সম্প্রতি কোভিডের প্রতিষেধক কোভিশিল্ডের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সংবাদ ও সমাজ মাধ্যমে হৈ চৈ অব্যাহত। তৈরি হয়েছে উদ্বেগ। স্বাভাবিকভাবেই এ দেশে, এমন কি অন্য কোনো দেশেও,যাঁরা ইতিমধ্যেই কোভিশিল্ড নিয়েছেন তাঁরাও কম বেশি এই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে আমার একান্তই নিজস্ব কিছু কথা বলার জন্য এ লেখার অবতারণা।
সম্প্রতি স্বীকার করা হয়েছে যে এই ভ্যাকসিনে 'বিরল' ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় এবং কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে,তার একটা তালিকাও জানা গেছে! গুরুত্বপূর্ণ হ'ল 'বিরল' শব্দটি।তাই,সে নিয়েও এ লেখার অবতারণা।
পুরো বিষয়টি নিয়ে কিছু বলার আগে,বলে নেওয়া দরকার আরোও কিছু প্রাসঙ্গিক কথা। যেমন, মানব শরীরে,বাইরে তৈরি যে কোনোও কিছু শরীরে প্রবেশ করানো হলেই, তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘ সময় ব্যবধানে কিছু প্রতিক্রিয়া হওয়া অস্বাভাবিক নয়। যাকে আমরা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বলতে পারি। উদাহরণ হিসেবে যদি ওষুধ নিয়েই ভাবি,দেখা যাবে যে, মানুষের রোগ হলে যেমন রোগ ও তার কারণ নির্ণয় করার পর রোগ সারাতে ওষুধ ও পথ্য ব্যবহার করা হয়, তাতেও ঐ রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। তার জন্য আমরা একান্ত প্রয়োজন ছাড়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া সেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করি না। তাছাড়াও রোগ প্রতিরোধে উপযুক্ত মান ও পরিমানে খাদ্য ও অন্যান্য উপযুক্ত পরিবেশের প্রয়োজন হয়। আর দরকার হয় প্রতিষেধকেরও।
ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রেও দেখা যায় কোনোও একটি নির্দিষ্ট রোগে একই ওষুধ সব মানুষের ক্ষেত্রে একই রকম কার্যকর নাও হতে পারে। বলা যায় একটি নির্দিষ্ট রোগে আমি যে ওষুধ যে মাত্রায় সেবন করছি,অন্য আরেকজনের ক্ষেত্রে ঐ একই ওষুধ ঐ একই মাত্রায় তেমন কার্যকর হচ্ছে না। ঐ ওষুধে কোনো একজনের শরীরে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলেও,অন্যের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বেশি বা কম বা অন্যরকমও কিছু হতে পারে। প্রসঙ্গত, যেকোনোও ওষুধেই কিছু না কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়। টিকার ক্ষেত্রেও তাই। ক্রিয়া থাকলেই,একই সাথে প্রতিক্রিয়াও অস্বাভাবিক কিছু নয়। অনেক ক্ষেত্রে এর মাত্রা খুবই কম হয়,আবার কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মকও হতে পারে।ওষুধের ক্ষেত্রে যেমন,ওষুধের প্রয়োগ,ওষুধ বদল,বদলে অন্য ওষুধ ব্যাবহার ইত্যাদিতে চিকিৎসকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার অনুপাত(প্রতিক্রিয়ার রকম, প্রতিক্রিয়ার তুলনায় ক্রিয়ার কম বেশি) নজরে রেখে কোনোও নির্দিষ্ট রোগে নির্দিষ্ট ওষুধ প্রয়োগ একমাত্র যোগ্য,দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পক্ষেই সম্ভব। তাই,পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে জেনেও নির্দিষ্ট রোগে নির্দিষ্ট ওষুধ প্রয়োগ করা চলে। এক্ষেত্রে দেখা হয়,কোনো নির্দিষ্ট রোগে এক বা একাধিক ওষুধ প্রয়োগ ও ফলাফলের দীর্ঘ ইতিহাস। দেখা গেছে অধিকাংশ রোগেই নির্দিষ্ট কয়েক রকমের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা করা যায়। প্রশ্ন হ'ল,তাহলে এতো হাজার হাজার নামে হাজার হাজার রকমের ওষুধ বাজারে ঘুরপাক খায় কেনো?এর পেছনে আছে লাগাম ছাড়া মুনাফার নির্ভেজাল বাণিজ্য। তা সত্বেও ওষুধ আমাদের খেতে হয়, তেমনই রোগ প্রতিরোধে কিছু কিছু ক্ষেত্রে টিকাও নিতে হয়।
