নগদ প্রাপ্তি) এবং বোঝানোর ছলে ভয় দেখাবার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
একজন সাধারন মানুষও বুঝতে পারবেন, যথেষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই যে জিন টিকা মানুষের শরীরে প্রথমবার ব্যবহার করতে যাওয়া হচ্ছে, সেটা নিয়ে সংশয় থাকবেই, থাকাটাই স্বাভাবিক ও ন্যায় সঙ্গত। কোভিড ভ্যাকসিন গুলোর ফ্যাক্ট শীটে (তথ্য পত্রে) যেসব নিষেধ, সতর্কতা, স্বাস্থ্যের কোন বিশেষ কারণে ভ্যাকসিনের বিরূপ প্রভাবের সম্ভাবনা, এমনকী কোন বিশেষ পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ বর্জিত, এসব কথা বলা হলে তা ভ্যাকসিনের চাহিদা অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। এই কারণেই বিপণন বিশেষজ্ঞরা চাইছেন সেই কথাগুলোকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এফ ডি এ, ই এম এ এবং আমাদের দেশীয় সি ডি এস সি ও, এইসব ওষুধ নিয়ামক সংস্থাগুলোর পক্ষে, নিজেদেরই বেঁধে দেওয়া বিধি নিষেধ এক ঝটকায় উড়িয়ে দেওয়া অতটা সহজ নয়। তাই ঝেঁটে ফেলার এই বিশেষ দায়িত্বটা এখন বর্তেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ওপর। এর কারণ, বিপণনের মন্ত্র অনুযায়ী, পরিস্থিতি দ্রুত পরিবর্তন করতে হলে চাই এমন এক অনিয়ন্ত্রিত ক্ষমতা যার কোনো প্রশ্নকে উত্তর দেবার দায় নেই।
ঠিক এই ঘটনাটা ঘটেছে আমাদের দেশে, গর্ভাবস্থায় এবং এবং মায়েদের স্তন্যদান পর্যায়ে কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে। এই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াকে সরকারের সক্রিয়তা এবং দায়িত্বশীল পদক্ষেপ বলে বাহবা দিয়েছে মিডিয়ার একটি বড় অংশ। দীর্ঘমেয়াদী পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যাচাই না করে একটি ঝুঁকিপূর্ণ এবং বেপরোয়া পদক্ষেপের দায়িত্বহীনতার কথা আড়ালে চলে গেছে। দ্রুততার আড়ালে এইভাবে অনেক অস্বস্তিকর সত্যকে এড়িয়ে যাওয়া যায়।
শুধু দ্রুততা নয়, “এটা আসলে উন্মত্ত গতির দ্রুততা", মন্তব্যটা করেছিলেন একজন মেডিকেল এথিকস্-এর মার্কিন অধ্যাপক। কোভিড ভ্যাকসিনগুলো দ্রুত বাজারে আনতে গিয়ে যেভাবে প্রাণীদেহের ‘ট্রায়াল' বা যাচাই পর্ব প্রায় এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই প্রসঙ্গে তাঁর এই মন্তব্য ছাপা হয়েছিল স্ট্যাট এবং পরবর্তীকালে সাইন্টিফিক আমেরিকান পত্রিকায়। প্রতিবেদনটি নাম ছিল "প্রাণীদেহে কেমন কাজ করে সেটা না জেনেই গবেষকরা করোণা ভাইরাসের ভ্যাকসিন দ্রুত মানবদেহে পরীক্ষার জন্য এগোচ্ছেন"।[4] এই খবরের কয়েক মাস পরেই আমেরিকার ওষুধ নিয়ামক সংস্থা ‘এফ ডি এ’ ফাইজার এবং মডার্ন কোম্পানির ভ্যাকসিনকে আপৎকালীন ছাড়পত্র দেয়। ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি এসট্রা জেনেকার ভ্যাকসিনকে জরুরী ভিত্তিতে বাজারজাত করার সীমিত সময়ের লাইসেন্স দেয়। আমাদের দেশের নিয়ামক সংস্থা, ‘সি ডি এস সি ও’ ৩রা জানুয়ারি, ২০২১ কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাকসিনকে জরুরী ভিত্তিতে সীমিত আকারে ব্যবহারের ছাড়পত্র দেয়। সীমিত আকার বলতে ঠিক কী বোঝায়, তার কোনো ব্যাখ্যা তারা দেয়নি। কোম্পানি প্রচারিত তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, তারা বলেছিল, ভ্যাকসিন যাদের সবচেয়ে বেশি দরকার তাদের কথা। তা সত্ত্বেও ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হলো, এই ভ্যাকসিন প্রথমেই দেয়া হবে ‘কোভিড যোদ্ধা’ এবং ৬০ বছরের উর্ধ্বে মানুষদের। এদিকে মজার বিষয় হচ্ছে, ‘ই এম এ’ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে যে এসট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন-এর ট্রায়াল চালানো হয়েছে ১৮ থেকে ৫৫ বছর অবধি মানুষের মধ্যে।
