ডাক্তারবাবু, কাজে যেতে গেলে ‘কোভিড’-এর টিকা নিতে হবে বলছে। আপনি একটু লিখে দেবেন, একটা প্রেসক্রিপশন? আমার শরীরের খবর, কী দরকার না-দরকার, টিকা নিলে কোনো ক্ষতি-টতি হবে কিনা, সেতো আপনিই ভালো জানবেন। শুনলাম আপনি বলেছেন, টিকা মানে বিজ্ঞান, টিকা-ই বিজ্ঞান। আবার শুনলাম, সেদিন আর এক ডাক্তারবাবু বলেছেন, এই টিকা আদৌ কার্যকরি কিনা, কীভাবে বোঝা গেল এটা কার্যকরি, এই প্রশ্নগুলোও বিজ্ঞান। তাতে আপনি, আপনারা খুব রেগে গিয়ে বলেছেন, এরকম বিভ্রান্তি ছড়ানো ঠিক নয়, সেই ডাক্তারবাবু নাকি নতুন বিজ্ঞানের খোঁজ-টোঁজ রাখেন না, এইসব।
 
কিন্তু এই টিকা যে কার্যকরি সেটা আপনারা বুঝে গেলেন কী করে? টিকায় কতটা কাজের কাজ হবে তা নিয়ে তো সবে যাচাইপর্ব শুরু হয়েছে, তাতেই নানান মত শুনতে পাচ্ছি। ওই ডাক্তারবাবু বললেন, ‘জিন’ নিয়ে নাড়াচাড়া করা টিকা, আজ থেকে দু’দশবছর বাদে শরীরে কোনো বিপদ ঘটাবে কিনা, ঘটালে তা সামলানো যাবে কিনা, এসব জানা নেই; সেটা দশবছরের আগে জানাই বা যাবে কি করে? তাঁর প্রশ্নের জবাবে আপনারা কিন্তু বললেন না, ‘এইভাবে বোঝা যাবে, ওইভাবে সামলানো যাবে!’ বরং আপনারা বললেন, ‘বেশি প্রশ্ন কোর না, বাঁচতে গেলে টিকা তো নিতেই হবে’!
 
এই জুলাই মাসের এক তারিখে আপনাদের মুখেই শুনেছি, গতবছর ৯ মাসে ৭৪৮ জন চিকিৎসক ‘কোভিড’-এ মারা গেছেন, আর এ বছর ৯ সপ্তাহেই মৃত্যু হয়েছে ৭৭৬ জন চিকিৎসকের। মারাত্মক বটে। কিন্তু এই বছর মানে কবে থেকে? ১৬ জানুয়ারির পর থেকে? ওই দিন থেকেই তো টিকাকরণ শুরু হয়েছিল। আর টিকা তো চিকিৎসকরাই সবচেয়ে আগে পেয়েছিলেন। তো এই বছরে মৃত ৭৭৬ জন চিকিৎসকের মধ্যে কতজন টিকা নিয়েছিলেন? কতজন দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরেও মারা গেছেন? ৭৭৬ জনের মধ্যে দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার পর কতদিন পরে কতজন মারা গেছেন? এগুলো কিছুই তো বললেন না।
 
আমরা অবশ্য সার কথাটা বুঝলাম, ওই ডাক্তারবাবু প্রশ্ন করতে বলেছিলেন আর আপনারা বলছেন, বিশ্বাস করতে, টিকা কোম্পানিগুলোর উপর ভরসা করতে। তো, আমি বিজ্ঞানকে চিনি না, কোম্পানিকেও না; আমি আপনাকে চিনি, বিশ্বাসও করি যে আপনি আমার ক্ষতি করে দেবেন না। তাই একটা প্রেসক্রিপশন চাইছি। কখনো যদি আমার কিছু হয়, এক মাস, এক বছর, দশ বছর পরেও, তখন আপনার কাছে আসবো, ওই কাগজ দেখে আপনার মনে পড়বে, তাই। হাতে যদি কাগজ না-থাকে তখন লোকে বলবে, নিজের ইচ্ছায় টিকা নিয়েছো, ডাক্তারের কী, তোমার দায়িত্ব তোমারই!  
 
