ভূমিকা

জনস্বাস্থ্য মোর্চা (People’s Alliance for Public Health), ২০শে ফেব্রুয়ারি ২০২২-এ কলকাতায় অনুষ্ঠিত জনস্বাস্থ্য সম্মেলনের মাধ্যমে Global Rational Alliance for Public Health-এর মধ্যে থেকে বেরিয়ে এসে পৃথক সংগঠন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। GRAPH-এর মধ্যে এক বিতর্ক চলাকালীন (যা জনস্বাস্থ্য মোর্চা বা PAPH-এর জন্ম দেয়), এই ‘পরিকল্পিত মহামারী’ বা ধোঁকামারীর প্রকৃত রূপ জনসমক্ষে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টা সম্পর্কে একটি প্রশ্ন উঠেছিল। এই প্রশ্নটা PAPH-এর প্রথম সম্মেলনেও আলোচিত হয়। প্রশ্নটা ছিল এই – আমরা কি নিজেরা কোনো গবেষণামূলক কাজ করতে পারি যার মাধ্যমে আমরা তৎকালীন কোভিড চিকিৎসার প্রোটোকলকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের কষ্টিপাথরে যাচাই করে নিতে পারবো?

কোভিড মহামারীর আখ্যান যে পরিকল্পিত ছিল, বিশ্বকে স্থবির করে দেওয়ার জন্য কর্পোরেট জগতের একটি চক্রান্ত ছিল এবং এর মাধ্যমে যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় কিছু পরিবর্তন চালু করতে বাধ্য করা হয়েছিল, তা এই ‘পরিকল্পিত মহামারী’-র পূর্ববর্তী বেশ কিছু ঘটনাবলি প্রকাশের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়ে গেছে1। এটা এমন কিছু বক্তব্যের দ্বারাও প্রমাণিত হয়েছে, যাতে দেখা যাচ্ছে যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের মূল ধারনাগুলোই ওলোটপালোট করে দেওয়া হয়েছে2। যাই হোক, একটি ক্লিনিকাল গবেষণার দ্বারা আমাদের কথাগুলো প্রমাণ করা, এ ছিল আমাদের ক্ষমতার বাইরে। আমাদের কাছে ক্লিনিকাল গবেষণার জন্য প্রশিক্ষিত কর্মী ছিল না, এত বিশাল কাজ করার প্রয়োজনীয় রসদও ছিল না। না আমরা জানতাম সেইসব রোগীদের সন্ধান যাদের বিষয়ে গবেষণা করা যেতে পারে। তবু, আমরা হাল ছাড়িনি।

কিছু চিন্তাভাবনার করে, আমরা অন্য একটা উপায় বের করি। কোভিডের বছরগুলিতে কিছু হাসপাতালের মেডিকেল রেকর্ড অধ্যয়ন করা, রোগের ধরণগুলি অধ্যয়ন করা, সেই ধরণে কিছু পরিবর্তন হয়েছে কিনা এবং সেই পরিবর্তনগুলো আমাদের ধারনার সঙ্গে মিলছে কি না। আমরা আমাদের কিছু বন্ধুদের কাছে আবেদন করি যারা কিছু কিছু NGO পরিচালিত হাসপাতাল বা গন উদ্যোগের হাসপাতালের সাথে যুক্ত। কারণ আমরা ভালো করেই জানতাম যে সরকারী এবং বেসরকারী কর্পোরেট হাসপাতালগুলো চালু কোভিড ভাষ্যেরই প্রচারক এবং তাঁরা আমাদের তাদের মেডিকেল রেকর্ড দেখার অনুমতি দেবে না। যাই হোক, এমনকি বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে থেকেও মাত্র দুটি হাসপাতাল আমাদের আবেদনে সাড়া দেয়। অন্যরা উত্তর হিসাবে নীরবতাই শ্রেয় মনে করে।

 

সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালে আমরা প্রথম একটা সংক্ষিপ্ত গবেষণা করি।