যেসব মহিলারা বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তাঁদের তালিকার বাইরে রাখা হয়েছিল, কারণ তাঁদের নিয়ে ট্রায়ালের কোন তথ্য ছিল না।
শুরুর দিকে, সেরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া কোভিশিল্ড সম্পর্কে যে ফ্যাক্ট শীট বা তথ্য পত্র প্রকাশ করেছিল তাতে স্পষ্ট লেখা রয়েছে, “প্রাণী দেহের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ের প্রাথমিক স্তরে, গর্ভাবস্থায় বা গর্ভস্থ ভ্রুণের উপর কিংবা প্রসবকালীন পরিস্থিতিতে কোন পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ ক্ষতিকারক প্রভাব লক্ষ্য করা যায় নি। প্রাণী দেহের উপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা এখন পর্যন্ত নির্দিষ্টভাবে সম্পুর্ণ হয়নি। কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনগুলোর যেসব প্রভাব প্রাণীদেহে দেখা গেছে, সেগুলো মানব শরীরে কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সেটা এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।" 5 “মানুষের ক্ষেত্রে মাতৃদুগ্ধে কোভিশিল্ড নিঃসৃত হয় কিনা, সেটা জানা নেই।"[5]
সম্ভবত,জনসাধারণকে অবহিত করার জন্য ‘সি ডি এস সি ও’ এই ফ্যাক্ট শীটের একটি সংস্করণ তাদের ওয়েবসাইটে রেখেছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই সংস্করণটিতে কিছু তথ্য কাটছাঁট করে সংক্ষেপিত করা হয়েছে। গর্ভাবস্থায় এবং স্তন্যদানের সময় ভ্যাকসিন এর ব্যবহার সম্পর্কে বলা হয়েছে "এ ব্যাপারে আপনি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীর সঙ্গে পরামর্শ করুন।"[5A] কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী কার সঙ্গে পরামর্শ করে রায় দেবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর চাতুরীর সঙ্গে ধোঁয়াশায় রেখে দেওয়া হয়েছে। ‘কোভ্যাকসিন’ অবশ্য তাদের ফ্যাক্ট শীটে খুব স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে, "আপনি যদি গর্ভবতী হন বা বাচ্চাকে স্তন্যপান করান, তাহলে ভারত বায়োটেক নির্মিত কোভ্যাকসিন নেবেন না।"[6]
১৯ মে ২০২১, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক ঘোষণা করল,[7] স্তন্যদানকারী সমস্ত মহিলাই ভ্যাকসিন নিতে পারবেন। ভ্যাকসিন প্রশাসনের কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনায় যেসব সুপারিশ করেছে তারই ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এটাও বলা হয়েছে যে, "পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গা থেকে যেসব বৈজ্ঞানিক সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং অভিজ্ঞতা উঠে আসছে তারই ওপর ভিত্তি করে এই সুপারিশ করা হয়েছে।" যাই হোক আমরা ধরে নিতে পারি, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বিদগ্ধজনেরা এইসব তথ্য- প্রমাণের মর্মার্থ বুঝতে পেরেছেন। মাঝখান