কোনো রোগে দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত ওষুধ ব্যবহারের ফলেও রোগীর তীব্র প্রতিক্রিয়া,এমন কি কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুও বিরল বা অস্বাভাবিক নয়। এর পেছনে রোগী ও রোগকে ঘিরে একাধিক পারিপার্শ্বিক কারণ থাকতে পারে। যেমন, রোগীর জীবনযাপনের ধরন,খাদ্যাভ্যাস, খাবারের মান,প্রাকৃতিক পরিবেশ, রোগীর অর্থনৈতিক,সামাজিক পরিস্থিতি ইত্যাদি । এক্ষেত্রে, রোগীর সামগ্রীক স্বাস্থ্যের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও রোগের যাবতীয় ইতিহাস জেনে,সেই মত নির্দিষ্ট মাত্রায় নির্দিষ্ট পরীক্ষিত ওষুধ প্রয়োগ করাই বিজ্ঞানভিত্তিক। অনেক সময় দেখা যায়,কোনো একটি রোগে দীর্ঘদিন ধরে যথেষ্ট সফল এবং কার্যকরভাবে ব্যবহৃত ওষুধ বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়!! তার কারণটাও খুব দুর্বোধ্য নয়। বাণিজ্যিক কারণ ছাড়াও,অন্য কারণ হ'ল,ওষুধটি আর আগের মত কার্যকর নয়। কেন নয়? এখানে থাকে অনেক কারণ। যেমন,ওষুধটির ভুল প্রয়োগ,বহুলব্যবহারে ওষুধটির কার্যকারিতা অধিকাংশ রোগীর শরীরে প্রতিরোধী হয়ে পড়া, রোগীর পারিপার্শ্বিক অবস্থা, জীবন যাপন,খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদির বদল, নানা কারণে ওষুধটির রাসায়নিক রোগীর শরীরে আগের মত সহ্য না হওয়া ইত্যাদি হরেক রকমের কারণ। আরেকটি বড় কারণ হ'ল, দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর ভাবে ব্যবহৃত হওয়ার পাশাপাশি ওষুধটির প্রয়োগক্ষেত্রে কী কী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নতুন করে দেখা দিচ্ছে,কেনো দিচ্ছে ইত্যাদি বিষয়ে নজর রাখা হয়। ফলে অস্বাভাবিক মাত্রায় সমস্যার যথেষ্ট তথ্য পাওয়া গেলে, ওষুধটি অবশেষে বাজার থেকে তুলে নেওয়া হতে পারে।এতক্ষণ যা যা বলার চেষ্টা করলাম সবটাই ওষুধ তৈরি থেকে শুরু করে বাজারজাত করার পর তার ব্যবহার ও বাজার থেকে তুলে নেওয়া পর্যন্ত পুরো প্রকৃয়াটিতে নৈতিকতা আর বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিভঙ্গির কথা। এর বাইরে,আমরা বোধহয় সকলেই জানি যে রোগ,ওষুধ,তার দাম,গুণমান ইত্যাদি নিয়ে অনৈতিকতার বোধহয় শেষ নেই। বাতিল ওষুধ ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া, বাতিল একই ওষুধের সাথে অন্য অপ্রয়োজনীয় উপাদান মিশিয়ে ঘুর পথে বা অসৎ পথে বাজারে আনা, ওষুধ নয় যা,তাকে ওষুধ বলে চালানো,এক শ্রেণির ডাক্তারদের ব্যবহার করে ওষুধ প্রয়োগের নামে অপপ্রয়োগ বা অপ্রয়োজনীয় উপাদানকে ওষুধের প্রেসক্রিপশনে লিখিয়ে নেওয়া ইত্যাদি নিয়ে বলতে গেলে মহাভারত হয়ে যাবে।তাই,এবার মূল প্রসঙ্গে আসা যাক্।
ওষুধ নিয়ে আগের অংশে যা যা বলার চেষ্টা করলাম,তার ভিত্তিতেই প্রতিষেধক নিয়েও বলা যায়। বলা যায় তার নৈতিকতা,অনৈতিকতা,বিজ্ঞান অবিজ্ঞান ছদ্মবিজ্ঞান নিয়েও।বিজ্ঞান ও নৈতিকতার দিকটি হ'ল, 'রোগ প্রতিরোধে ভ্যাকসিনের ব্যবহার অবৈজ্ঞানিক' এটা বলা সত্যিই বিজ্ঞানমনস্কতার পরিচয় নয়। তবে এটুকু বললেই নটে গাছটা মুড়োয় না। বরং এখানেই আসলে শুরু।