তারপর বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে আমরা আমাদের বর্তমান গবেষণার কাজটা করেছি।

বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালের সাথে যুক্ত সকল ব্যক্তিকে আমাদের তরফ থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই, বিশেষ করে শ্রীবাসুদেব ঘটক, শ্রীফণিগোপাল ভট্টাচার্য এবং শ্রীউত্তম দাসকে, চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিগুলি পড়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য এবং আমাদের কাজকে মসৃণ করতে সাহায্য করার জন্য।

অধ্যয়ন পদ্ধতি

আমরা ২০১৯, ২০২০, ২০২১ এবং ২০২২ সালের বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া সমস্ত রোগীদের ভর্তি থাকাকালীন রেকর্ডের ভিত্তিতে রোগের প্যাটার্ণের অধ্যয়ন করেছি। তাদের মধ্যে আমরা শুধুমাত্র সেইসব রোগীদের তথ্য রেকর্ড করেছি যাদের নিম্নলিখিত রোগগুলো ছিল – ডায়াবিটিস (DM), উচ্চ রক্তচাপ (Htn), হৃদরোগ (HD), রক্তক্ষরণ জনিত রোগ (BD) এবং স্ট্রোক (CVA)। আমরা ওই চার বছরে এই রোগগুলির প্যাটার্ন অধ্যয়ন করেছি।

আমরা এই রোগীদের প্রত্যেকের নাম, বয়স, লিঙ্গ, বসবাসের এলাকা, রোগ এবং ভর্তির তারিখগুলি লিপিবদ্ধ করেছি ডিসচার্জ সার্টিফিকেট কিংবা প্রেসক্রিপশন থেকে (ডে কেয়ার পেশেন্টদের ক্ষেত্রে)। আমরা বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালের রেজিস্টার থেকে প্রত্যেক মাসে সব মিলিয়ে কত রোগী ভর্তি হয়েছে সেই তথ্য নিয়েছি।

এই অধ্যয়নের জন্য মেডিকেল রেকর্ডগুলো বালিতে অবস্থিত বেলুড় শ্রমজীবী পাঠশালায় আনা হয়েছিল। মেডিকেল রেকর্ডগুলো পড়ার জন্য আমরা গত এক বছর ধরে (মে ২০২২ থেকে জুন ২০২৩) ২০টি রবিবারে বেলুড় শ্রমজীবী পাঠশালা এবং মাঝে মাঝে বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে গিয়েছি।

আমরা সরাসরি এক্সেল শিটে তথ্য লিপিবদ্ধ করেছি এবং শেষে তথ্য বিশ্লেষণ করেছি।

এই অধ্যয়ন করেছে যারা -

শ্রী গৌরব মুখুটী

শ্রীমতী পৌলমী মুখার্জী

শ্রী অমর্ত্য গোস্বামী

ডাঃ ভাস্কর চক্রবর্তী

 

সময় যা লেগেছে -

৮ই মে, ২০২২ থেকে ২৮শে মে, ২০২৩ পর্যন্ত ৩৭টি রবিবার সকাল ১১:৩০ থেকে বিকাল ৫:৩০ পর্যন্ত (আনুমানিক)।

মোট খরচ (যাতায়াত বাবদ)

৯২৫০/- টাকা (আনুমানিক)

হাসপাতাল পরিচিতি -

বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতাল, বেলুড় শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতির একটি ইউনিট, পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার শ্রমিক শ্রেণী (শিল্প ও কৃষি উভয়ই), ক্ষুদ্র কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী এবং পাতি বুর্জোয়া মধ্যবিত্তদের (প্রধানত বালি, বেলুড় এবং লিলুয়া এলাকা) পরিষেবা দিয়ে চলেছে। হাওড়া ছাড়াও এটি হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা এবং কলকাতা থেকে কিছু রোগী পেয়ে থাকে (অন্যান্য জেলা থেকে নগণ্য)। এই হাসপাতালের রোগের প্রবণতা হাওড়ার বালি, বেলুড় এবং লিলুয়া এলাকার শ্রমিক শ্রেণী এবং মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রচলিত রোগের প্রবণতার সাথে মিলে যেতে পারে।