থেকে ‘সি ডি এস সি ও’-এর ভূমিকা অপ্রয়োজনীয় বলে প্রমাণিত হয়েছে। জনগণের বিশ্বাস আদায় করার সূক্ষ্ম প্রক্রিয়াটি এখন আর ততো কাজে লাগে না কারণ জনমতকে কীভাবে সুকৌশলে প্রভাবিত করে হইচই ফেলে দেওয়া যায়, সে-ব্যাপারে সংবাদমাধ্যম যথেষ্ট মুন্সিয়ানা অর্জন করে ফেলেছে। গত মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই, আঞ্চলিক থেকে জাতীয় স্তরের দৈনিকগুলো হঠাৎই এক সুরে বলতে শুরু করল যে প্লাসেন্টা বা গর্ভস্থ ফুল ভ্যাকসিন-এর মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এই ভয় অমূলক। এবং এই মর্মে তারা নিত্যনতুন নানা পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের কথা বলতে শুরু করে। তাদের এই হঠাৎ বোধোদয় এর কারণটা কয়েকদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেল।
সরকার যেমন জানে না ঠিক কতজন চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী কোভিডে মারা গেছেন বা কতজন পরিযায়ী শ্রমিক পথেই প্রাণ হারিয়েছেন, ঠিক তেমনিভাবেই কতজন গর্ভবতী মহিলা কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাদের মধ্যে কতজন গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন, এসব তথ্য সরকারের কাছে নেই।[8] কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে প্রচার করা হলো, গর্ভবতীদের জন্য কোভিড-১৯ কতখানি মারাত্মক হতে পারে। কিছু কিছু সংবাদপত্র, কয়েকজন তারকা চিকিৎসক যাদের মধ্যে আবার প্রসূতিবিদ্যার বিশারদরা রয়েছেন, তাদের ভাষ্য তুলে ধরে জানাল, ভ্যাকসিন দিলে পরে বহু গর্ভবতী মহিলার জীবন রক্ষা করা সম্ভব হবে। এই তত্ত্বের সমর্থন মেলে এমন কোনো বাস্তব পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা গবেষণার খবর কিন্তু এখনো পর্যন্ত জানা নেই।
৮ জুন, ২০২১, প্রেস বিজ্ঞপ্তির[9] মাধ্যমে আবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক, প্রশ্নোত্তর-এর আকারে জানিয়ে দিল, গর্ভবতী মহিলাদের ভ্যাকসিন দেওয়া উচিত নয়। নীতি আয়োগ-এর সদস্য, ডা ভি কে পাল তার বয়ানে বললেন, "ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে গুলো থেকে বিজ্ঞানীমহলের কাছে যে-তথ্য আছে তার ভিত্তিতে এক্ষুনি গর্ভবতী মহিলাদের ভ্যাকসিন দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে না। তবে কিছুদিনের মধ্যেই নতুন কোনো বৈজ্ঞানিক সূত্র পাওয়া গেলে সরকার ভেবে দেখবে।"
ডা রনদীপ গুলেরিয়া বেশ আত্মবিশ্বাসের সুরে বললেন, "নতুন তথ্য আসছে, আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ভ্যাকসিনের ছাড়পত্র দিতে পারব।"
নতুন তথ্য বা বৈজ্ঞানিক সূত্র এখনো অধরা, অথচ মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে 'না"-বাচক নির্দেশ উচ্চকিত "হ্যাঁ" তে রূপান্তরিত হয়ে গেল। আমরা জেনেছি, ‘সি ডি এস সি ও’ সীমিত আকারে এই ভ্যাকসিন এর ছাড়পত্র দিয়েছিল। সীমারেখাগুলো তোলার দায় তাদেরই ছিল। কিন্তু লক্ষণ রেখাগুলো মুছে দেবার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক তাদের হাত থেকে নিজেরাই নিয়ে নিল। তার মানে, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নিয়ামকের সিদ্ধান্ত অনায়াসেই প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে রূপান্তরিত হয়ে গেল। তাজ্জব ব্যাপার! সে যাই