একটা সময় ছিলো যখন বলা যেতো বিভিন্ন দেশের সরকারগুলো যতটা না স্বাস্থ্য বাণিজ্য নিয়ে ভাবতো,তার চাইতে অনেক বেশি ভাবতো জনস্বাস্থ্যের জনকল্যাণমূখী পরিকল্পনা নিয়ে। ওষুধ বা প্রতিষেধক নিয়ে মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণা'র মূল লক্ষ্যও ছিলো মূলত রোগ মুক্তি বা রোগ প্রতিরোধ করা।মানুষের কল্যাণ করা। এখনকার মত উন্নততর প্রযুক্তির অভাবও ছিলো তখন। অথবা জনস্বাস্থ্য যে যে বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে, যেমন শুদ্ধ পেয় জল,দূষণমুক্ত বাতাস,পুষ্টিকর খাদ্য, সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থা পরিচ্ছন্ন ঘর গেরোস্থালি ইত্যাদির পরিপূর্ণ সুব্যাবস্থার অভাব থাকলেও,জনস্বাস্থ্যের এই মৌলিক ভাবনাগুলো নিয়ে রাষ্ট্রের পরিকল্পনাকারীদের ভাবতে হ'ত অনেক বেশি। সেই জায়গায় এখন প্রযুক্তির প্রভূত অগ্রগতি হয়েছে। কিন্তু, প্রযুক্তি ও পরিকল্পনাগুলোর মূল লক্ষ্য হয়ে উঠেছে মুনাফা এবং মুনাফা আর বাজার। অতএব,আর সবকিছুর মত,জনস্বাস্থ্যও পুরোপুরি স্বাস্থ্য বাণিজ্যে পরিণত হয়েছে। আর এই জনবিরোধী জনস্বাস্থ্যনীতিই হয়ে উঠেছে জনগণের ওপর স্বাস্থ্যের নামে দমনপীড়নের হাতিয়ার। এমন কি জনস্বাস্থ্যের সংজ্ঞাও পালটে গিয়ে মূলত গণচিকিৎসায় পর্যবসিত হয়েছে!!পরিবর্তিত ব্যবস্থায় স্বাস্থ্যসুরক্ষার কথা উঠলে খাদ্যসুরক্ষা,শুদ্ধ পেয় জল, দুষণমুক্ত বাতাস,নিকাশী ব্যবস্থা, মাথার ওপর ছাদ, প্রয়োজনীয় আর্থিক স্বাবলম্বিতা ইত্যাদির কথা চাপা পড়ে যায়। লেখা থাকে শুধু কাগজের পাতায়। দাপিয়ে বেড়ায় কেবল ওষুধ আর প্রতিষেধকের দৌরাত্ম্য!!সারা জীবনে ১০০ টাকার পুষ্টিকর খাবার জোটেনা যার,তাকে বাধ্যতামূলকভাবে একলক্ষ টাকার ওষুধ আর প্রতিষেধক নিতে হয়!! অন্যদিকে,যদি চিকিৎসার স্বার্থেই ভাবি,তবু এ প্রশ্ন এসেই পড়ে যে, হাম,ডিপথেরিয়ার প্রতিষেধক ,গুটি বসন্তের টিকা বা জলাতঙ্কের টিকা ইত্যাদি আবিষ্কার বা গবেষণার তাগিদ কি কেবল মাত্র বাণিজ্যিক 'সাফল্যে'র কথা ভেবেই হয়েছিলো? মনে হয় না! ম্যালেরিয়ার ওষুধ, ও.আর.এস আবিষ্কার কি কেবল বাণিজ্যিক লাভের লোভেই করা হয়েছিলো? না কি অসুস্থ মানুষের মঙ্গলের কথা ভেবেই? তখন সীমাবদ্ধতাও অবশ্যই ছিলো। তা সত্বেও বলা যায়,পরিবেশ,স্বাস্থ্য ইত্যাদি নানা বিষয়ে কেবল মাত্র কিছু মানুষের লাগামহীন মুনাফার জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ওপর আগ্রাসী আধিপত্যের বাসনা ছিল না।
সামগ্রীকভাবে এমন একটা ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখেই ওষুধ বা ভ্যাকসিন, এর প্রয়োগ,ক্রিয়া পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইত্যাদি ভাবলেই অনেক সত্যিই সামনে এসে পড়বে। এরকম ব্যবস্থায় প্রতিটি গবেষণাই যখন পরিচালিত হয় বাণিজ্য ও বাজারের লক্ষ্যে,তখন খদ্দের তৈরি করার প্রয়োজনও অনিবার্য হয়ে পরে। তার জন্য চাই লাগাতার প্রচার আর প্রচারের জৌলুস। প্রয়োজন হয়,কখনো বিজ্ঞানীদের,কখনো চিকিৎসকদের সম্পর্কে মিথ তৈরি করে খদ্দের(রোগী)কে প্রভাবিত করার চেষ্টা। বিজ্ঞানে রাষ্ট্রীয় এবং অতিরাষ্ট্রীয় 'সেনসরশিপ' এই নির্মম ব্যবস্থার সাম্প্রতিকতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। আজকের 'স্টাডি রিপোর্ট' কাল বদলে যেতেই পারে। এটা বিজ্ঞানের নিয়মেই পড়ে। কিন্তু, আজকের রিপোর্টকেই সঠিক বলে যদি ধরেও নিই,তবে বিগত দিনের ভুল বা অসম্পূর্ণ স্টাডি রিপোর্টের শিকার যাঁরা হয়েছিলেন তার ক্ষতিপূরণের দায় কে নেবেন? এখানেও প্রশ্ন ওঠে,ঠিক কজনের মধ্যে,কীভাবে স্টাডি করা হয়েছিলো,কারণ বহু অনথিভুক্ত জন এই স্টাডির বাইরে থাকতেই পারেন। তাই বলা যায় শুধুমাত্র কোনো 'স্টাডি রিপোর্ট'ই বিজ্ঞানের তকমা দিয়ে কারুর ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না,বলপূর্বক তো নয়ই।
