আমাদের রোজকার খাদ্যাভ্যাসের এক অপরিহার্য উপকরণ নুন বা লবণ। লবণকে ঘিরে নানান মিথ এবং বাস্তব আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন ডাঃ ভাস্কর চক্রবর্তী।
রোগী এলেন ডাক্তারের চেম্বারে। মাথা ঘুরছে, ঘাড়ে মাথায় টিপ টিপ ব্যথা করছে মাঝে মাঝেই, বেশ কয়েকমাস ধরে। হাটতে গিয়ে মাঝে মাঝে টাল খেয়ে যাচ্ছেন। মধ্যবয়সী। ধূমপায়ী। বিগত পঁচিশ বছর ধরেই ধূমপায়ী। ডাক্তারবাবু রোগের ইতিহাস লিখলেন, রোগীর জীবনের কিছু ইতিহাস লিখলেন, ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা করলেন। দেখা গেল রক্তচাপ বেশ বেশী। ডাক্তারবাবু কিছু পরীক্ষা করাতে লিখলেন, কিছু ওষুধ লিখে দিলেন, এক সপ্তাহ পরে আবার ফিরে আসার কথা বলে দিলেন। আর বললেন ধূমপান বন্ধ করতে, নুন খাওয়া কমাতে। মানে খাওয়ার পাতে নুন খাওয়া একদম বন্ধ করতে বললেন।
ডাক্তারের পরামর্শে রোগী খুশী; পরিবার খুশী; যে স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে রোগী এর পরে রক্তচাপ পরীক্ষা করাবেন, তিনি খুশী; যে পাঠকেরা এতদূর পড়লেন, তাঁরাও খুশী। যুক্তিসঙ্গত চিকিৎসা হয়েছে। ওষুধ দেওয়া হয়েছে, কিছু পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে, আর জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমেও চিকিৎসা করার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু আমি খুশী হতে পারলাম কই ? কেন পারলাম না? এই ক্ষেত্রে খুশী হওয়া বা না হওয়া নিয়ে কিছু বলার আগে একটু ভণিতা করে নেওয়া দরকার। একটু
...দেশের এক বড় সংখ্যক জনগণ আয়ুষ্মান ভারত বা স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে ইতিমধ্যেই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এজাতীয় স্বাস্থ্যবীমা প্রাথমিক ও আউডডোর পরিষেবায় কার্যকরী নয়। প্রসঙ্গত, সারা ভারতে চিকিৎসা পরিষেবার পিছনে জনতা যা খরচ করেন, তার প্রায় ৬৬ শতাংশ ব্যয় হয় আউটডোর চিকিৎসা ও ওষুধপত্র কিনতে,যা এরূপ চটকদারী স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্পের আওতার বাইরে। ফলস্বরূপ সামান্য কিছু জটিল রোগের চিকিৎসায় কেবলমাত্র স্বাস্থ্যবীমা প্রযোজ্য। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এড়িয়ে যেতে, কারণ তাতে কর্মক্ষেত্রে দৈনন্দিন মজুরির রাস্তা বন্ধ হয়। এদিকে বছরের শেষে প্রিমিয়ামের প্রায় পুরো টাকাই করদাতাদের পকেট থেকে যায় বীমা কোম্পানিগুলির পকেটে। এই বীমা ভিত্তিক স্বাস্থ্যকাঠামো স্বাস্থ্যের অধিকারের নাম করে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র বা হেলথ আই ডির মধ্যে বেঁধে ফেলে মানুষকে একধরনের স্বাস্থ্য নজরদারীর দিকে ঠেলে দেওয়ার রাস্তা পরিস্কার করছে। মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকারের স্লোগান 'সকলের জন্য স্বাস্থ্য' আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বীমা কোম্পানির বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন। রাজ্য সরকারের
...মহামারীর আতঙ্ক যেন শেষ হয়েও হচ্ছে না। বার্ড ফ্লু, মাঙ্কিপক্স, এমনকি করোনাও মাঝেমধ্যেই চোখ রাঙাচ্ছে। ডেঙ্গুর মতো চেনা রোগেও বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। দেশের আইনগত কাঠামোতে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রশ্নে নানা রদবদল দেখা যাচ্ছে। করোনা মাহামারী আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের দেশে জনস্বাস্থ্যের বেহাল দশা। ইলেক্টরাল বন্ডের তথ্য বলছে যে শাসক দল বিভিন্ন ফার্মা কোম্পানিদের থেকে বিস্তর টাকা পয়সা ঘুষ নিয়ে অপ্রয়োজনীয়, অপরীক্ষিত বা নিম্ন মানের ওষুধ এবং প্রতিষেধক বাজারে আনার ছাড়পত্র দিয়েছে। আমাদের সামনে উন্মোচিত হচ্ছে স্বাস্থ্য দুর্নীতির আরো নানান দিক। বিগত চার বছরে জনস্বাস্থ্যের এই উলট পুরান নিয়ে আলোচনা করেছেন পৌলমী।