হোক, স্বাস্থ্যমন্ত্রকের বিদগ্ধজনেরা আবার কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক চর্চায় বসে ছিলেন। ২ জুলাই, ২০২১-এর প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে[10] তারা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিনের ছাড়পত্র দিয়ে তারা গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষমতায়নের পথ প্রশস্ত করলেন। এই বাগাড়ম্বরের পিছনে তাদের যে প্রগাঢ় বিজ্ঞান ভাবনা রয়েছে সেটা বোঝাতে গিয়ে বলেছেন, "ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ অন ইমুনাইজেশন, সংক্ষেপে ‘এন টি এ জি আই’, গর্ভাবস্থায় ভ্যাকসিন এর সুপারিশ করেছে। আরেকটি কেন্দ্রীয় বিশেষজ্ঞ দল, ‘নেগভ্যাক’ এই সুপারিশ কে সর্বসম্মতভাবে সমর্থন করেছে। তদুপরি, এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক একটি জাতীয় স্তরের আলাপ-আলোচনার আয়োজন করেছিল। যাদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে প্রসূতি বিভাগ বিশারদদের সংগঠন ‘এফ ও জি এস আই’, বিভিন্ন অসরকারি এবং কর্পোরেট পরিচালিত সংগঠন এবং প্রযুক্তিবিদরা ছিলেন।" সুতরাং আমরা ধরে নিতে পারি, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক এত নিবিড়ভাবে শলাপরামর্শ চালিয়েছেন যে, যেসব নতুন তথ্য প্রমাণের দাবি করা হচ্ছিল সেগুলো জনসমক্ষে না আনলেও চলবে।
এভাবেই ভ্যাকসিন সংক্রান্ত সংশয় দূর করার বিপণনবাদী সমাধানের পথে, একটি দারুণ তামাশা অনুষ্ঠিত হলো। তবু বারংবার বলে আসা বিশ্বাসযোগ্য নতুন বৈজ্ঞানিক সূত্রের প্রশ্নগুলো পিছু নেবেই। তাই প্রত্যাশিতভাবেই মিডিয়ার একটি অংশ এই শূন্যস্থান ভরাট করতে নেমে পরল। গত কয়েক মাসে, বহু ব্যবহারে জীর্ণ হয়ে যাওয়া একই মন্ত্র তারা উচ্চারণ করতে লাগলো "বেনিফিটস ফার আউটওয়েজ দ্য রিস্কস"[11], অর্থাৎ বিপদের যৎসামান্য শঙ্কার চেয়ে উপকারিতার সম্ভাবনা অনেক বেশি ! একই সঙ্গে সারা পৃথিবীর নানা ধরনের স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা পত্র থেকে নানা খবরাখবর তুলে এনে তারা প্রমাণ করতে সচেষ্ট হল যে, গর্ভাবস্থায় কোভিড ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ নিরাপদ।
বহুচর্চিত এইরকম একটি গবেষণাপত্র[12] প্রকাশিত হয়েছিল আমেরিকান জার্নাল অফ অবস্টেরিকস্ এন্ড গাইনোকোলজি পত্রিকায়। প্রকাশের সময় ২০২১, নির্দিষ্টভাবে কোন মাসের উল্লেখ নেই। এই পরীক্ষায় মোট অংশগ্রহণকারী ছিলেন ১৩১ জন, তাদের মধ্যে ৮৪ জন ভ্যাক্সিন প্রাপ্ত গর্ভবতী এবং ১৬ জন গর্ভবতী নয়, এরকম ভ্যাকসিন প্রাপ্ত মহিলা। এই সমীক্ষা থেকে তারা সিদ্ধান্তে আসেন যে, ‘এম আর এন এ’ ভ্যাকসিন গর্ভবতীদের মধ্যে দারুণ অনাক্রম্যতা সৃষ্টি করেছে এবং যারা গর্ভবতী নন তাদের সঙ্গে এই অনাক্রম্যতার কোন ফারাক নেই। সমীক্ষাটিকে এমনভাবে সাজানো হয়েছিল যাতে করে দেখানো যাবে, এই দুই ক্ষেত্রেই ভ্যাক্সিন গুলির কার্যকারিতা সমান। ‘এম আর এন এ’ ভ্যাকসিনগুলির কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে কিনা, বিশেষত গর্ভাবস্থায় স্পাইক প্রোটিনগুলির কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে কিনা এবং যেসব রাসায়নিক উপাদান দিয়ে ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, গর্ভস্থ ভ্রূণের ওপর সেগুলোর কোনো ক্ষতিকর প্রভাব আছে কিনা, এইসব দেখার কোনো চেষ্টাই করা হয়নি এই সমীক্ষায়।
আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল-এর একটি পুরানো রিপোর্ট[13] অনেক জায়গায় উল্লেখ করা হচ্ছে। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ২ নভেম্বর, ২০২০। এই রিপোর্টে দেখানো হয়েছে যে, যেসব গর্ভবতী মহিলাদের কোভিড-১৯ হয়েছে তাদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এটা ছিল সরকার পরিচালিত তথ্যকেন্দ্র থেকে নেওয়া তথ্যপঞ্জি ঘেটে একটি পর্যবেক্ষণমূলক সমীক্ষা। ভ্যাকসিন নিলে ভবিষ্যতে গর্ভবতীদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে না কমে, সেই পর্যবেক্ষণ এই সমীক্ষায় করা হয়নি।
আরেকটি যে সমীক্ষার রিপোর্ট বারবার তুলে ধরা হচ্ছে, সেটা প্রকাশ করেছে জার্নাল অফ আমেরিকান মেডিক্যাল এসোসিয়েশন ( শিশু বিভাগ)। এটাও একটা পুরানো সমীক্ষার রিপোর্ট।[14] গতবছর (২০২০), মার্চ মাসে সম্পন্ন হওয়া এই সমীক্ষায় যে ‘কোহর্ট’গুলি নেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে, ৭০৬ যেমন ছিলেন গর্ভবতী, ১৪২৪ ছিলেন গর্ভবতী নয়। সমীক্ষাটির অর্থসাহায্য এসেছিল, আ্যসট্রা জেনেকা ভ্যাকসিন প্রস্তুতির ধাত্রীভূমি, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ রিসার্চ রেসপন্স ফান্ড থেকে। প্রত্যাশিতভাবেই, সমীক্ষকরা সেটাই বলেছেন যা ভ্যাকসিনের বিপণন কুশলীরা শুনতে পছন্দ করেন।
যে-সমীক্ষার রিপোর্ট[15] মিডিয়ার কাছে সবচেয়ে অস্বস্তিকর, সেটা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এ প্রকাশিত হয়েছিল ২১ এপ্রিল, ২০২১। শিরোনাম ছিল "গর্ভবতীদের ক্ষেত্রে ‘এম আর এন এ’ কোভিড ভ্যাকসিন কতখানি নিরাপদ তার প্রাথমিক মূল্যায়ন"। সমীক্ষার লেখকরা নিজেরাই নিজেদের তথ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন তাঁরা যে সিদ্ধান্তে এসেছেন, বাস্তব ফলাফল তার বিপরীত। ভ্যাক্সিনটি যথেষ্ট নিরাপদ, এই ব্যাপারে তারা অনেক লম্বা চওড়া কথা বললেও, তাদের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ দেখাচ্ছে, "সমীক্ষায় মোট অংশগ্রহণকারী ছিলেন ৩৯৫৮ জন, যাদের মধ্যে ৮২৭ ছিলেন গর্ভবতী এবং ভ্যাকসিন প্রাপ্ত, এদের মধ্যে ১১৫ জন (১৩.৯%)-এর গর্ভস্থ ভ্রূণ নষ্ট হয়, ৯.৪%-এর নির্ধারিত সময়ের আগেই বাচ্চা জন্মায়, ৩.২%-এর স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজনের বাচ্চা জন্মায়। এই সমীক্ষার রিপোর্টে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে যে, আমেরিকার ভ্যাকসিন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার নজরদারি ব্যবস্থা, ‘ভি ইএ আর এস’ তথ্য বলছে, মোট যে-২২১ টি ক্ষেত্রে গর্ভাবস্থায় গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তারমধ্যে অনায়াস (‘স্পন্টেনিয়াস’) গর্ভপাতের ঘটনাই সবচেয়ে বেশি (৪৬টি)।
২২মে, ২০২১ পর্যন্ত পাওয়া ‘ভি এ ই আর এস’-এর তথ্য[16] বলছে, গর্ভাবস্থায় ২৮৩টি তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার লক্ষণ হিসেবে দেখা দিয়েছে, হয় অনায়াস গর্ভপাত অথবা গর্ভস্থ ভ্রূণের মৃত্যু। এরমধ্যে ৯.৫৪% ঘটনা ঘটেছে জনসন নির্মিত ভ্যাকসিনে, ৩৬.৭৫% মডার্নার , ৫৩.৭১% ফাইজার-এর নির্মিত ভ্যাকসিন এর ক্ষেত্রে। এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলোর প্রায় ৩০ শতাংশ ঘটেছে ভ্যাকসিন নেবার ০-২ দিনের মধ্যে। বাস্তব চিত্রটা অনেক বেশি শংকাজনক, কারণ এই নজরদারি ব্যবস্থায় সমস্ত পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মাত্র ১% নথিভূক্ত হয়।
