আমরা এখন কোভিড অতিমারীর মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। প্রথম ঢেউ পেরিয়েছি, দ্বিতীয় ঢেউও। সঙ্গে প্রথম এবং দ্বিতীয় ঘরবন্দীর (লকডাউনের) ঢেউ, নানান দাবিতে জন-আন্দোলনে রাশ পরাবার ঢেউ। এবং কর্মচ্যূতির ঢেউ। দুর্নীতির ঢেউ। প্রথম এবং দ্বিতীয় ঢেউ আসলে দেশ বিক্রীর ঢেউ, দেশের সম্পদ বিদেশী বেসরকারী ধনী ব্যবসায়ী সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার ঢেউ। সামনে নাকি তৃতীয়টা আসছে।
অনেকে বলেন, এই ঢেউগুলো শুরু হওয়ার আগে, তলে তলে নাকি অনেক কর্মকাণ্ড চলছিল। সেটা কীরকম? খোঁজ করতে গিয়ে আমরা যা পেলাম সেগুলো তো আমাদের কাছে মণিমুক্তোর সমান। কেমন মণি, কেমন মুক্তো তা বিচারের ভার পাঠকদের ওপরই ছাড়তে চাই; তাই সরাসরি ঘটনাবলীর বিবরণে ঢুকে পড়ি।
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতিমারীর একটা সংজ্ঞা দিয়েছিল; তাতে ছিল কয়েকটা শর্ত –
১। সংক্রমণের কারণ হবে এমন এক নতুন ভাইরাস যাকে প্রতিরোধ করার মতো শক্তি আমাদের শরীরে নেই
২। সেই সংক্রমণ একাধিক মহাদেশে অথবা এক মহাদেশের একাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়বে
৩। সংক্রমণ হার তীব্র
৪। সংক্রমণের কারণে মৃত্যুর হারও হবে তীব্র।
কিন্তু ২০০৯ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অতিমারীর সংজ্ঞায় ৩ এবং ৪ নম্বর শর্ত বাদ দিয়ে দেয়। (পরে এ-বিষয়ে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা জানায় যে, তেমন কোনও ‘সংজ্ঞা’ তারা দেয়নি, তারা শুধু অতিমারীর জন্য প্রস্তুতির কথা বলেছিল! জনস্বাস্থ্য নিয়ে যারা আন্দোলন চালায়, বিশেষ করে ইউরোপের বিজ্ঞানীরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই বক্তব্য মেনে নেননি। বরং তাঁরা বলেছিলেন, এগুলো খামখেয়ালিপনা এবং দ্বিচারিতা।) - রকফেলার ফাউন্ডেশন, ২০১০ সালে আগামীর জন্য একটা দিশা তৈরী করে। এই দিশা বা ডকুমেন্টে আগামী পৃথিবীতে চার ধরনের দৃশ্যকল্পের কথা বলে যার মধ্যে একটা হল, কোনো প্যানডেমিক হলে, কীভাবে পৃথিবীতে ‘নিউ নরম্যাল’ নিয়ে আসতে হবে। এটাকে অনেকেই পৃথিবীর উচ্চকোটির মানুষের একটা ম্যানুয়াল বা কার্য্যপ্রণালীর বই হিসেবে দেখে। এই বইটির নাম Scenarios for the Future of Technology and International Development। প্যানডেমিকের সময়ে যে পদ্ধতিটি নেওয়ার সুপারিশ করা হয় তাকে তারা নাম দিয়েছিল “Lockstep”!
