প্রথম প্রকাশ : 'এখন বিসংবাদ' , জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সংখ্যা। 

বর্তমানে নাকি দেশজুড়ে আবার বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। স্বাস্থ্য মন্ত্রক আবার বলতে শুরু করেছে জমায়েতে সাবধান হতে, ভিড়ে মাস্ক ব্যবহার করতে এবং করোনা ভ্যাক্সিন অত্যন্ত কার্যকরী নতুন ভ্যারিয়েন্টের ওপর। দেশে এখন সংক্রমণের শীর্ষে কেরালা। কেন্দ্রে নয়া স্বাস্থ্য বিল পাস না হলেও, কেরালার রাজ্য সরকার অর্ডিন্যান্স মারফৎ নয়া স্বাস্থ্য নির্দেশিকা আগেই জারি করেছে। দেশজুড়ে আবার করোনা ভীতির প্রচার বাড়াছে আর পাশাপাশি বেশ কিছু পরিবর্তন আসছে দেশের আইনগত কাঠামোতে।

 

পর্ব ১ : বোম্বাগড়ের রাজার দেশে চালু হল নতুন 'একুশে আইন'

 

২০২৩ সালের শীতকালীন অধিবেশনে গ্যাস ক্যানিস্টার কাণ্ডের জেরে বিরোধীশূন্য লোকসভায় পাস হয়ে গেল ভারতীয় ন্যায় সংহিতা, ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা এবং সাক্ষ্য অধিনিয়ম বিল। তিনটি বিল বিনা বাধায় পাস হয়ে গেল রাজ্যসভাতেও। তা কিভাবে এই নতুন বিল দেশের নাগরিকদের ঔপনিবেশিক শাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে তাদের নাগরিক সুরক্ষা নিশ্চিত করছে?

এই নতুন আইন অনুসারে চিকিৎসকের গাফিলতির কারণে রোগীর মৃত্যু হলে অভিযুক্ত ডাক্তারের শাস্তির বিধান পুরনো ব্রিটিশকালের আইনের থেকে অনেক লঘু করা হয়েছে। ডাক্তারদের ক্ষেত্রে দায়িত্বে অবহেলার সাজা এখন সর্বাধিক দুই বছর। ডাক্তার না হলেই সেই সাজা কিন্তু সর্বাধিক পাঁচ থেকে দশ বছর অবধি হতে পারে। নতুন আইনের আরেকটি বিষয় খেয়াল করুন। চিকিৎসকদের তরফে দায়িত্বে গাফিলতি এখন থেকে আর ক্রিমিনাল বা ফৌজদারি মামলার আওতায় পড়ছে না। এখন থেকে সিভিল বা দেওয়ানি মামলার এক্তিয়ারভুক্ত হবে এইসব মামলা। যুক্তি একটাই। চিকিৎসকেরা যখন দায়িত্বে অবহেলা করেন তখন নাকি তাতে criminal intent থাকে না।

 

এই প্রসঙ্গে মেডিক্যাল নেগলিজেন্স সংক্রান্ত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানানো জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আমাদের জাতীয় সরকারি তথ্য বলছে যে পৃথিবীর সমস্ত দেশের নিরিখে আমাদের দেশে মেডিক্যাল নেগলিজেন্স (হাসপাতাল/চিকিৎসকের তরফে দায়িত্বে অবহেলা) সংক্রান্ত প্রচুর মামলা ফি বছর দেশের বিভিন্ন কোর্টে দাখিল হয়। জাতীয় স্তরে, পাঞ্জাবের পরেই সর্বাধিক মেডিক্যাল নেগলিজেন্স মামলা দায়ের হয় আমাদের পশ্চিমবঙ্গে। এমত অবস্থায় নতুন আইনে চিকিৎসকদের জন্য দণ্ড লঘু করার বিধান চমকপ্রদ।

 

আচ্ছা, স্বাস্থ্য বা জনস্বাস্থ্যের হিসাব যদি করতে হয় তাহলে সাধারন মানুষ কি পেল এই নতুন ন্যায় সংহিতা প্রভৃতি বিলগুলি থেকে?

গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার নয়া স্বাস্থ্য বিল প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল। দেশের বেশ কিছু অঞ্চলে মানুষ আওয়াজ তুলেছিল প্রস্তাবিত জনস্বাস্থ্য বিলের বিরুদ্ধে। গত বছর যে জনস্বাস্থ্য বিল প্রস্তাবিত হয়েছিল তাতে সংক্রামক রোগের দোহাই দিয়ে পুলিশ এবং সরকারি আধিকারিকদের অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। এখন পাস হওয়া এই তিনটি বিল (ন্যায় সংহিতা প্রভৃতি) অনুসারে যে কোন সময় নামমাত্র কারণে ইমারজেন্সি অবস্থা ঘোষণা এবং জারি করার নানান সুযোগ রয়েছে বিভিন্ন স্তরের সরকারি আধিকারিকদের। পুলিশের ক্ষেত্রে আমাকে-আপনাকে জেরা করার, বাড়ি সার্চ করার, আমাদের বন্দী করার, কোর্টে তোলার প্রায় অবাধ স্বাধীনতা দেওয়া রয়েছে নতুন আইনে।

 

আপনি ভাবছেন তো সরকারি আধিকারিক আর পুলিশের ক্ষমতা বাড়ার সাথে জনস্বাস্থ্যের যোগাযোগ কোথায়?

ভুলে গেলেন নাকি, মাত্র বছরখানেক আগের কথা! সংক্রামক রোগের ভয় দেখিয়ে পুলিশ-প্রশাসন বাজার বসতে দেয় নি, যানবাহন বন্ধ রেখেছে, খেটে খাওয়া মানুষের রোজগারের পথ ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে, ভয় দেখিয়ে আমাদের শরীরে অপরীক্ষিত ভ্যাক্সিন ঢুকিয়েছে। আর এসবের নিদান এসেছে সরকারি এক্সপার্ট চিকিৎসকদের কাছ থেকে।

এবছর পাস হওয়া আরেকটি বিলের কথা বলি। আগস্ট মাসে যখন মণিপুরের হিংসা এবং জাতিদাঙ্গার সময় বিরোধীরা রাজ্যসভা থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে অন্তর্ধান করেছিলেন তখন ধ্বনিভোটে এক সাথে পাস হয় জনবিশ্বাস বিল, অরণ্য এবং বনাঞ্চল সংরক্ষণ সংক্রান্ত নতুন আইন আর নতুন মাইনিং বিল। প্রকৃতি-পরিবেশ এবং জনতার বিশ্বাসের ওপর এমন ভয়ঙ্কর আঘাত কত সহজে নেমে এসেছে। জনবিশ্বাস বিল বলছে ওষুধ কোম্পানি যদি নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ করে এবং তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলে কারোর অসুস্থতা বা মৃত্যু ঘটে তাহলে ওষুধ কোম্পানি বা কর্পোরেট মালিকেরা এখন থেকে শুধুমাত্র ফাইন দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে পারেন। সেই জরিমানার পরিমাণ দেশের পুরনো আইনের থেকে এখন অনেক কম। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল জেনেশুনে নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ করলেও এখন আর ওষুধ কোম্পানির মালিক ক্রিনিমাল নয়। এক্ষেত্রেও কোন ফৌজদারি মামলা দায়ের হবেনা। কারন জনতা যে কর্পোরেটের ওপর আস্থা বা বিশ্বাস রাখবে এটাই তো স্বাভাবিক! কর্পোরেটও তো নিষ্কলুষ বিবেক আর good faith নিয়েই ওষুধ বানায়। এই জনবিশ্বাস বিলের পরিধি কেবল ওষুধ কোম্পানির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য এমনটা নয়। ধরুন, ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার মতো কিছু যদি আবার ঘটে কর্পোরেটরা তার জন্য এখন ভীষণ নিশ্চিন্ত।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে পৃথিবীর মোট ৩৫% জাল এবং নিম্নমানের ওষুধ তৈরি হয় ভারতে। গত দুই বছরে ভারতীয় কোম্পানির তৈরি খারাপ মানের কাশির ওষুধ খেয়ে উজবেকিস্তান, গাম্বিয়া প্রভৃতি বেশ কিছু দেশে শিশু মৃত্যুর ঘটনা আলোড়ন ফেলেছিল। তবু সরকার আমাদের বিশ্বাস রাখতে বলছে ফার্মা হাঙরদের ওপর। DGCI বা আমাদের দেশে যে সংস্থা ওষুধের গুণমান খতিয়ে দেখে তারা বারে বারে আমাদের আশ্বস্ত করছেন যে তাঁদের তরফে প্রচেষ্টায় কোন ঘাটতি নেই। এই সংক্রান্ত আরো দুটি সংশ্লিষ্ট সংস্থা হল ICMR এবং CDSCO। করোনাকালে এই সংস্থাগুলির নাম আমরা বারে বারে শুনেছি। আমাদের নিশ্চিন্ত রাখার জন্য কিরকম প্রচেষ্টায় লিপ্ত এই সংস্থাগুলো?