ফাইজার-এর গোপন নথি যা জাপানি ভাষা থেকে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে, সেটা দেখে অনেক গবেষক অভিযোগ করেছেন যে, প্রাণীদেহে সমীক্ষা চালানোর সময় প্রমাণিত হয়েছে, স্পাইক প্রোটিন রক্তের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে জমা হতে থাকে। এই আশঙ্কা সন্দেহাতীতভাবে দূর হওয়া দরকার।
কোভিশীলড্ ভ্যাকসিনের যে উপাদানগুলি উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ‘এল-হিস্টিডিন হাইড্রোক্লোরাইড মনোহাইড্রেট’ নামে একটি ন্যানোপার্টিকেল বা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা। কিছু গবেষণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই ধরনের ন্যানোপার্টিকেল যদি নিউক্লিক এসিড-এর সঙ্গে জোট বেঁধে থাকে তবে সেটা যে কোষে চালান করা হচ্ছে সেই কোষের ডিএনএ-র মধ্যে প্রবেশ করতে পারে। এটাকে জেনেটিক প্রযুক্তির ভাষায় বলা হয় ‘ট্রানস্ফেকশন’। জিন ঘটিত বিরূপ প্রতিক্রিয়া, এবং ভ্রূণের গঠনে বিকৃতির সম্ভাবনা বাতিল করতে হলে এই ধরনের যৌগ ব্যবহারের বিপদ সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন প্রয়োজন। এখনো পর্যন্ত এই ধরনের কোনো সমীক্ষার রিপোর্ট আছে বলে জানা নেই।
পরিসংখ্যান কখনো কখনো ভীতির উদ্রেক করে। কখনো আবার সেগুলো সোচ্চারে সতর্কবাণী পৌঁছে দেয়। এক্ষেত্রে ‘ভি এ আর এস’-এর তথ্য পরিসংখ্যান এবং নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন-এর পর্যবেক্ষণ উচ্চকণ্ঠে সমর্থন করছে, আমেরিকার বহু আলোচিত মেডিসিনের অধ্যাপক ডক্টর পিটার ম্যাককুলা-র সাবধান বাণী। তিনি বলেছেন, "গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাসের মধ্যে এই ভ্যাকসিনগুলো ভ্রুণ নষ্ট করছে, এবং এটা খুবই বীভৎস এবং শিউরে ওঠার মতো ঘটনা। কোনো মহিলারই গর্ভাবস্থায় এই কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত নয়।"
অনেক লব্ধ প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসক, যাদের মধ্যে অনেক সম্মাননীয় প্রসূতিবিদ্যার বিশারদরা রয়েছেন, পেশাগত ক্ষেত্রে যাদের অতীত অনেকক্ষেত্রেই উজ্জ্বল, সেইসব স্বনামধন্য চিকিৎসকরা গর্ভাবস্থায় কোভিড ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার সুপারিশ বিনা প্রশ্নে মেনে নিচ্ছেন। যে-প্রাসঙ্গিক বিতর্কগুলো তোলা উচিত ছিল তা তাঁরা সযত্নে এড়িয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে সেটা হবে এক ঘোরতর দুর্দিন যখন চিকিৎসকরা তাদের পেশাগত নৈতিকতার প্রথম আচরণবিধি, অর্থাৎ 'প্রাইমাম নন নোসেরে' ( প্রথমত, কোনো ক্ষতি করো না) এই সত্যটি ভুলে যাবেন। এই ভুলে যাওয়ার খেসারত হিসেবে চিকিৎসকরা এমন একটি অনুশীলনের পক্ষে দাঁড়াবেন, যা শুধু অনৈতিক নয় ভবিষ্যতের কাছে এক অমার্জনীয় কীর্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
তথ্যসূত্র:
[1]. Infection fatality rate of COVID 19 inferred fromsero-prevalence data, John P A Ioannidis, Bulletin of WHO, 2020
https://www.who.int › BLT.20.265892.pdf