রোগী ভর্তি হওয়ার প্রবণতা

ওই চার বছরে হাসপাতালে ভর্তির প্রবণতা সারণী ১ এবং চিত্র ১-এ দেওয়া হয়েছে।

সারণী ১

Table1

চিত্র ১

figure 1

 

আলোচনা ১

সারণী ১ এবং চিত্র ১ থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, অনেক কর্পোরেট হাসপাতালে যখন ২০২০ সালের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ত্রৈমাসিকে কোভিডের ভয়ে রোগী ভর্তি কমে গিয়েছিল, তখন বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে উল্লেখযোগ্য ভর্তি হ্রাস পেয়েছিল শুধুমাত্র ২০২০-র এপ্রিল মাসে। তারপর থেকে আবার ভর্তির সংখ্যা পূর্ববর্তী প্রবণতা অনুযায়ীই চলছিল।

২০২০ সালের মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল। শ্রমিক শ্রেনীও ভীত হয়েছিল যা সম্ভবত এপ্রিল ২০২০-র ভর্তির হার হ্রাসের মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয়েছে। তবে, তাদের বাধ্যবাধকতার কারণে, শ্রমিকরা হাসপাতালের ভয়কে পরিহার করে এবং শীঘ্রই আবার হাসপাতালের পরিষেবা গ্রহণ করতে শুরু করে। পরিকল্পিত কোভিড মহামারী চলাকালীন জনজীবনেও এই প্রবণতা প্রতিফলিত হয়েছিল। সমাজের অর্থনৈতিকভাবে উচ্চ স্তরের লোকেরা ভয়ে আধমরা হয়ে ছিল এবং সমাজে আরও বেশি করে ভয় ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছিল, কিন্তু শ্রমজীবী মানুষ নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই লড়তে গিয়েই এই মিথ্যা অতিমারী দ্বারা প্রতারিত হয়নি।

 

রোগের প্রবণতা

সারণী ২ এবং চিত্র ২ আমাদের অধ্যয়ন করা রোগগুলির প্রবণতা দেখাচ্ছে। এটা নিঃসংকোচে বলা যেতে পারে যে বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালের রোগীদের রোগের প্রবণতা বালি, বেলুড় এবং লিলুয়া এলাকার জনতার রোগের প্রচলনকে যথার্থই প্রতিফলিত করে।

সারণী ২ Disease Trends among Inpatients from 2019 to 2022

table2

চিত্র ২ Disease Trends from 2019 to 2022

figure 2

২০১৯ সালে এই পাঁচটি রোগের বিস্তারের বিন্যাস এইরকম ছিল - উচ্চ রক্তচাপ > ডায়াবিটিস > হৃদরোগ > রক্তক্ষরণ জনিত রোগ > স্ট্রোক। এই প্যাটার্ণ এই চার বছর ধরে প্রায় একই ছিল (২০২০ সালে শুধুমাত্র, রক্তক্ষরণ জনিত রোগের বৃদ্ধির প্রবণতা কম ছিল)। ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের সংখ্যা ২০১৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত তীব্র বৃদ্ধি দেখিয়েছে। এর পর থেকে হৃদরোগ এবং স্ট্রোক এর বৃদ্ধির প্রবণতা কমে যায়, যেখানে ডায়াবিটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত রয়ে যায়। সমস্ত রোগই বৃদ্ধি দেখিয়েছে। ২০১৯ থেকে ২০২২ এর মধ্যে বৃদ্ধির প্রবণতা সবচেয়ে তীব্র ছিল স্ট্রোক এবং রক্তক্ষরণ জনিত রোগের, যদিও সংখ্যায় বেশী ছিল ডায়বিটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ এর রোগীরা। উল্লেখ্য যে ডায়াবিটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ এই দুইই স্ট্রোক এবং হৃদরোগ এর কারণ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে।

