আমরা একটা নয়া বিশ্ব ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে চলেছি। এর ফলে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, এক নতুনতর ব্যবস্থার উদ্ভব হচ্ছে, যেখানে নামে-বেনামে বহুজাতিক শিল্পনিগমগুলি কার্যত রাষ্ট্রকে পরিচালনা করছে। এই ব্যবস্থা সম্পদ এবং ক্ষমতা মুষ্ঠিমেয় কিছু মানুষের হাতে কুক্ষিগত হওয়ার যুগপৎ কারণ এবং ফলাফল। বিগত দুই বছর ধরে বিভিন্ন ঘটনাক্রমে এটি প্রকটভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। এটাও ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে, আমাদের এমন এক নতুন-পৃথিবীর-কানুনে থাকতে হবে, যেখানে অধিকাংশ মানুষ তাদের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্বাধীনতা ও মর্যাদাসম্পন্ন জীবনধারণের মৌলিক অধিকার থেকে আরও বঞ্চিত হবে।

বিশ্বের কতিপয় অতি ধনাঢ্য ব্যক্তির নির্দেশনায় নতুন-পৃথিবীর এমন রূপরেখা আঁকা হচ্ছে যা আমাদের অর্থনীতি, রাষ্ট্র-পরিচালনার কাঠামো, সমাজ-বুননকে নতুন ভাবে গড়ে তুলবে; জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ-রক্ষার বিষয়ে আমাদের নীতি-নৈতিকতায় আমূল পরিবর্তন আনবে।
বিশালাকার বহুজাতিক কর্পোরেট সংস্থাগুলো (বিশেষত ফার্মা - চিকিৎসা প্রযুক্তি শিল্পের গাঁটছড়া, এবং ফিনান্স পুঁজির মধ্যেকার আঁতাত) আমাদের জীবনে নামিয়ে এনেছে অভাবনীয় কিছু বিধিনিষেধ। এই নতুন-পৃথিবীর-কানুন চালু করার গূঢ় অভীপ্সায় স্বাস্থ্যের অজুহাতে বহুজাতিক নিগমগুলির বাঁধা ছকে সাধারণ মানুষকে বশ্যতার লাগাম পরানো হচ্ছে। আমাদের দেশ এই নতুন-পৃথিবীর-কানুন প্রয়োগ করার অন্যতম প্রধান মঞ্চ।
এই প্রেক্ষিতে সমাজের সকল অংশের মানুষের কাছে আহ্বান: আসুন, এক সাধারণ উদ্দেশ্যে আমরা সবাই একত্রিত ও ঐক্যবদ্ধ হই। এই উদ্দেশ্যে আমরা জনস্বাস্থ্য মোর্চা  (PAPH - People's Alliance for Public Health) নামে এক সংগঠন গড়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে সমবেত হয়েছি।

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

# আমরা, দেশের আইন-মান্যকারী নাগরিকেরা, জীবন, জীবিকা ও নাগরিক স্বাধীনতা বিষয়ে বর্তমান সংবিধানে স্বীকৃত মৌলিক অধিকারগুলি ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে চাই।
# এই পরিবর্তিত বিশ্ব-ব্যবস্থায় যে সমস্ত সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অন্যায্যতা তৈরী হচ্ছে, এবং এর আগে থেকেও যে সব অন্যায্যতা রয়েছে, তার বিরুদ্ধে ব্যক্তিক ও সাংগঠনিক পর্যায়ে লড়াইতে ঐক্য ও সংহতি বৃদ্ধি করতে চাই।
# এই পরিবর্তিত বিশ্ব-ব্যবস্থায় সার্বিকভাবে, বিশেষত স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে, যে ভয়াবহ পরিস্থিতি উদ্ভূত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে জন-সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচার অভিযান সংগঠিত করতে চাই।
# রাষ্ট্রীয় ও বিরাষ্ট্রীয় কুশীলবদের দ্বারা সংঘটিত যাবতীয় হিংসামূলক, বিভেদ ও প্রভেদকামী চক্রান্তের বিরোধিতা করতে চাই।
# আমরা সংগঠনের পরিকাঠামোয় গণতান্ত্রিকভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নীতি ও কর্মপদ্ধতি নির্ধারণ করব; কোনভাবেই কোন রাজনৈতিক দলের নীতি ও কৌশল দ্বারা প্রভাবিত হব না।
# আমরা চিকিৎসাবিজ্ঞান ও সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রগুলির সংহতিকরণ, অবহেলিত ও প্রায়নিশ্চিহ্ন প্রাচ্য বিদ্যাশৃংখলার সাথে আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রকে সংহত করতে চাই। এরই পাশাপাশি, রাষ্ট্রীয়, আধা-রাষ্ট্রীয়, ও বিরাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলির দ্বারা পরিপোষিত ভুয়ো ও অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি ও তার মাধ্যমে অনৈতিক উপায়ে রোগীদের অর্থ ছিনিয়ে নেওয়ার অপকৌশলের বিরোধিতা করাও আমাদের কাজ।
# জনমানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব আছে এমন যে কোনও বিষয়ে গবেষনাকে আমরা উৎসাহ প্রদান করবো। জনমানুষের প্রয়োজনে এই ধরণের সমস্ত গবেষণালব্ধ তথ্য আমরা প্রকাশ করবো মুদ্রন মাধ্যম বা বৈদ্যুতিন মাধ্যমে।
# আমরা চাই স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্র রাষ্ট্রীয় দ্বায়িত্ব হয়ে উঠুক। আমরা এটা দাবী করি এবং এই দাবী আমরা প্রচার করবো। এর সঙ্গে শুধুমাত্র ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি বিনিয়োগকারীরা এই ক্ষেত্রে থাকতে পারে।
# স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান ইত্যাদি জীবন যাপনের কোনও মৌলিক ক্ষেত্রে বৃহৎ পুঁজির একচেটিয়া আধিপত্য আমরা দেখতে চাই না।
# আমরা বিশ্বাস করি - চিকিৎসা বা কোনও বিশেষ চিকিৎসা নেওয়া বা না নেওয়া, কোনও মানুষের মৌলিক অধিকার। এটা তার ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া যায় না। চিকিৎসাগত কোনও অবহেলার ক্ষেত্রে আমরা রোগী ও তাঁদের পরিবারের সাথী হয়ে দাড়াতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
# জনমানুষের জীবনযাপন এর পক্ষে মঙ্গলময় এবং প্রকৃতির সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে আমরা বহন এবং ধারন করি। যে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি মানুষকে প্রতারনা করে, মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে, তাকে অপমান এবং নিপীড়ন করে এবং জনমানুষ এবং প্রকৃতির ক্ষতি করে, সে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির আমরা বিরোধী।
# জনমানুষের প্রয়োজন এবং আমাদের ক্ষমতা অনুযায়ী আমরা চিকিৎসা সংক্রান্ত ও অন্যান্য বিষয়ে ত্রান এর কাজ সংগঠিত করবো।
# সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত অনুসারে আমাদের সংগঠনের মতামত ও কর্মধারাগত বিশিষ্টতা অক্ষুণ্ন রেখে ভাতৃপ্রতিম যেকোন সংগঠনের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে সাধারণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করব।