 

এক দশক আগে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন এবং GAVIর তত্ত্বাবধানে আমাদের দেশে HPV টিকার ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছিল। অন্ধ্রপ্রদেশের একটি জেলায় পর পর আটটি শিশুর মৃত্যুকে ঘিরে দেশ জুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সে সময় একই কারণে বেশ কিছু শিশুমৃত্যু ঘটেছিল গুজরাটেও। ভারতীয় সংসদে এই নিয়ে তুমুল আলোচনা চলে। ২০১২ সালে সরকার এই সিদ্ধান্তে পৌঁছয় যে বিল ও মেলিন্ডা গেটসের সংস্থা ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর যথাযথ অনুমোদন নেয় নি, অনুমোদনের দায়িত্বে ছিল ICMR। সংসদে অভিযোগ উঠেছিল CDSCO র বিরুদ্ধেও। শিশুদের ওপর অনৈতিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর অপরাধে দশ বছরের জন্য ভারতে যেকোন ওষুধ বা টিকার পরীক্ষা চালানোর অনুমতি বিল ও মেলিন্ডা গেটসের সংস্থার থেকে প্রত্যাহার করা হয়। CDSCO এবং ICMR এর বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। সংস্থাগুলির সাথে জড়িত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক , বিজ্ঞানী এবং আধিকারিকদের জালিয়াতির ভুরিভুরি প্রমাণ সেদিন সংসদে সকলের সামনে পেশ হয়েছিল।

দশ বছরের বিরতির পর, ২০২১ সালে করোনা অতিমারির সময় বিল ও মেলিন্ডা গেটসের সংস্থা আবার আমাদের দেশে আইনিভাবে ফেরত আসে, এবারেও সাথে আনে অপরীক্ষিত টিকা। এবারেও ট্রায়ালের নিয়ম ভাঙার বিবিধ অভিযোগ রয়েছে টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে। এবারেও সাথে ICMR, CDSCO আর DGCI ।

                                                                                                   

করোনা টিকার বিতর্কিত লাইসেন্স, বিধিহীন ক্লিনিকাল ট্রায়াল, অপরীক্ষিত প্রযুক্তিতে তৈরি করোনা টিকা দিয়ে গণটিকাকরণ এসব কিছুই সরকার, ফার্মা কোম্পানি, ICMR, CDSCO আর DGCIর সাথে যুক্ত আধিকারিক, চিকিৎসক এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের নিষ্কলুষ বিবেক আর good faith অনুসারে হয়েছে। টিকা প্রস্তুতকারী সংস্থা তার ফ্যাক্ট শিটে লিখেছিল যে করোনা টিকা থেকে রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা ছাড়াও আরও বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। অথচ DGCI র কর্ণধার সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে দেশের মানুষকে জানিয়েছিলেন যে করোনা টিকা ১১০% নিরাপদ। সেই "১১০% নিরাপদ" করোনা টিকা আমরা যতদিন নিই নি ততদিন পুলিশ আর কোম্পানির মালিক নিষ্কলুষ বিবেক আর good faith নিয়ে আমাদের কাজে ফিরতে বাধা দিয়েছে। আর আমরা যারা good faith নিয়ে সেদিন লকডাউনের প্রতিবাদে, অপরীক্ষিত ভ্যাক্সিন ব্যবহার করে মানুষকে গিনিপিগ বানানোর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছিলাম তাদের জেলে ভরেছিল পুলিশ-প্রশাসন। ব্রিটিশ যুগের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট আইন হোক বা একালের ন্যায় সংহিতা, মনে রাখতে হবে যে আমার-আপনার good faith চিরকাল সন্ত্রাস হিসেবে গণ্য হয় রাষ্ট্রের চোখে।