তথ্য অনুসন্ধান এবং আলোচনা ২

২০২০ সালে যখন চিকিৎসার পদ্ধতিগুলি শুরু হয়েছিল এবং ২০২১ সালে আবার যখন ভ্যাকসিন দেওয়া চালু করা হয়েছিল তখন আমরা অনুমান করেছিলাম যে এর ফলে কোভিড-১৯-এর প্রকোপের বদলে কোভিড ১৯ এর চিকিৎসার প্রকোপে, মানুষ আরও বেশি অসুস্থ হয়ে উঠবে। এর কারণগুলো নিম্নরূপ:

 

১. ভাইরাসের চিকিৎসায় অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-প্রোটোজোয়াল ওষুধের অবৈজ্ঞানিক ব্যবহার। কোভিড নিউমোনিয়ার জন্য এমন একটি অ্যান্টিভাইরাল ওষুধের ব্যবহার, যার ক্ষতিকারক প্রভাবগুলির মধ্যে একটি হল শ্বাসতন্ত্রের অসুখ।

২. কোভিড নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য উচ্চ ঘনত্বের অক্সিজেনের উচ্চ প্রবাহ এবং স্টেরয়েডের নির্বিচারে ব্যবহার। অক্সিজেনের উচ্চ প্রবাহ একজন অনভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ফুসফুসের সংকোচন ঘটাতে পারে3 এবং স্টেরয়েডের নির্বিচারে ব্যবহার উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবিটিস এবং ইনসুলিন প্রতিরোধের জন্ম দিতে পারে4

[উপরে উল্লিখিত চিকিত্সা পদ্ধতিগুলি ২০২০ সালের ২য় ত্রৈমাসিক থেকে কার্যকর হয়েছিল এবং ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে গণটীকা দেওয়া শুরু হয়েছিল]

৩. গণটীকাদান কর্মসূচী। এটি নিম্নলিখিত দুটির যে কোনও একটি দিয়ে করা হয়েছিল: একটি হোলো, GM ভ্যাকসিন যা জিনগতভাবে মানবদেহকে পরিবর্তন করার এবং পরবর্তী কয়েক দশক ধরে অনেক রোগের প্রবণতা সৃষ্টি করার ক্ষমতা রাখে (মায়োকার্ডিয়াল ইনজুরি এমনই একটি রোগ যা পরবর্তীতে এমনকি ভ্যাকসিন নির্মাতাদের দ্বারা এবং সিডিসি দ্বারাও স্বীকার করে নেওয়া হয়)5। অথবা একটি ‘লাইভ অ্যাটেনুয়েটেড’ (জীবন্ত কিন্তু কম কার্যক্ষমতা সম্পন্ন) অ্যাডেনোভাইরাস ভ্যাকসিন যা অ্যাডেনোভাইরাস সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

২০২২ সালের অ্যাডেনোভাইরাস ওয়েভ ইতিমধ্যেই মিডিয়াতে নথিভুক্ত হয়েছে6 এবং এইভাবেই আমাদের অনুমান বৈধতা লাভ করেছে। এর জন্য কোনো প্রমাণ আমাদের তুলে ধরতে হবে না।

বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্য অনুসন্ধান করে আমরা দেখতে পেয়েছি যে অভিজ্ঞ গবেষকরা বিভিন্ন রোগের উপর ক্লিনিকাল গবেষণা করেছেন এবং দেখেছেন যে এমন শক্তিশালী প্রমাণ রয়েছে যে ডায়াবিটিস এবং রক্তচাপ উভয়ই সমস্ত প্রকারের কোভিড-১৯ টীকাকরণের মাধ্যমে জন মানুষের মধ্যে ব্যাপ্তি লাভ করেছে 7,8,9,10,11,12। এই গবেষণাগুলির মধ্যে কয়েকটি এও দেখিয়েছে যে কোভিড-১৯ টীকা এবং উচ্চ রক্তচাপের মধ্যে কার্য-কারণ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি প্যাথোফিজিওলজিকাল ভিত্তি রয়েছে। রক্তনালীর এবং স্নায়ুর রোগ ঘটানোরও যে ক্ষমতা আছে এই ভ্যাক্সিনের, কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে সেই তথ্যও13