বিশ্বের চার ভাগ ক্ষুধার্ত মানুষের এক ভাগ বাস করে ভারতে। ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক সারণীতে ভারতের স্থান ১২৫টি দেশের মধ্যে ১০৭ থেকে নেমে ১১১নম্বরে পৌঁছেছে এবং দেখা যাচ্ছে শিশুমৃত্যু, অপুষ্টি আর অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে ভারতের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আবার পৃথিবীর যে পঞ্চাশটি দেশে স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দ সর্বনিম্ন ভারতবর্ষ সেই তালিকাতেও রয়েছে। অথচ আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ম্ভর। পৃথিবীর বহু দেশের খাদ্য সুরক্ষা নির্ভর করে ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া শস্যের ওপর। এবিষয়ে লিখেছেন শ্রী সন্দীপন মিত্র।
বিশ্বজুড়ে এবং আমাদের দেশে যথেচ্ছ স্টেরয়েড ব্যবহার করার মতো করোনার অতিচিকিৎসা প্রোটোকল বা অপরীক্ষিত টিকার গণপ্রয়োগ এক অভূতপূর্ব জনস্বাস্থ্য সঙ্কট ডেকে এনেছে। বিশেষত স্কুলপড়ুয়া, অল্পবয়সী এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ দ্রুত মাত্রাছাড়া হয়ে চলেছে। একটি জনস্বাস্থ্য সংগঠন হিসেবে মানুষের সামনে যথাযোগ্য প্রমাণ সহযোগে সেকথা তুলে ধরার দায় আমাদের ওপর বর্তায়। সেই ভাবনা থেকে আমরা সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল এবং বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে একটি সমীক্ষা চালাই।
আমরা দেখেছি ২০১৯ থেকে ২০২২ সময়সীমায় বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ডায়াবেটিস,উচ্চরক্তচাপ,হৃদরোগ,রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা এবং স্ট্রোক যথাক্রমেপ্রায়৪৫৫%,৪৪৫%,৩৪৩%,৪৯১%এবং৮১১%বৃদ্ধি পেয়েছে।এখানে সংখ্যাগুলি নিজেরাই কথা বলছে। মনে রাখতে হবে যে এই দুটি হাসপাতালে ইমারজেন্সি পরিষেবা না থাকার কারণে রক্তক্ষরণ, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের রোগীরা এখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসেন না। তাই আমরা মনে করছি যে দেশের জনতার মধ্যে এইসব রোগের প্রকোপ আরও বেশি সংকটজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেলুড়ের শ্রমজীবী হাসপাতালে ইমারজেন্সি পরিষেবা না থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করানো রোগীর সংখ্যা প্রতি বছরে ৫০০০এর আশেপাশে থাকে। করোনাকালেও এর খুব একটা হেরফের হয়নি। এই হাসপাতালের সাথে যুক্ত দক্ষ এবং অকুতোভয় ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বাস্থ্য আন্দোলনের সাথে যুক্ত অক্লান্ত কর্মীদের জন্য তা সম্ভব হয়েছিল।
...বিশ্বজুড়ে এবং আমাদের দেশে যথেচ্ছ স্টেরয়েড ব্যবহার করার মতো করোনার অতিচিকিৎসা প্রোটোকল বা অপরীক্ষিত টিকার গণপ্রয়োগ এক অভূতপূর্ব জনস্বাস্থ্য সঙ্কট ডেকে এনেছে। বিশেষত স্কুলপড়ুয়া, অল্পবয়সী এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ দ্রুত মাত্রাছাড়া হয়ে চলেছে। একটি জনস্বাস্থ্য সংগঠন হিসেবে মানুষের সামনে যথাযোগ্য প্রমাণ সহযোগে সেকথা তুলে ধরার দায় আমাদের ওপর বর্তায়। সেই ভাবনা থেকে আমরা সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল এবং বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে একটি সমীক্ষা চালাই।