- ২০১০ সালে হলিউডে তৈরী হয় সার্স মহামারী নিয়ে একটা হরর ফিল্ম “দ্য ডেড প্লেগ”। এই ফিল্মে করোনা ভাইরাসের মহামারীর পূর্বাভাস ছিল এবং তার চিকিৎসা হিসেবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, ওষুধটির কথাও ছিল।
- ২০১১ সালে হলিউডে তৈরী হয় আর একটা ফিল্ম “কন্টাজিয়ন” যা আন্তর্জাতিক স্তরে খ্যাতি পেয়েছিল, বা এও বলা যায় যে এটাকে আন্তর্জাতিক স্তরে বিরাট প্রচার দেওয়া হয়েছিল। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের এই ফিল্মটি প্রথম প্রদর্শিত হয় ৬৮তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উতসবে, ইতালীর ভেনিসে। এটা ছিল কোভিড প্যানডেমিক পরিস্থিতির প্রায় আগাম দৃশ্যকল্প।
- TED (Technology, Entertainment, Design) নামে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে একটা সংগঠন আছে যার বর্তমান কর্ণধার হলেন ক্রিস এ্যন্ডারসন। এই সংগঠন খ্যাতিমান (এবং অখ্যাত) ব্যক্তিদের নতুন নতুন চিন্তাভাবনাকে নিয়ে বক্তৃতার আয়োজন করে এবং সেই বক্তৃতার ভিডিও অন্তর্জালের মাধ্যমে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়। এই বক্তৃতামালার নাম হল TED Talks, এবং ২০১৫ সালের মার্চ মাসে এরকমই এক বক্তৃতায় বক্তা ছিলেন বিল গেটস, মাইক্রোসফটের কর্ণধার। তার বক্তৃতার বিষয় ছিল পৃথিবীর আগামী মহামারী। বক্তব্য ছিল, ওনাদের অর্থাৎ লগ্নীকারীদের আগামী দিনে যুদ্ধাস্ত্রের ওপরে লগ্নি না করে জীবাণু সংক্রমণের বিষয়ে লগ্নি করা উচিত। তাতে আগামী মহামারীর জন্য আমরা প্রস্তুত থাকতে পারি। বক্তার পিছনে স্ক্রিনে চলছিল যে ভিডিওটা তাতে দেখাচ্ছিল একটা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের ছবি।[১]
- জুলাই, ২০১৫ – New England Journal of Medicine-এ, Wellcome Trust এর একজন ডিরেক্টর জেরেমি ফারার, আমেরিকার ডাক্তার স্ট্যানলি এ প্লটকিন, এবং আমেরিকার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ আদেল মাহমুদ, এই তিনজনের নামে একটি লেখা বেরোয় - Establishing a Global Vaccine Development Fund। এই লেখার সূত্র ধরে আলোচনা হয় ২০১৬ সালে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে World Economic Forum-এ। World Economic Forum হল বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী পুঁজির আন্তর্জাতিক নীতি নির্ধারক মঞ্চ।
- জানুয়ারী ২০১৭ - দাভোসের এই World Economic Forum-এর মঞ্চেই ঘোষিত হয় একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা তৈরী হওয়ার কথা। নাম তার Coalition for Epidemic Preparedness Innovations। প্রতিষ্ঠাতা এবং লগ্নিকারী (৪৬০ মিলিয়ন ইউ এস ডলার দিয়ে পথ চলা শুরু) সদস্যেরা হলেন Bill and Melinda Gates Foundation, Wellcome Trust, World Economic Forum, এবং নরওয়ে, জাপান, ও জার্মানীর সরকার। লগ্নীকারীদের তালিকায় ছিল Glaxo Smithkline Beecham এর মতো ফার্মা কোম্পানীরাও। পরে এতে যোগদান করে ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়ন, বৃটেন ও ভারতের সরকার। প্রতিষ্ঠার সময়ে Financial Times কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস জানান যে এই সংস্থা তৈরীর অন্যতম মূল উদ্দেশ্য হল কোনও নতুন ভ্যাক্সিন তৈরীর সময়সীমা (গবেষনা থেকে বাজারজাত করা অবধি) দশ বছর থেকে বারো মাসে নামিয়ে আনা[২]। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে WHO এর নির্দেশিকা মেনে কোনও নতুন ওষুধ বাজারে আসতে গেলে সাধারনভাবে দশ থেকে বারো বছর লাগে। সেই নির্দেশিকা এখনও পাল্টায়নি!