তবুও বলব,প্রশ্নটা রোগ প্রতিরোধ,রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার মত পরিস্থিতি তৈরিতে ভ্যাকসিনের ব্যবহারের বিরোধীতা করার প্রশ্ন নয়,প্রশ্ন হ'ল, ওষুধই হোক বা ভ্যাক্সিন,সেগুলোকে গুণমানে ওষুধ বা ভ্যাকসিনের উপযুক্ততার প্রমাণ দিতে হয়।
প্রথম থেকেই,কোভিশিল্ডের ক্ষেত্রে অন্তত বেশ কয়েক ধরনের কারচুপি ছিলো। প্রধানত, এই ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পূর্ণ করেনি, ক্লিনিকাল ট্রায়াল সংক্রান্ত যে নৈতিকতা পালন করতে হয়,তা ও অস্বীকার করা হয়েছে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সংক্রান্ত তথ্য 'বিশ্ব স্বাস্থ্য বাণিজ্য সংস্থা' 'WHTO'(যাকে কেউ কেউ WHO বলে জানেন) এর বাজারি মদতে টিকা গ্রহীতাদের কাছে গোপন রাখা হয়েছিলো, বিশ্বজোড়া কর্পোরেট পুঁজির মদতপুষ্ট 'WHTO' এর 'ইমারজেন্সি অথরাইজেশন' এর নামে যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই অবৈজ্ঞানিকভাবে গণটিকাকরণের নামে বকলমে সমস্ত দায় দায়িত্ব এড়িয়ে কার্যত,গণট্রায়ালের ছাড় আদায় করা হয়েছিলো, এ দেশে কোটি কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে 'রোগ প্রতিরোধ' এর নামে ভ্যাকসিন পণ্য বিক্রির বাজার তৈরিতে জনপ্রতিনিধিদের ব্যবহার করা হয়েছিলো। এর পরও আর কী কী কারচুপি কোথায় ঘাপটি মেরে আছে,কে জানে!! এক কথায় পুরো ক্লিনিক্যাল বিষয়টিতেই ছিল বিস্তর অস্বচ্ছতা।
তাই শুধুমাত্র 'বিরল ক্ষেত্রে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া' বললেই বিষয়টা লঘু হয়ে যায় না। যা এখনও অনেকেই বলে চলেছেন। সেই তিনি চিকিৎসক হোন বা অন্য কেউ।এই 'বিরল' এর আড়ালে আরো কোনো 'বিড়াল' কোনো দিন ঝোলা থেকে বেরিয়ে পড়বে কি না,কে বলতে পারে?
কেউ কেউ বলছেন গণটিকাকরণ পর্বের পর আকস্মিক হৃদরোগে মৃত্যু,বিশেষ করে অকাল মৃত্যু,এমন কি খেলোয়াড় থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ,যাঁদের পেশাগত চর্চাই হচ্ছে নিজেকে যথা সম্ভব 'ফিট' রাখা,সেই সব মানুষের মৃত্যু যে কোভিড টিকাকরণের জন্যই হয়েছে,সেটা কীভাবে প্রমাণ হবে?আপাতভাবে এই প্রশ্নের একটা যৌক্তিকতা আছে ধরে নিয়েও কয়েকটি কথা এখানে বলা দরকার। প্রথমত, কোভিশিল্ড প্রস্তুতকারীরা ভ্যাকসিনটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালই সম্পূর্ণ করেনি এবং ট্রায়ালের ফ্যাক্টশিট পুরোপুরি প্রকাশ করেনি। যেটুকু তথ্য প্রকাশ করেছিলো, তাও সেই মামলার চাপে সামনে এনেছে বা আনতে বাধ্য হয়েছে। এখন তো আবার জানা যাচ্ছে,ঐ সব 'বিরল' পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা নাকি চিকিৎসক মহল,'বিশেষজ্ঞ' মহল আগেই জানতেন!! এখানে তো আরোও গুরুতর প্রশ্ন ওঠে। তাহলে ঐ চিকিৎসকবৃন্দ বা 'বিশেষজ্ঞবৃন্দ' টিকা গ্রহীতাদের সেগুলো অবগত করেননি কেনো? বা,সর্বসমক্ষে প্রচারে আনেননি কেনো?
