প্রায় দেড় বছর হতে চলল। আমাদের বারবার বলা হলো, ঘরের বাইরে বেরোলেই নাকি ‘কোভিড’ হয়ে যাবে, রোগ হুহু করে ছড়িয়ে পড়বে, আমরা মারা পড়ব; তাই সবাইকে ঘরবন্দী থাকতে হবে। তো এতসব করে কার কী উপকার হল? ঘরবন্দী থাকার ফল তো সকলের বেলায় একইরকম নয়। যারা মাস-মাইনের নিশ্চিত রোজগারের মানুষ, জমানো রেস্ত আছে তাদের পক্ষে একরকম; কিন্তু সেরকম আর কতজন? এমনকী, তাদেরও দেখছি, মাস মাইনের নিশ্চিন্তিটা আস্তে আস্তে নড়বড়ে হয়ে গেল, অনেকের জমানো রেস্ত ফুরিয়ে গেল। এবার?
অবশ্য তাদের কথা হয়তো সরকার ভাবছে; কিন্তু আমাদের কথা? আমরা তো বেশিরভাগই রোজের খাবার রোজ যোগাড়ের দলে। আজ কিছু জুটলো, কাল কী জুটবে জানি না, এই দলের লোক। আমরা তো এখন দেখছি, ‘কোভিড’ থেকে লুকিয়ে বাঁচতে গিয়ে, কাজ না-পেয়ে, খেতে না-পেয়ে মরার জোগাড় হয়েছে। পেটের জ্বালায়, কাজের খোঁজে ভিন দেশে পাড়ি দিতে হয় আমাদের। ‘কোভিড’ হোক বা অন্য কোন অসুখ, এখন যদি রোগজ্বর কিছু হয়ও, তার চিকিৎসার রেস্তও নেই, বন্দোবস্তও নেই।
মাঝখানে অবশ্য ঘরবন্দীর ফতোয়ায় কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, আমাদের একটা ঠিকঠাক সরকার চাই, তাই ভোট দিতে হবে। বলা হয়েছিল, সরকার খুব দরকারি জিনিস। হয়তো তাই, তবে কোন দরকারে সরকারকে কোথায়, কীভাবে পাওয়া যাবে, তা নিয়ে আমাদের ধন্দ থেকেই গেল। গত বছর চাল-গম-এর বরাদ্দটা অন্ততঃ বেশি ছিল। ভোট হয়ে গেল, বরাদ্দও কমে গেল। এখন ভাবছি, ভোটটা না হলে বরং ভালো ছিল।
বাড়ির বাচ্চাগুলোর লেখাপড়া লাটে উঠেছে। ইস্কুল বন্ধ। তাদের অনেকেই এখন কাজে জুটেছে। কোনো না-কোনোভাবে কিছু না-কিছু রোজগার তো চাই। এরপর স্কুল খুললে কতজন আর স্কুলে ফিরবে, সেখানে আর পড়াশুনো হবে কিনা, কে জানে? এখন মোবাইল ফোনেই নাকি লেখাপড়া চলবে। কিন্তু মোবাইল চালাতেও টাকা চাই, মানে রোজগার। মোবাইলে স্কুলের পরীক্ষা চলছে। এদিকে একটা ঘরে পাঁচজনের বাস। মোবাইলের ক্যামেরায় দ্যাখা গেছে, মেয়ের পিছনে তার ঠাকুমা দমকে দমকে কাশছে। সে মেয়ে ফেল করেছে, কারণ পরীক্ষার সময় ঘরে কারোর থাকার নিয়ম নেই।
নিয়মগুলো বানায় কারা? আমরা কীভাবে থাকি, কীভাবে বেঁচে থাকি, তারা কী এসব জানে? ঘরবন্দী থাকার এই ফতোয়ার দাম তো আমরাই চোকাচ্ছি দেখছি। শুধু রোজগার যায়নি, রোজগার-এর সুযোগটাও গেছে।
নতুন সরকার তৈরী করার জন্য আমাদের ভোটটা নাকি খুব দরকার ছিল। তো সেই ভোটে সরকার যখন হয়ে গেল, তখন আমাদের কথা আর ভাবে না কেন? ভাবছে না যখন, তখন গা-ঝাড়া দিয়ে উঠি।
উঠে একটু ভাবি, আমাদের আজকাল এত বিজ্ঞান বোঝানো হচ্ছে কেন? আমাদের মনের মধ্যে বিশ্বাস ঠুসে দেওয়ার নামই কি বিজ্ঞান? বিজ্ঞান মানে কি গা-জোয়ারি? বিজ্ঞানের নামে মাসের পর মাস অপকর্ম করা যায়? এই প্রশ্নগুলো এখন উঠতে শুরু করেছে। শনি মন্দিরের চাতাল থেকে, চার্চ থেকে, শীতলার থান বা মাজহার, যেখান থেকেই উঠুক, প্রশ্ন করাটাই এখানে বিজ্ঞান। উত্তরের নামে চটজলদি, যেভাবে হোক, যা কিছু বুঝিয়ে দেওয়াটা অবিজ্ঞান, অপবিজ্ঞান। আমাদের নাকি নিজেদের মধ্যে দূরত্ব-বিধি মেনে চলতে হবে; কিন্তু আমরা তো মনে করি এই কঠিন সময়ে পরস্পরের হাতে হাত রাখাই দরকার। এই মানুষ মারা, ঘরবন্দী রাখাটাও বিজ্ঞান নয়, বরং একটা ফন্দী। এখনও যদি তা আটকানো না যায়, অনেকটা দেরি হয়ে যাবে। তাই আসুন, একসঙ্গে জোট বাঁধি।
- যে-অচলাবস্থা চালু আছে, অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করতে হবে।
- সমস্ত স্কুল, কলকারখানা, ট্রেন-বাস চালু করতে হবে, নিঃশর্তে।
- সম্মানজনক শর্তে বেঁচে থাকাটা আমাদের অধিকার। জীবিকার অধিকার কেড়ে নেওয়া চলবে না।
- যতদিন না দেশের একশো শতাংশ মানুষের কম্পিউটার, মোবাইল-এর বন্দোবস্ত হচ্ছে, সকলে সেগুলো ঠিকভাবে ব্যবহার করতে শিখছে, ততদিন সবকিছুকে অনলাইন করার ফিকির বন্ধ করতে হবে।
তারিখ - ১২ জুলাই, ২০২১।
গণদর্পণ
অধিকার
ভারত ভাবনা
নাগরিক উদ্যোগ
আজাদ গণমোর্চা
শান্তিপুর জনউদ্যোগ
আজাদ মজদুর সংঘ
জাতীয় বাংলা সম্মেলন
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা সমন্বয়
বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র
হালিশহর বিজ্ঞান পরিষদ
Feminists In Resistance (FIR)
Centre for Social Activism (CSA)
শ্রমিক কৃষক শিক্ষার্থী ঐক্য মঞ্চ (WPSUF)
বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (MASUM)
Global Rational Alliance for Public Health (GRAPH)
ও আরো অনেকে