কর্পোরেট এবং সরকারী সংস্থাগুলি প্রচার করছে যে, হ্যাঁ, এই রোগগুলির বৃদ্ধি ঘটেছে তবে এটি “লং কোভিড”-এর প্রভাবের ফলে হয়েছে। এটি চিকিত্সক ও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটি সাম্প্রতিক প্রবণতা, যে নতুন কিছু কথা তৈরী করা। যদিও বিজ্ঞান বিজ্ঞান গন্ধ এদের গায়ে লেগে রয়েছে, আসলে এগুলোর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এই তথাকথিত মেডিকেল শব্দের কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই - লং কোভিড চিকিৎসা জগতের একাংশের একটি অনুমান মাত্র।

তদুপরি, চিকিৎসা গবেষণার ইতিহাসে কখনও ডায়াবিটিস বা উচ্চ রক্তচাপের মতো দীর্ঘস্থায়ী অসংক্রামক রোগের সাথে শ্বাসতন্ত্র সম্পর্কিত RNA ভাইরাসের ( তাও আবার করোনা ভাইরাস পরিবারের) কোনো কার্য্যকারণ সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্যাথোফিজিওলজী সংক্রান্ত যেটুকু জ্ঞান মানুষের আছে সেটাও এই ধরনের দাবি সমর্থন করে না।

সীমাবদ্ধতা

আমাদের এই অধ্যয়নের অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল, যা আমাদের পাঠকদের কাছে প্রকাশ করা উচিত:

১. এই অধ্যয়নের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের কারোরই গবেষণা পদ্ধতির বিষয়ে কোন আনুষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ ছিল না।

২. আমরা কেউই ধারাবাহিকভাবে পুরো কর্মদিবস দিতে পারিনি। যদি আমরা তা করতে পারতাম, আমরা এই গবেষণাটি একই সংখ্যক দিনে শেষ করতে পারতাম যতগুলি সপ্তাহ আমাদের লেগেছিল।

৩. বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে এমার্জেন্সি বিভাগ নেই। তা থাকলে ওই হাসপাতালে ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ (প্রথম দুটির জটিলতা থেকে উদ্ভূত জরুরী পরিস্থিতি), হৃদরোগ, রক্তক্ষরণ জনিত রোগ এবং স্ট্রোকের (শেষ তিনটির তীব্র বা অ্যাকিউট ক্ষেত্রে) আরও বেশি রোগী পাওয়া যেত।

সিদ্ধান্ত

বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালের ভর্তি হওয়া রোগীদের রোগের প্রবণতা বালি, বেলুড় ও লিলুয়া অঞ্চলের জনমানুষের রোগের প্রবণতাকে প্রতিফলিত করে বলেই আমরা মনে করি। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে আমাদের অনুমানগুলোর (যে অনুমানগুলোর একটা দৃঢ় ভিত্তি রয়েছে চিকিৎসা বিজ্ঞানে), যথার্থতা বর্তমান অধ্যয়নের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে।

স্টেরয়েডের নির্বিচার ব্যবহার এবং গণটীকাদান কর্মসূচীর দীর্ঘমেয়াদী প্রতিকূল প্রভাব জনমানুষের মধ্যে ডায়াবিটিস এবং সিস্টেমিক উচ্চ রক্তচাপের ব্যাপক বৃদ্ধির মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হয়ে থাকতে পারে।

সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল14-এর উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কিছু অংশে করা একটি ছোট পূর্ববর্তী গবেষণা আমাদের একই রকম ফলাফল দিয়েছে। আমরা এখন আত্মবিশ্বাসী যে ভারতের যে কোনো জায়গায় করা এই ধরনের গবেষণা একই ফলাফল দেবে।

কোভিড-১৯-এর চিকিত্সার পদ্ধতি এবং গণটীকাদান জনগণের মধ্যে বর্ধিত অসুস্থতার জন্ম দিয়েছে।

সুতরাং, এটি ওষুধ কোম্পানি এবং বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বাজার বাড়াতে বাধ্য। এটি স্বাস্থ্য বীমা ক্ষেত্রের বাজারও বাড়াতে বাধ্য।

এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবও থাকতে পারে। জনমানুষের মধ্যে এই রোগগুলির সংখ্যা বৃদ্ধি মানুষকে আরও ওষুধ এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার উপর নির্ভরশীল, আরও ভীত ও উদ্বিগ্ন এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে তাদের প্রকৃত বয়সের চেয়ে বেশি বয়স্ক করে দিতে পারে। জৈবিক বার্দ্ধক্য প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত করে তুলতে পারে, জনমানুষকে মানসিক বয়সের ভারে ন্যুব্জ করে দিতে পারে, এমন জনমানুষ যারা দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্তির দিকে এগিয়ে যাবে।

 

প‘সংহার

চক্রান্ত তত্ত্বের মতোই শুনতে লাগছে তো? যেন আমি বলতে চাইছি যে জনমানুষকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেওয়ার কর্পোরেটীয় চক্রান্ত এসব। কোনো প্রমাণ আছে এসবের? দেখা যাক, একবার, তথ্য কি বলছে। প্রমাণ নানা ধরণের হয় তো। তার মধ্যে এক ধরণ হোলো আনুষঙ্গিক ব পরোক্ষ প্রমাণ। লকডাউনের কারণে জনমানুষ সবথেকে খারাপ অবস্থায় পড়েছিল ভারতে15। লকডাউন এবং টীকাকরণ ভালোভাবে কার্য্যকর করার জন্য বিল এ্যন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন থেকে মেলিন্ডা গেটস ভারত সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন16। ভারত ছাড়া আর যে যে দেশে কড়াভাবে লকডাউন এবং টীকাকরণ কার্য্যকর করা হয়েছিল, তা হোলো চীন এবং ব্রাজিল। এছাড়া আছে আফ্রিকার দেশগুলো। জনসংখ্যার হিসেবের দিকে একবার চোখ রাখলেই আমরা দেখতে পাবো যে পৃথিবীর বেশীরভাগ মানুষ বসবাস করে এই দেশগুলোতে। ভারত, চীন, ব্রাজিল এবং আফ্রিকার দেশগুলো মিলিয়ে। এবার কি প্রমাণ এর কিছু বোঝা যাচ্ছে? বোঝা যাচ্ছে কি যে এই দুই ঘটনার মধ্যে কিছু যোগসূত্র থাকতেও পারে? মানে, এই ঘটনা যে এই দেশগুলোতে টীকাকরণ কার্য্যকর করা হয়েছে সব থেকে কড়াভাবে, আর এই ঘটনা যে এই সব দেশগুলোতে জনমানুষের সংখ্যা সবথেকে বেশী, তাও আবার অভিজাত শ্রেনীর বাইরের, খেটে খাওয়া মানুষের সংখ্যা। এর থেকে কেউ কেউ যদি এই উপসংহার টানেন যে এই ধোকামারী আসলে পৃথিবীর জনমানুষ এর সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ার চক্রান্ত, তাহলে খুব কিছু কল্পবিজ্ঞান হবে ব্যাপারটা? তার ওপরে আবার যদি বিল গেটস এর ২০১৫ সালের মার্চ মাসের বক্তৃতা মনে পড়ে যায়। যে বক্তৃতায় তিনি বলেছিলেন যে এখন আর যুদ্ধাস্ত্রে লগ্নি করার সময় নয়, এখন সময় হোলো জীবানু নিয়ে গবেষণায় লগ্নি করার।