- ২০১৮ সালের ২৭শে এপ্রিল, ম্যাসাচুসেটস এর বস্টন শহরে “শ্যাটক বক্তৃতা” দেওয়ার সময়ে বিল গেটস একটি গাণিতিক মডেল এর উল্লেখ করে বলেন যে এর পরে কোনো শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের মহামারী হলে সারা পৃথিবী জুড়ে প্রায় ৩৩ মিলিয়ন মানুষ মারা যাবেন। এই গাণিতিক মডেলটি তৈরী করে Institute of Disease Modelling, যে সংস্থা, বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এর একটি সংস্থা। তিনি এও বলেন যে এই শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ যে ইনফ্লুয়েঞ্জা হবে তার কোনো মানে নেই, সেটা সম্পূর্ণ নতুন কোনো জীবানু হতে পারে। এর বিরুদ্ধে যে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, বিশেষত ভ্যাক্সিন তৈরীর, তিনি তার এক সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেন। আমেরিকার সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন যে অতিমারীর বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতা একমাত্র এই দেশেরই আছে, এবং এই দেশকে এই অতিমারীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি রাখতে হবে। এও বলেন যে এন্টনী ফাউচির সংস্থা, National Institute of Allergy and Infectious Diseases এক নতুন ধরণের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাক্সিন তৈরীর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
- ২০১৮ সালের ২৮শে এপ্রিল, ম্যাসাচুসেটস মেডিকেল সোসাইটি আর নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন একটি ওয়েবিনার এর আয়োজন করে, নাম ছিল “এপিডেমিকস গোয়িং ভাইরালঃ ইনোভেশন ভার্সাস নেচার”। অংশগ্রহণ করেন ইয়োরোপ আমেরিকার নানা বিশ্ববিদ্যালয়, নানা ট্রাস্ট ফান্ড এবং অন্যান্য এন জি ওর প্রতিনিধিরা। আয়োজকদের প্রতিনিধিরা ছাড়াও চেয়ারপার্সনদের মধ্যে ছিলেন গর্ডন এন্ড বেটি মুর ফাউন্ডেশনের প্রতিনিধি হিসেবে হার্ভে ফাইনবার্গ এবং বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের তরফে বিল গেটস[৩]।
- ২০১৮ সালের মে মাসে প্রতিষ্ঠিত হয় Global Preparedness Monitoring Board , বিশ্ব ব্যাংক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তত্ত্বাবধানে।
- ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই বোর্ড রিপোর্ট দেয় শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের মহামারী রোধ করার জন্য সারা বিশ্ব কতটা তৈরী তা নিয়ে। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, সারা বিশ্বকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আপতকালীন অবস্থার জন্য প্রস্তুত থাকতে গেলে, সাতটি জরুরি কাজ করতে হবে। এই সাতটি কাজের বিবরণ বা সাধারনভাবে এই রিপোর্ট পড়লে যেকোনো মানুষ নিঃসন্দেহ হবেন যে, এই মহামারীর বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস সোসাইটি, এদের কাছে নিশ্চয় কোনো ‘দৈববাণী’ ছিল যার ফলে এরা এত নিশ্চিত হতে পারেন যে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের মহামারী আসন্ন। এর ৪ নম্বর কাজটি রিপোর্ট থেকে উদ্ধৃত করে দিলাম। “Countries, donors and multilateral institutions must be prepared for the worst. A rapidly spreading pandemic due to a lethal respiratory pathogen (whether naturally emergent or accidentally or deliberately released) poses additional preparedness requirements. Donors and multilateral institutions must ensure adequate investment in developing innovative vaccines and therapeutics, surge manufacturing capacity, broad-spectrum antivirals and appropriate non-pharmaceutical interventions. All countries must develop a system for immediately sharing genome sequences of any new pathogen for public health purposes along with the means to share limited medical countermeasures across countries.”
- ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আইডি ২০২০ (ID 2020) নামে একটি কোম্পানী, যার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হল, বিল গেটসের মাইক্রোসফট কোম্পানী, যার অন্যতম ঘোষিত উদ্দেশ্য হল সারা পৃথিবীর সব মানুষকে ডিজিটাল ভাবে শনাক্তকরণ[৪], সে একটা গুরুত্বপূর্ন ঘোষনা করে। তারা বলে যে তারা একটা নতুন উদ্যোগ হাতে নিচ্ছে, যাতে ভ্যাক্সিনের মাধ্যমে শিশুদের বায়োমেট্রিক শনাক্তকরন সম্ভব হবে। এই গবেষনাটির আর্থিক ব্যয়ভারের দায় হল বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের।
- ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরেই আইডি ২০২০ কোম্পানী তাদের একটি মিটিঙে ঘোষনা করে যে বাংলাদেশে তারা একটি ডিজিটাল পরিচয়পত্রের উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এই উদ্যোগের মূল উদ্যোগকারী হবে GAVI (Global Alliance for Vaccines and Immunisation)। এই ‘গাভি’র সদস্যরা কারা? বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, UNICEF, WHO, অংশগ্রহণকারী দেশের সরকার, দাতা দেশের সরকার, বিভিন্ন এন জি ও, গবেষনা সংস্থা, ভ্যাক্সিন প্রস্তুতকারী কোম্পানী ইত্যাদি। এই ঘোষনার অনুমোদন শোনা যায় ২০২০ সালের জানুয়ারীতে দাভোসে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ঘোষণায়[৫]। ভ্যাক্সিনের সঙ্গে ডিজিটাল পরিচয়পত্র কি সুন্দর মিশে গেল ছোট্ট একটি ঘোষনায়!
- ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে জনস হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, নাম তার “ইভেন্ট ২০১”[৬]। এই অনুষ্ঠানের বর্ননা করতে গিয়ে একে বলা হয়েছিল এটি একটি উচ্চ স্তরের করোনা ভাইরাস অতিমারীর মতো অবস্থার অনুশীলন - a high level Corona Virus Pandemic Simulation Exercise। এই অনুশীলনে সাহায্যকারী ভূমিকায় ছিল বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, আর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম। অংশগ্রহণকারী হিসেবে ছিল জাতিসংঘ (UN),পৃথিবীর সব বড় ব্যাংক, সব বড় মিডিয়া, সব বড় সরবরাহকারী কোম্পানী, ইত্যাদির প্রতিনিধিরা। এছাড়াও অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম হল জনসন এন্ড জনসন, বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনে অবস্থিত CDC এর প্রতিনিধিবৃন্দ।
- ২০শে নভেম্বর, ২০১৯ – পিরব্রাইট ইন্সটিটিউট নামে একটি গবেষনা সংস্থা, ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়নের পেটেন্ট অফিস থেকে কর্মক্ষমতাহীন (attenuated) করোনা ভাইরাসের ওপর পেটেন্ট লাভ করে। এই পেটেন্টের আবেদনে গবেষনার উদ্দেশ্য হিসেবে বলা হয়েছিল – হাঁস, মুরগী ইত্যাদির শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণকারী এক ধরনের করোনা ভাইরাসের ওপর গবেষনা; কিন্তু পেটেন্ট দেওয়া হয় কোনো বিশেষ করোনা ভাইরাসের ওপর গবেষনার জন্য নয়, পেটেন্ট দেওয়া হয় সাধারনভাবে করোনা ভাইরাসের ওপর। পেটেন্ট সংখ্যা – ১৫৭৫০০৯৩.৫। আবেদনের তারিখ ২৩।০৭।২০১৫। এই ২০১৫ সালের মার্চ মাসে অর্থাৎ ৪ মাস আগেই ছিল বিল গেটসের সেই ভাষণ। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে এই কর্মক্ষমতাহীন ভাইরাস দিয়েই সাধারণত ভ্যাক্সিন তৈরী হয়। এই পিরব্রাইট ইন্সটিটিউট বিল এ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এর থেকে নিয়মিত অর্থ সাহায্য পেয়ে থাকে[৭]।