তাই আমাদের মহা ধন্দ। সারা দুনিয়ায় আমাদের দেশেই সব থেকে বেশি মানুষ যক্ষ্মা রোগে মারা যায়, সব থেকে অন্ধ মানুষের বাস এই দেশে, অনাহারে অপুষ্টিতে অসংখ্য মানুষ মারা যায়। এগুলোর ওষুধ আছে, পথ্যও আছে, তবুও মানুষ মরে, তবুও সরকারের ঘুম ভাঙে না। তাহলে ‘কোভিড’-এর টিকা নিয়ে সরকার এত ছটফট করছে কেন?
 
কী বললেন? প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী আর সরকারি দপ্তরগুলো জানিয়ে দিয়েছে, তাই টিকা নিতে হবে? তাহলে আর আপনারা এত কথা বলে নিজেদের সময় নষ্ট করছেন কেন? শুধু যদি বিশ্বাসের উপরেই ভর করতে হয় তাহলে আপনাদের সঙ্গে টিকা কোম্পানিগুলোর তফাৎ আর কতটুকু? ওরা তো জানি, মুনাফা চায়, আপনারা? শুনেছি, টিকা নেওয়ার পর আমাদের কোনো দায়িত্ব কেউই নেবেন না; তাহলে দায়িত্ব পুরোপুরি আমাদেরই ওপর বর্তায়। বেশ, ভালো কথা; তাহলে আমরাই বুঝে নেবো, আপনাদের বিশ্বাস করতে যাব কেন? বলুন?
 
সরকার বলছে, টিকা নিতে কেউ নাকি বাধ্য নয়, তাই জবরদস্তি থাকবে না। অথচ সরকারি, অসরকারি দপ্তরগুলো বলছে, টিকা না-নিলে নানান শাস্তি। এদিকে আপনারাই বলছেন, টিকা নিলেও ‘কোভিড’ হতে পারে, কেউ টিকা নিলেও তার থেকে কোভিড সংক্রমণ ছড়াতে পারে। তাহলে টিকা না-নিলে কোথাও ঢুকতে দেওয়া হবে না, এই ফরমান আসছে কেন? এমনিতে টিকা নিতে আপত্তি নেই; তবে যদি বাধ্য করেন তাহলে টিকার কারণে খারাপ কিছু হলে কাউকে তো আমাদের সারিয়ে তোলার, খরচখরচার যাবতীয় দায়িত্ব নিতে হবে। আমার শরীর আমারই একান্ত; আমাদের অনিচ্ছায় তার উপর পরীক্ষা চালানোর অধিকার কারুর নেই, সরকারেরও না।
 
তার চেয়ে আমরা বরং বিবেচনা করে দেখবো, পণ্ডিত-অপণ্ডিত অনেকের কথা শুনবো, প্রশ্ন করবো, জবাব চাইবো, তারপর একটা সিদ্ধান্তে আসবো। আমরা টিকার ভালো-খারাপের খবরাখবর চাই। এক-একটা অঞ্চলে, এক-একটা মহল্লায় টিকা না-নিয়ে আর টিকা নিয়েও বিপদে পড়লেন ক’জন, মারা গেলেন ক’জন, এইসব খবরাখবর। তবে তো আমাদের ধন্দ কাটবে। প্রশ্নের ঠিকঠাক জবাব আপনাদের দিতেই হবে, এড়িয়ে গিয়ে বিশ্বাস-টিশ্বাসের কথা তুললে চলবে না।
 
আপনাদেরও জানা দরকার, টিকা নেওয়ার অধিকার যেমন আমাদের আছে, তেমনি না-নেওয়াও আমাদের অধিকার। ছলে, বলে, কৌশলে, বিজ্ঞানের নামে, পাণ্ডিত্যের নামে, কারুর স্বার্থের নামে, কোনো জবরদস্তি আমরা সইব না।

  • টিকাকরণ বাধ্যতামূলক করা চলবে না।


 
তারিখ - ১২ জুলাই, ২০২১।

অভিনন্দন সহ
 
গণদর্পণ
অধিকার
ভারত ভাবনা
নাগরিক উদ্যোগ
আজাদ গণমোর্চা
শান্তিপুর জনউদ্যোগ
আজাদ মজদুর সংঘ
জাতীয় বাংলা সম্মেলন
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা সমন্বয়
বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র
হালিশহর বিজ্ঞান পরিষদ
Feminists In Resistance (FIR)
Centre for Social Activism (CSA)
শ্রমিক কৃষক শিক্ষার্থী ঐক্য মঞ্চ (WPSUF)
বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (MASUM)
Global Rational Alliance for Public Health (GRAPH)
ও আরো অনেকে