দ্বিতীয়ত, অন্তত এদেশে যখন টিকা পরবর্তী মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসছে, মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন,তখন চিকিৎসক গবেষক সরকার একযোগে 'জীবন যাপনের অসঙ্গতির কারনে ঐ মৃত্যু' তত্ত্বের কথা সোচ্চারে বলতে শুরু করেছেন।এ যেনো সেই আগে থেকে তৈরি করা উত্তর দেখে অঙ্ক মেলানো!! কার্যত,তত্ত্বটি এমন এক অর্ধসত্য,যা মিথ্যের থেকেও ভয়ঙ্কর। জীবন যাপনের অসুখ আগেও ছিলো এখনো আছে,এই সংস্কৃতিতে ভবিষ্যতেও থাকবে। তার জন্যই কি টিকা পরবর্তী এক দেড় বছরের মধ্যে হৃদরোগের রোগীর সংখ্যা কোথাও কোথাও কয়েকশো গুণ পর্যন্ত বেড়েছে??!! বলাবাহুল্য বহু ক্ষেত্রে আকস্মিক মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে!! "ঠাকুরঘরে কে?" প্রশ্ন করলেই যাঁরা "আমি কলা খাইনি" বলে সাফাই দিয়েছেন,তাঁরা টিকা পরবর্তী অকালে আকস্মিক মৃত্যুর অন্যতম কারণ যে অপরীক্ষিত টিকার সাহায্যে অবৈজ্ঞানিক এবং অনৈতিক বাধ্যতামূলক টিকাকরণও হতে পারে,সে বিষয়ে যথাযথ তথ্য প্রকাশ করার সদিচ্ছা দেখাবেন, বা তার জন্য অন্তত দাবি জানাবেন,এটা কি দিবা স্বপ্ন নয়?? কিন্তু,বৈজ্ঞানিক তথ্য স্বচ্ছতার সাথে নির্মাণ ও প্রচার করা বিজ্ঞানের স্বার্থেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও অতি আবশ্যক। কিন্তু, অন্তত এই দেশে কোভিড টিকাকরণের তথ্য প্রচারের নমুনা দেখলেই খুব সহজেই বোঝা যায় ,এর উদ্দেশ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সুফল মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া নয়,বরং মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করে দমনপীড়নই এক ও একমাত্র উদ্দেশ্য। একাধিক 'যুক্তিপূর্ণ' চিকিৎসক ও দীর্ঘদিনের 'জনস্বাস্থ্য কর্মী' বলে বন্দিত,অম্লানবদনে প্রকাশ্যে বলছেন মানুষজন না কি অত্যন্ত উৎসাহের সাথে দলে দলে ভ্যাকসিন নিতে যাচ্ছেন। এই তথ্যের বিকৃতিটা কোথায়,সেই সময়কালের প্রায় প্রত্যেকেই বুঝতে পারবেন। এটা ভয়ঙ্কর এই কারণেই যে,তাঁদের ভাষ্য সমাজে গভীর ছাপ রাখে। তাই,চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্যকর্মী,বিজ্ঞানী বা বিজ্ঞান কর্মী যিনিই হোন না কেনো,তিনি কী বলছেন,কেনো বলছেন,সেটা যেমন তলিয়ে ভাবা উচিত, তেমনই,কার বা কাদের স্বার্থে বলছেন,জেনে বলছেন,না কি, না জেনে, না কি কোনো আপ্তবাক্যের মতই কিছু বলছেন,ইত্যাদি সম্পর্কে তলিয়ে ভাবাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।আমার মতে তাঁদের দেওয়া বিকৃত তথ্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে প্রথমেই বলতে হয় ,অধিকাংশ মানুষ প্রশাসনের চাপে পড়ে ভ্যাকসিন নিয়েছেন, কর্মস্থলে হয়রানির ভয়ে,ভ্যাকসিনটির বিষয়ে কিচ্ছু না জেনে,প্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে। এমন কি পাড়া প্রতিবেশিদের চাপে বহু মানুষ ভ্যাকসিন নিয়েছেন। অধিকাংশই স্বেচ্ছায় নয়। তাঁদের অনেকেই জানেনও না ঠিক কী ভ্যাকসিন,কতটা ডোজে তাঁরা নিয়েছেন!! এ যেনো সেই,'ভগবান যা করেন, মঙ্গলের জন্যই করেন' গোছের 'আস্থা' রাখার মত ব্যাপার!!যাঁরা নেননি তাঁরাও যে সবাই সব জেনে বুঝেই নেন নি,তা যেমন নয়,আবার,এটাও ঘটনা,তার আগে কোভিডকে ঘিরে যে ধরণের নিপীড়ন জনগণকে সইতে হয়েছে,তাতেই বহু মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়েই মুখ ফিরিয়েছিলেন। এসব উপলব্ধি করার চেষ্টা না করেই এই বিকৃত তথ্য তাঁরা ছড়িয়েছেন,এটা মানা যথেষ্ট অসুবিধাজনক। যদিও,সেই সময়ের চলতি হাওয়ার স্রোতে ভেসে থাকাকেই তাঁরা 'বিজ্ঞান' বলে প্রচার করেছেন। তখন এঁদের তৈরি হরেক রকম সংগঠনের পালের হাওয়াই ছিলো ঐ ন্যারেটিভ। তাঁদের অনেকেই ফ্যাসিস্ট সরকারী প্রশাসনের মতই স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিলেন। কোনো পাল্টা যুক্তি,প্রশ্ন তাঁরা সইতেই পারতেন না। এমন কি প্রশ্নকর্তাদের বিরুদ্ধে ঐ তাঁরাই ব্যক্তি কুৎসার আশ্রয় নিতেও ছাড়েননি!!এই অসহনশীলতাই তখন তাঁদের কাছে 'বিজ্ঞান'!! "আমরা বিজ্ঞানীদের সাথে আলোচনা করেই সব করেছি" এই ছিলো তাঁদের ভাষ্য!! বুঝতে অসুবিধা নেই,আসলে তাঁরা কোন্ 'বিজ্ঞানী'দের সাথে কোন্ 'বিজ্ঞান' নিয়ে আলোচনা করেছিলেন!!