আশু উদ্যোগ

# ভ্যাক্সিন বা যেকোন চিকিৎসা সম্পূর্ণ ঐচ্ছিক হলেও রাষ্ট্রীয় বা বিরাষ্ট্রীয় সংস্থা কর্তৃক পরামর্শদানের নামে কোভিড-১৯ ভ্যাক্সিন নেওয়ার জন্য কোন ব্যক্তিকে পরোক্ষ হুমকি বা চাপ দেওয়া হলে তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা।
# কোভিড-১৯ টিকাকরণের ফলে কোন ব্যক্তির গুরুতর ক্ষতি বা মৃত্যু হলে তার তদন্ত, ক্ষতিপূরণ দাবি করা, ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে লড়াই করা।
# কোভিড-১৯ টিকাদানের আগে যথাবিহিত “অবহিত সম্মতি” (informed consent) গ্রহণ বাধ্যতামূলক করার দাবী করা।
# জনসমাজ থেকে কোভিড-১৯ টিকাদান ও তার প্রতিক্রিয়া বিষয়ে গ্রহণযোগ্য তথ্যাবলী সংগ্রহ, সংরক্ষণ করার দাবি জানানো যাতে এগুলি নিয়ে যেকোনও গবেষক অবাধে সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণ চালিয়ে যেতে পারেন।
# রাষ্ট্র এবং বহুজাতিক কর্পোরেটদের যোগসাজশে গড়ে তোলা কোভিড ভাষ্যের ওপর ভিত্তি করে যাবতীয় বিধিনিষেধ বাতিল করার দাবী করা।
# কোভিড বিধি নিষেধের সুযোগ নিয়ে, জনগণের মধ্যে কোনো আলোচনার সুযোগ না দিয়ে, এবং এই বিধিনিষেধ কাজে লাগিয়ে প্রতিবাদ বা আলোচনার কণ্ঠরোধ করতে চেয়ে, যে সমস্ত আইন, বিধি এবং নীতি চালু করা হয়েছে সেই সব বাতিল ঘোষণা করতে হবে।
# কোভিড বিধির নামে আইনি পরিকাঠামো এবং রাষ্ট্র যন্ত্রের বেআইনি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

সদস্যপদ

আমাদের সংগঠনের ভাবনার সঙ্গে সহমত পোষণকারী যেকোন ব্যক্তিই সংগঠনের সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগ দিতে পারেন।
সংগঠনের সংবিধান অনুযায়ী গণতান্ত্রিক উপায়ে কার্যকরী পরিষদ গঠন করা হবে। জনজীবনের ওপর বর্তমান বিধিনিষেধ মাথায় রেখে যত শীঘ্র সম্ভব এই কাজ করা হবে।  
সদস্যপদে অন্তর্ভুক্তি ও বহিস্কারের প্রক্রিয়া সংগঠনের সংবিধানে সবিস্তারে বর্ণনা করা থাকবে।

আবেদন

সমাজের সকল স্তরের মানুষের কাছে সংগঠনের সাধারণ সদস্য হিসেবে যোগদান করতে আবেদন জানাই।
যত শীঘ্র সম্ভব একটি সম্মেলনের মাধ্যমে কার্যকরী ও পরামর্শক পরিষদ্ গঠন করা হবে। এই সমাবেশে সংগঠনের গঠনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, এবং লক্ষ্য ও সংবিধান গৃহীত হবে।

 

২০শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ 

 

এই খসড়া কর্মসূচী সম্পর্কে আপনার মতামত পাঠাতে পারেন এই ইমেইল ঠিকানাটি spambots থেকে রক্ষা করা হচ্ছে। এটি দেখতে হলে আপনার জাভা স্ক্রিপ্ট সক্রিয় থাকতে হবে।-এ।