- ১৯শে ডিসেম্বর ২০১৯ – বিল গেটস টুইট করলেন –“ I am particularly excited about what the next year could mean for one of the best buys for global health: vaccines…”
- করোনা ভাইরাসের প্রথম কেস চীনে ধরা পড়ে ১লা ডিসেম্বর, ২০১৯, এবং সেই বিষয়ে আন্তর্জাতিক ঘোষনাটি হয় ১লা জানুয়ারী ২০২০।
- ভারতে এই ভ্যাক্সিন বাজারজাত করেছে কারা ? ড: সাইরাস পুনাওয়ালা প্রতিষ্ঠিত, পুনেতে অবস্থিত, ভারতের বহুজাতিক বানিজ্য গ্রুপ পুনাওয়ালা গ্রুপের অন্যতম কোম্পানী, সিরাম ইনস্টিটিউট (Serum Institute of India) এর সঙ্গে GAVI এবং বিল এ্যন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের এক চুক্তি হয় ২০২০ সালে যার ভিত্তিতে সিরাম ইনস্টিটিউট করোনা ভাইরাস ভ্যাক্সিনের ১০০ মিলিয়ন ডোজ বাজারজাত করবে, পৃথিবীর গরীব দেশগুলোর জন্য। এর জন্য বিল এ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন ১৫০ মিলিয়ন ইউ এস ডলারের একটা রিস্ক ফাণ্ড করে রাখবে সিরাম ইনস্টিটিউটের অনুকূলে[৮],[৯]।
ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব – আমরা এই ঘটনাবলীকে একটা গভীর ষড়যন্ত্রের ছক বলেই মনে করি। কিন্তু যাঁরা ভাবছেন এসব নিছক কাকতালীয়, এসবের পিছনে কোনও ষড়যন্ত্রের অনুমান করা ভুল, তাঁরা বলছেন, আমরা নাকি “ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব” বিলি করছি। তাঁদের প্রতি আমাদের সামান্য নিবেদন আছে। ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব, এই কথাটির উৎপত্তি ঘটায় সি আই এ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির হত্যার পরে। জন এফ কেনেডিকে হত্যা করা হয় ১৯৬৩ সালে। এই হত্যার জন্য আমেরিকার এক প্রাক্তন সেনানী এবং মার্ক্সবাদী বলে পরিচিত লি হার্ভে অসওয়াল্ড কে দায়ী করা হয়, কিন্তু তার বিচারের আগে তাকেও হত্যা করা হয়। জন এফ কেনেডির হত্যাকান্ড এবং তার পারিপার্শ্বিক ঘটনা অনুসন্ধান করে দেখার জন্য গঠিত হয় ‘ওয়ারেন কমিশন’, যার দশজন সাক্ষীর, খুব অল্প সময়ের মধ্যেই, এই কমিশনে সাক্ষ্যদান পর্ব শেষ হওয়ার আগেই, মৃত্যু হয়। এবং সেই মৃত্যুগুলোর সবগুলোকেই স্বাভাবিক মৃত্যু বলা হয়, সরকারীভাবে। স্বাভাবিকভাবেই কিছু মানুষের এই গোটা ঘটনাক্রমকে একটা চক্রান্ত বলে মনে হয়, তারা এটা প্রচারও করে এবং এই মানুষজনের প্রচারকে বাধা দেওয়ার উদ্দেশ্যে সি আই এ এই প্রচারকে ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব বলে উড়িয়ে দেয়।
এখন কথা হচ্ছে,
- সারা পৃথিবী জোড়া এই এতবড় চক্রান্ত কেন? শুধুই কি আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদীদের অতিকায় মুনাফা লোটার উদ্যোগ, না অন্য কিছুও আছে এর সঙ্গে ?