এইরকম একটা আবহে যথাযথ তথ্য পাওয়ার আশা নিছকই দুরাশা নয় কি? যেখানে প্রশাসন অপরীক্ষিত ভ্যাকসিন নির্বিচারে প্রোমোট করার জন্য ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারীদের কাছ থেকে ঘুষ খায়, সেখানে অপরীক্ষিত, মৃত্যুর ঝুঁকিপূর্ণ ভ্যাকসিনে মৃত্যুর সংখ্যা সংক্রান্ত প্রকৃত তথ্য আমরা পাবো,এটা কি কেউ আশা করতে পারি? পাড়ায় পাড়ায়,পথে ঘাটে বহু মৃত্যুই তথ্যের বাইরে থেকে গেছেন!! কোনোও সমীক্ষাকারীই তাঁদের হদিসই জানে না।
আবার,প্রচারের মূল সুর হল 'বিরল' ঘটনা শুধু মৃত্যু!! শুধু মৃত্যু কেনো? টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতে শুধু মৃত্যুই কি হয়?স্বল্পকালীন বা দীর্ঘকালীন 'ইনজুরি' বা ক্ষতও হতে পারে। বিশেষ করে 'জেনেটিক্যালি মডিফায়েড' ভ্যাকসিন, ওষুধ এমন কি খাদ্য থেকেও যেমন হতে পারে,, তেমনই। ওষুধ বা ভ্যাকসিন গবেষণাগারের পরিকাঠামো থেকে বেরিয়ে যখন সরাসরি মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো হয়,তখন,মানুষের শরীরে সব সময় তাৎক্ষণিক মারাত্মক কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা নাও দেখা যেতে পারে। অনেক সময়ই দীর্ঘ মেয়াদে তা শরীরের কোথায় কোথায়,সাময়িক বা স্থায়ী কী ইনজুরি ঘটাতে পারে,তা বিজ্ঞানীরাও হলফ করে বলতে পারেন না। সেটার জন্যই চাই অনবরত নজরদারি। কিন্তু বাস্তব হ'ল এই, বহু ক্ষেত্রেই কোটি কোটি মানুষের শরীরে ঘটে যাওয়া স্থায়ী বা অস্থায়ী ক্ষয়ক্ষতি নজরদারির আওতায়ই আসে না। কারণ,বহু মানুষ ঐসব ক্ষয়ক্ষতি নিয়েই ধুঁকতে ধুঁকতেই দিনাতিপাত করেন। ফলে এই রকম অসম্পূর্ণ তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া কর্পোরেট বিজ্ঞান ছাড়া যথার্থ বিজ্ঞানের পক্ষে সম্ভবই নয়। রোগী ও চিকিৎসকের মধ্যে সংযোগ না হলে,রোগী যেমন রোগের হদিস পান না, তেমনই চিকিৎসকও কোন্ সময়ে,কী কী ধরণের শারীরিক সমস্যা নিয়ে রোগীরা আসছেন বা কোন্ কোন্ সময়ে,কী কী রোগের প্রাদুর্ভাব হচ্ছে সেটি বুঝতে পারেন না। প্রকৃত তথ্যের বা যতটা বেশি সম্ভব সঠিক তথ্য পাওয়ার এটা একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। তাই,বলা যায় ব্যাপক তথ্যের ভিত্তি ছাড়া সবথেকে সঠিক বা তার কাছাকাছি সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়া খুবই কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। অতএব বাণিজ্যিক ও আধিপত্যবাদিতার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত বা নির্মাণ করা তথ্য সাহায্যে তৈরি 'বৈজ্ঞানিক' জ্ঞানের কোনোও মূল্য আছে বলে মনে করি না। তবুও, এতো কিছুর ফাঁক গলে, 'সামান্য' কজনেরই কোভিড টিকায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের দাবিও ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী,ও প্রচারকারী সরকার পুরোপুরি নস্যাৎ করেছে। আমাদের দেশের সরকার তো আরেক নজির তৈরি করেছে! ঘোষণা করেছে ভ্যাকসিন নিতে কাউকে না কি বাধ্য করা হয়নি!! তাই তারা ক্ষতিপূরণের প্রক্রিয়ায় যেতেই অস্বীকার করেছে!! অথচ,'ভ্যাকসিন নেওয়া কেনো উচিত' নিয়ে প্রচারের নামে এবং 'সতর্কতা'র নামে চিকিৎসক,বহু তথাকথিত 'বিজ্ঞানকর্মী', সহনাগরিকদের পরস্পরের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করে, ভ্যাকসিন না নিলে জনগণের সমস্ত মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিয়ে ঘুরপথে ভ্যাকসিনেশন 'বাধ্যতামূলক' করে তুলেছিলো!!