Note: Best estimate of prof. Ioannidis is global IFR 0.15% and for Asia/Africa 0.05 to 0.1%
COVID- 19: An overview of systematic evaluations. Eur J Clin Invest. 2021;51:e13554
European Journal of Clinical Investigation, https://doi.org/10.1111/eci.13554
[1A]. Sucharit Bhakdi, Corona False Alarm ? Facts & Figures , pages 8,9,70
[2]. Worse than the disease? Reviewing some possible Unintended Consequences of the mRNA vaccines against COVID 19, Stephanie Seneff & Greg Nigh
[3] Tactics to overcome COVID-19 vaccine hesitancy, 28 June, 2021, WEF
https://www.weforum.org/agenda/2021/06/3-tactics-to-overcome-covid-19-vaccine-hesitancy/
[4] https://www.statnews.com/2020/03/11/researchers-rush-to-start-moderna-coronavirus-vaccine-trial-without-usual-animal-testing/
[5] COVISHIELD FAQs - Serum Institute Of India.https://www.seruminstitute.com › health_faq_covishield
[5A] https://cdsco.gov.in/opencms/export/sites/CDSCO_WEB/en/Factsheetof-ChAdSerum.pdf
[6] Covaxin Fact sheet
[7] New Recommendations of NEGVAC accepted by Union Ministry of Health,
https://pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1719925
[8] Why pregnant women in India still are not eligible for COVID-19vaccines, National Geographic, 23 June 2021
https://www.nationalgeographic.com/science/article/why-pregnant-women-in-india-still-are-not-eligible-for-covid-19-vaccines
[9] Can pregnant women take Covid 19 vaccine? FAQ
https://pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1725244
[10] Pregnant Women now eligible for COVID-19Vaccination, MoHFW
https://pib.gov.in/PressReleasePage.aspx?PRID=1732312
[11] Covid-19 vaccine and pregnancy: Expectant mothers now eligible for the jab, Indian Express , July2, 2021
https://indianexpress.com/article/lifestyle/health/covid-vaccine-pregnant-women-guidelines-7377125/
[12] Coronavirus disease 2019 vaccine response in pregnant
and lactating women: a cohort study, MONTH 2021 American Journal of Obstetrics & Gynecology
https://www.ajog.org › article › fulltext
[13] Update: Characteristics of Symptomatic Women of Reproductive Age with Laboratory-Confirmed SARS-CoV-2 Infection by Pregnancy Status — United States, January 22–October 3, 2020, MMWR / November 6, 2020 / Vol. 69 / No. 44
https://www.cdc.gov › 69 › pdfs › mm6944e3-H
[14] Maternal and Neonatal Morbidity and Mortality Among PregnantWomen With and Without COVID-19 Infection The INTERCOVID Multinational Cohort Study, JAMA Pediatr. doi:10.1001/jamapediatrics.2021.1050
[15] Preliminary Findings of mRNA Covid-19 Vaccine Safety in Pregnant Persons, April21,2021, NEJM
https://www.nejm.org/doi/full/10.1056/NEJMoa2104983
[16] VAERS Report Regarding Spontaneous Abortion & Fetal Death, https://needtoknow.news/2021/05/covid-vaccine-animal-trials-reveal-threat-to-life-in-the-womb/