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই ইয়োরোপ এবং আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদীরা তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক শিবিরের (বা বলা ভাল রাষ্ট্রীয় পুঁজিবাদের শিবিরের বিরুদ্ধে একটা প্রচার করত যে, এরা হল সব স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং এসব দেশে মানুষের কথা বলার অধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই। তারা বলত যে এসব দেশে মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপের ওপর রাষ্ট্র নাকি কড়া নজর রাখে। কিন্তু আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ন্যাটো (NATO) জোটভুক্ত দেশগুলো, তাদের নিজেদের দেশগুলোর রাষ্ট্র যে গোপনে মানুষের প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রন করার অপচেষ্টা করত সেটা অপর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচারের ঢক্কানিনাদে ভুলিয়ে রাখতে চাইত এবং এখনও তাই চায়। আমরা আজ যে ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি, তার আগে শেষবারের মত বিরাট আকারে এই অপচেষ্টা যখন হয়েছিল, তা ফাঁস করে দিয়েছিলেন এডওয়ার্ড স্নোডেন, যিনি ছিলেন সি আই এর এক সফটওয়্যার এঞ্জিনিয়ার। তিনি এই ঘটনা ফাঁস করে দিয়েছিলেন যে সি আইএ, নিজের দেশে এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও নাগরিকদের প্রতিটি পদক্ষেপের অপর নজর রাখতে চলেছে তাদের স্মার্টফোনের মাধ্যমে। আজ আমরা জানি যে আমি আপনি অন্তর্জালের মধ্যে একটা একটা কমা, দাঁড়ি ব্যবহার করলেও সেটা নজর দারীর আওতায় পড়ে। এবং এই এত এত তথ্য ঘাঁটাঘাঁটি করে পুঁজিবাদীদের এবং রাষ্ট্রের হাতে তুলে দেওয়ার নাম হল বিগ ডেটা এ্যনালিসিস। যা থেকে জনমানুষের মনের সুলুক সন্ধান পাওয়া সম্ভব বলে পুজিবাদীরা এবং রাষ্ট্রেরা মনে করে। এই ঘটনা ফাঁস হওয়ার পরে কি এই প্রকল্প বাতিল হয়েছে? না, তা হয়নি, কিন্তু মানুষ এই নজরদারী থেকে বাঁচবার জন্য নানা পন্থা খুঁজে নিয়েছে। কারুর কাছেই বিষয়টা আর গোপন নেই। তাছাড়া স্মার্টফোনের সংস্পর্শে না এলে তো নজরদারী ব্যর্থ! সেজন্য তার পরের প্রকল্প হল আরো শক্তপোক্ত নজরদারীর ব্যবস্থা করা। একেবারে শরীরের ভেতরে! এডওয়ার্ড স্নোডেন ২০২০ সালের এপ্রিল মাসেই একটি সাক্ষাতকারে অভিযোগ করেছেন যে এই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, মানুষের গতিবিধি, কার্য্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত করা হচ্ছে, এবং সবই এই কোভিড ১৯ রোগের দোহাই পেড়ে[১০]।
শেষ করার আগে পাঠকদের কাছে একটা প্রশ্ন রাখছি। এত বছর ধরে, পরপর এরকম সাজিয়ে গুছিয়ে কাকতালীয় ঘটনাক্রম ঘটা কি সম্ভব?
তথ্যসূত্র:
[১] https://www.ted.com/talks/bill_gates_the_next_outbreak_we_re_not_ready?
[২] https://en.wikipedia.org/wiki/Coalition_for_Epidemic_Preparedness_Innovations
[৩] https://www.nejm.org/epidemics
[৪] https://en.wikipedia.org/wiki/ID2020
[৫] The Corona Virus COVID 19 Pandemic : The Real Danger is Agenda ID 2020, Peter Koenig, Global Research, March 12, 2020.
[৬] https://www.centerforhealthsecurity.org/event201/
[৭] https://www.pirbright.ac.uk/
[৮] https://www.livemint.com/news/india/oxford-covid-19-vaccine-serum-institute-begins-clinical-trial-in-india-11598365676108.html
[৯] https://www.seruminstitute.com/news.php
[১০] https://www.collective-evolution.com/2020/04/15/edward-snowden-says-governments-are-using-covid-19-to-monitor-us-like-never-before/