অন্য দেশের কথা জানি না। অন্তত এ দেশে একই সাথে 'ইনফর্মড্ কনসেন্ট'( ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নেওয়া স্বেচ্ছাসেবক,রোগ চিকিৎসা বা প্রতিরোধ এর নামে কারুর শরীরে কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন প্রয়োগের আগে ঐ ওষুধ বা ভ্যাকসিন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে তাঁর সম্মতি নেওয়া) কথাটাই অভিধান থেকে মুছে ফেলা হ'ল!! আরোও নক্কারজনক হ'ল, দীর্ঘ দিনের বহু তথাকথিত 'যুক্তিপূর্ণ' জনস্বাস্থ্যবিদ,তা তাঁরা কর্মীই হোন বা চিকিৎসক,যাঁরা এতো দিন ধরে এই 'ইনফর্মড কনসেন্ট' কথা মানুষকে বলতেন,এর গুরুত্বের কথা বোঝাতেন,তাঁরাই কোনো এক 'জাদুমন্ত্র'বলে টিকা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে,সে সব কথা নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন!! এই রাতারাতি ভোলবদলে অবশ্য এখন আর বিস্মিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সবই 'ওপেন সিক্রেট'!!
এই অন্ধকার সময়ের আরেক বৈশিষ্ট্য হ'ল 'তথ্য সন্ত্রাস'!! পরিবেশিত তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানেই 'বিজ্ঞান বিরোধী' দেশদ্রোহী বলে চিহ্নিত হওয়া। তথ্য নিয়ন্ত্রিত হয় কর্তার ইচ্ছায় ও কায়দায়। অন্তত,এদেশে তথ্য গোপন করা বা না দেওয়া তো রেওয়াজই হয়ে গেছে। রোগ বা সংক্রমণকে ঘিরে কর্পোরেটীয় চিকিৎসা আর দাওয়াই সংক্রান্ত তথ্য বাণিজ্যের স্বার্থ ছেড়ে মানুষের মঙ্গলের স্বার্থে প্রকাশ করা হবে,এমন 'স্বর্গরাজ্য' পৃথিবীতে বিরাজ করছে,এ ও নাকি মানতে হবে!!
এছাড়াও,কয়েককটা কথা না বললেই নয়। একটা ভাষ্য খুব প্রচারিত যে, কোভিড ভ্যাকসিন দিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ বাঁচানো গেছে। এই তত্ত্ব নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ,মনে রাখতে হবে,টিকাকরণ শুরুর আগেই প্রায় ৭০% মানুষের মধ্যেই 'হার্ড ইমিউনিটি' তৈরি হয়ে গেছে। তাই,ভ্যাকসিন নিয়েই তাঁরা বেঁচে গেছেন,বাকিরা মারা গেছেন বা সিভিয়ারিটির শিকার হয়েছেন বলা যায় না।এসব জানতে গেলে বিস্তারিত তথ্যের ভিত্তিতে বিশ্লেষণ দরকার। শুধু নামতার নিয়মে তথ্য নির্মাণে মানুষের সম্মতি আদায় করা যায় না। বহু মানুষ প্যানিকের শিকার হয়ে হাসপাতালমুখী হয়েছেন,বরং সেখানে কোন্ ওষুধ প্রয়োগে কী চিকিৎসা হয়েছে,তার কতটা নথি রুগী ও তার পরিবার জানেন,সে বিষয়ে কোন্ স্টাডি হয়েছে,জানা যাবে কী করে?ভ্যাকসিনের সাফল্য তো অনেক দুরের ব্যাপার,বরং যাঁরা ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন বলে বেঁচে গিয়েছিলেন বলে দাবি করছেন,তাঁরা এটা বলছেন না যে,ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও অনেকেই মারা গেছেন। এর মধ্যে কতজনের মৃত্যু 'স্টাডি'র ক্ষেত্রে নথিভুক্ত হয়েছে?? দরকার ছিল তুলনামুলক বিস্তারিত তথ্য যাচাই।
দ্বিতীয়ত, বিজ্ঞানের নিয়মেই,যত বেশি মানুষ সংক্রামিত হবেন,তত বেশি মানুষের মধ্যেই 'হার্ড ইমিউনিটি' তৈরি হয়ে যায়। অতএব, এই টিকা নিয়ে 'বেঁচে যাওয়া' মানুষেরা টিকা নেওয়ার জন্যই বেঁচে গেছেন,না কি,ইতিমধ্যেই 'হার্ড ইমিউনিটি' গড়ে ওঠাতে টিকার প্রভাব ছাড়াই বেঁচে গেছেন,এই নিয়েও কোনো স্টাডি কোথাও হয়েছিলো কি না জানা নেই। হয়ে থাকলে,জানতে আগ্রহী। না হলে,কেনো হয়নি,সেটা জানার আগ্রহ তো থাকলই। আর সিভিয়ারিটির প্রশ্নে জানতে হবে,ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্যই তার সিভিয়ারিটি বেড়েছিলো কি না এবং সেই সিভিয়ারিটির চিকিৎসা কী হয়েছিল? সিভিয়ারিটির চিকিৎসায়ই তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন বা সিভিয়ারিটি থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন কি না।
আর,এই 'বেঁচে যাওয়া' তত্ত্বের গুরুত্বই বা কী,যদি ভ্যাকসিন পরবর্তীতেও মানুষকে নানা ভ্যাকসিন জনিত জটিলতা নিয়ে ভুগতে হয়,বা,প্রাণ হারাতে হয়?