২০১৯ থেকে ২০২১ সময়সীমায় সরবেড়িয়ার সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ এবং হৃদরোগ যথাক্রমে প্রায় ১৩৩%, ৩৩% এবং ১০০% বৃদ্ধি পেয়েছে। সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালে মোট রোগীর পরিমাণ যথেষ্ট কম এবং হাসপাতালটিতে কোন ইমারজেন্সি পরিষেবা নেই। তাই এই হাসপাতাল থেকে এই সব রোগের মতো সমস্যার তথ্য এলাকার প্রামাণ্য চিত্র হিসেবে ধরে নেওয়া মুশকিল ছিল। সেই ভাবনা থেকে আমরা পরবর্তী সমীক্ষা চালাই বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে।
আমাদের দেশে চিকিৎসা বরাবরই "পণ্য"। তবে ১৯৮৬ সাল থেকে সরকার "ক্রেতা সুরক্ষা আইন" করে চিকিৎসা পরিষেবাকে আইনী ভাবে "পণ্য" হিসেবে জনগণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে । ফলে চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্র চিকিৎসা বাজারে পরিণত হয়েছে । দেশের চিকিৎসা বাজার মূলত বেসরকারী । তবে সরকারী ক্ষেত্র থেকে চিকিৎসা বিনামূল্যের বলা হলেও রোগী ও জনসাধারণকে বিভিন্ন ভাবে গাঁটের কড়ি খরচ করতে হয় । এ ধরনের একটি ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রেসক্রিপশন প্রদান করেন ।
কোভিড পরিস্থিতি এবং তার সঙ্গে সঙ্গে লকডাউন থেকে শুরু করে এক সার্বিক অচলাবস্থা এল এমন একটা সময় যখন ২০০৮-০৯ সালের গ্রেট ডিপ্রেসনের থেকেও খারাপ অবস্থায় চলে গিয়েছিল অর্থনীতি। অর্থনৈতিক সংকোচন ছিল মাত্রাছাড়া। আসলে ২০০৮ সালের মহামন্দার পর থেকেই বিশ্ব অর্থনীতি একটা ভয়ঙ্কর স্থবিরতার মধ্যে চলে গিয়েছিল। পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে এই সঙ্কট ঘুরে ঘুরে আসে আর তখন কোরামিন দিতে শোষণের নতুন নতুন পন্থা বার করে তারা। কোভিড পূর্ববর্তী সময় থেকে মুনাফার এই সঙ্কট থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে কোভিড ন্যারেটিভও একটি মরিয়া প্রচেটা
কোভিড পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ যে ছবি আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন, সেটা যদি তাঁরা নিজেরাও বিশ্বাস করতেন, তাহলে এই বিষয়টার প্রতি আরও অধিক যত্ন নিতেন, নেওয়া উচিৎ ছিল। বিশ্ব, দেশ, রাজ্য জুড়ে যে দীর্ঘ অচলাবস্থা তৈরি হলো, তার ফলে মানুষের জীবনে যে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে তার সম্পর্কে শুরুতে কোন প্রস্তুতি না থাকতে পারে, কিন্তু বিপর্যয়ের মধ্যে বেশ কিছুটা সময় চলে যাওয়ার পরে প্রস্তুত হওয়ার চেষ্টাটাও যখন চোখে পড়ে না, তখন হয় ভয়াবহতার ওই চিত্রটা শুধুই ভয় দেখানোর জন্য কিনা, এ প্রশ্ন তৈরি হওয়া স্বাভাবিক।
রাষ্ট্র কোভিড ন্যারেটিভ গিলিয়ে দিয়ে যে আতঙ্কের পরিস্থিতি তৈরি করতে পেরেছে এবং লকডাউন চাপিয়ে দিয়েছে বিষয়টা শুধু এমনই নয়, জনগণের একাংশের সম্মতিও আদায় করে নিয়েছে এক্ষেত্রে। জনস্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে যে কোনও গণতান্ত্রিক প্রতিবাদ এবং আন্দোলনকে দমন করতে ব্যবহার করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা আইন। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির তোয়াক্কা না করে কৃষি বিল, শ্রম কোড সহ একের পর এক কর্পোরেট স্বার্থ চরিতার্থকারী আইন পাশ করে নিয়েছে ঘুরপথে, এমনকি সংসদকেও এড়িয়ে। জনগণের মধ্যে আলোচনা তো দূরস্থান। এসব খুব সহজেই সম্ভব হয়েছে জনস্বাস্থ্যের অজুহাত দেখিয়ে। মাস্ক, বাধ্যতামূলক ভ্যাকসিন, সামাজিক দূরত্ব, লকডাউন সহ একের পর এক বিধি চাপিয়ে গেছে সাধারণ মানুষের ওপর, যা একদিকে কেড়ে নিয়েছে মানুষের জীবিকা, স্বাধীনতা এবং ন্যূনতম মৌলিক অধিকার। বহু মানুষ খেয়ে পরে টিকে থাকার আর্থিক সংস্থানটুকুও হারিয়েছেন এই লকডাউনে।