কি মনে হচ্ছে, ভয় দেখাচ্ছি ? চোখের সামনে ঘটনা ঘটতে শুরু করে দিয়েছে। এখন আর ভয় পেলে চলবে না। এখন আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা।

তথ্যসূত্র:

1. https://janaswasthyajanabarta.blogspot.com/2022/04/the-backdrop-of-pandemic-note.html

2. https://janaswasthyajanabarta.blogspot.com/2022/06/blog-post.html

3. Eckenhoff Roderic G, Longnecker David E, The Therapeutic Gases – Oxygen, Carbon Dioxide, Nitric Oxide, Helium and Water Vapour, Goodman & Gilman’s The Pharmacological Basis of Therapeutics, Ninth Edition, McGraw Hill, 1996, Pg 352.

4. https://en.wikipedia.org/wiki/Corticosteroid – as on 19.06.2023.

5. Clinical Considerations: Myocarditis after mRNA COVID-19 Vaccines. CDC, 17/12/2022, 22:25

6. https://www.livemint.com/news/india/adenovirus-continues-to-woe-west-bengal-12-000-cases-recorded-19-children-dead-11678875508392.html

7. Finsterer J. A Case Report: Long Post-COVID Vaccination Syndrome During the Eleven Months After the Third Moderna Dose. Cureus. 2022 Dec 12;14(12):e32433. doi: 10.7759/cureus.32433. PMID: 36644105; PMCID: PMC9833629.

8. Angeli F, Reboldi G, Trapasso M, Verdecchia P. Ipertensione dopo vaccinazione anti-COVID-19 [Hypertension after COVID-19 vaccination]. G Ital Cardiol (Rome). 2022 Jan;23(1):10-14. Italian. doi: 10.1714/3715.37055. PMID: 34985455.

9. https://accp1.onlinelibrary.wiley.com/doi/10.1002/jcph.2037

10. Lin R, Lin Y-W, Chen M-H. Fulminant Type 1 Diabetes Mellitus after SARS-CoV-2 Vaccination: A Case Report. Vaccines. 2022; 10(11):1905. https://doi.org/10.3390/vaccines10111905

11. Yano M, Morioka T, Natsuki Y, Sasaki K, Kakutani Y, Ochi A, Yamazaki Y, Shoji T, Emoto M. New-onset Type 1 Diabetes after COVID-19 mRNA Vaccination. Intern Med. 2022 Apr 15;61(8):1197-1200. doi: 10.2169/internalmedicine.9004-21. Epub 2022 Feb 8. PMID: 35135929; PMCID: PMC9107966.

12. Sakurai K, Narita D, Saito N, Ueno T, Sato R, Niitsuma S, Takahashi K, Arihara Z. Type 1 diabetes mellitus following COVID-19 RNA-based vaccine. J Diabetes Investig. 2022 Jul;13(7):1290-1292. doi: 10.1111/jdi.13781. Epub 2022 Mar 12. PMID: 35220662; PMCID: PMC9114989.

13. Michael Palmer, MD and Sucharit Bhakdi, MD, Vascular and organ damage induced by mRNA vaccines: irrefuta ble proof of causality, doctors4covidethics.org, Thursday 18th August, 2022

14. https://janaswasthyajanabarta.blogspot.com/2022/05/blog-post_1.html

15. The Impact of the Lockdown on India, Pgs 30-41, Crisis and Predation, Research Unit for Political Economy, 1st Indian Edition, 2020, Originally pub. Monthly Review Press, New York, ISBN 978-93-83968-36-7

16. https://timesofindia.indiatimes.com/india/indias-covid-vaccination-drive-amazing-melinda-gates/articleshow/96015550.cms