আসলে,সংখ্যাতত্ত্ব ও তথ্য বিশ্লেষণ যদি পূর্বনির্ধারিত ভাষ্যের সাথে সাযুজ্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যেই করা হয়,তাহলে,তা থেকে সঠিক উত্তর পাওয়া অসম্ভব।অনেকটা আগেই বলছি,সেই উত্তরমালা দেখে অংক মেলানোর মতই।
এছাড়াও কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ও আলোচনার দাবি রাখে। যেমন,
**'বিরল' পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা নিয়ে যতটা কথা হচ্ছে, কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনটি সম্পর্কে নিয়মমাফিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে কি হয়নি তা নিয়ে কিন্তু মূল ধারার সংবাদ মাধ্যমে তেমন কিছু আলোচনা হচ্ছে না।
**ভ্যাকসিনটি পৃথিবীর যে যে দেশের মানুষের ওপর প্রয়োগ হয়েছে,সেই সেই দেশে একই রকম মানদন্ড মেনে চলা হয়েছে কি?? হলে বা না হলে তার কারণ।
**এদেশে না হয় ইলেকট্রোরাল বন্ড ও নানা রকম বেনামি উৎস থেকে ঘুষ দিয়ে ভ্যাকসিনটি ব্যাপক বিক্রি করা হয়, কিন্তু,ইয়োরোপ,আমেরিকা,আফ্রিকা ইত্যাদি দেশে কিসের বিনিময়ে এই ভ্যাকসিন বাজারে এলো? সেখানেও এর অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিলো কি না।
**আর কোন্ কোন্ দেশে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত কারণে ক্ষতিপুরণের মামলা হয়েছে?
**কোভিশিল্ড ছাড়াও অন্য কোভিড ভ্যাকসিন গুলো নিয়ে রিপোর্ট কী?
তাই আমার মতে:
১) শুধু কোভিশিল্ড কেলেঙ্কারির ভয়ে সব ধরণের ভ্যাকসিন বয়কট করার মানসিকতা অবৈজ্ঞানিক। যদিও সবধরণের ভ্যাকসিন নিয়েই এই মুহুর্তে যথাযথ বিস্তারিত বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান আবার নতুন করে করার দাবি তোলা দরকার।
২) কোভিড ভ্যাকসিন কোভিশিল্ড যথাযথ নিয়ম ও বিজ্ঞানভিত্তিক মানদণ্ড মেনে 'ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল' হয়েছে কি না সেই সংক্রান্ত সম্পূর্ণ নথি পাবলিক ডোমেইনে প্রকাশ করা হয়নি।
৩) ল্যাবোরেটারির বাইরে আনার পর মানুষের শরীরে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে অন্তত 'ইনফর্মড কনসেন্ট' নেওয়া হয়নি।
8) ভ্যাকসিন পরবর্তী শারীরিক জটিলতা এবং মৃত্যুর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে বা 'স্টাডি রিপোর্ট' তৈরি করা হয়নি। বহু তথ্য অনথিভুক্তই থেকে গেছে। ফলে,অসম্পূর্ণ 'স্টাডি রিপোর্ট' অবৈজ্ঞানিক।
৫) সংক্রমণের অজুহাতে অসংক্রামক রোগের বা জটিল কোমর্বিডিটির চিকিৎসা সরকারিভাবে বন্ধ করা হয়েছিলো। এর ফলেও অনেকে ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও প্রাণ হারিয়েছেন।
৬) ভ্যাকসিন পর্বের পর রক্তের, মস্তিষ্কের,শ্বাসতন্ত্রের, হৃদপিন্ডের নানা জটিলতায় কোভিড ভ্যাকসিনের প্রভাব আছে কি না,তা নিয়ে গবেষণা অব্যাহত রাখতে হবে। এই পর্বে উক্ত জটিলতায় প্রতিটি মৃত্যুরই ময়না তদন্ত করতে হবে।
৭) ভ্যাকসিন উৎপাদন থেকে শুরু করে তার প্রয়োগ নিয়ে অন্য মতকে 'সেনসর' করা হয়েছে। যা বিজ্ঞান বিরোধী।
৮) এই মুহূর্তে যত রকমের নতুন ভ্যাকসিন প্রয়োগের কথা উঠবে,তা নিয়েও আমাদের বেশি বেশি করে প্রশ্ন তুলতে হবে।