আমাদের বিগত তিন বছরের অভিজ্ঞতা বলছে যে জনস্বাস্থ্যকে হাতিয়ার করে সাধারন মানুষের ওপর করোনার সময় নেমে আসা আক্রমণ এবং সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ক্রমশ রুগ্ন করে ধারাবাহিকভাবে বেসরকারি ফার্মা হাঙরদের সুবিধা করে দেওয়ায় সরকার আর কর্পোরেটদের সাথী বিপুল সংখ্যক চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, আধিকারিক, পুলিশ প্রশাসন। তাই দেশের নতুন 'একুশে আইন' পুলিশ - প্রশাসন - চিকিৎসকের পক্ষে আর সাধারন মানুষের বিপক্ষে। গত তিন বছরে কার ক্ষমতা বাড়লো আর কার অধিকার হ্রাস পেল তার হিসাব যথেষ্ট পরিষ্কার।

 

আশি-নব্বই এর দশক থেকে IMF আর বিশ্ব ব্যাঙ্কের ঋণের হাত ধরে আমাদের দেশে আসে একগুচ্ছ কাঠামোগত সংস্কার, বেসরকারিকরণের দরজা উন্মুক্ত হয়। জাতি সংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রভৃতি অতিরাষ্ট্রিক সংস্থার প্রভাব বাড়তে থাকে দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে। সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ধারাবাহিকভাবে রুগ্ন এবং অর্থহীন করে তোলা জরুরি ছিল বেসরকারি ডায়াগোনস্টিক সেন্টার, হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমের রমরমা ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য। প্রয়োজন ছিল সরকারি পরিষেবাতে PPP মডেলে ডায়াগোনস্টিক পরীক্ষার জন্য প্রাইভেট কোম্পানির জায়গা করে দেওয়া। পাশাপাশি লকডাউনের আগে থেকেই সরকারি স্বাস্থ্য বীমার ঘোষণা শোনা যাচ্ছিল। দেশের এক বড় সংখ্যক জনগণ আয়ুষ্মান ভারত বা স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পে ইতিমধ্যেই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এজাতীয় স্বাস্থ্যবীমা প্রাথমিক ও আউডডোর পরিষেবায় কার্যকরী নয়। প্রসঙ্গত, সারা ভারতে চিকিৎসা পরিষেবার পিছনে জনতা যা খরচ করেন, তার প্রায় ৬৬ শতাংশ ব্যয় হয় আউটডোর চিকিৎসা ও ওষুধপত্র কিনতে,যা এরূপ চটকদারী স্বাস্থ্যবীমা প্রকল্পের আওতার বাইরে। ফলস্বরূপ সামান্য কিছু জটিল রোগের চিকিৎসায় কেবলমাত্র স্বাস্থ্যবীমা প্রযোজ্য। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা থাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এড়িয়ে যেতে, কারণ তাতে কর্মক্ষেত্রে দৈনন্দিন মজুরির রাস্তা বন্ধ হয়। এদিকে বছরের শেষে প্রিমিয়ামের প্রায় পুরো টাকাই করদাতাদের পকেট থেকে যায় বীমা কোম্পানিগুলির পকেটে। এই বীমা ভিত্তিক স্বাস্থ্যকাঠামো স্বাস্থ্যের অধিকারের নাম করে গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে স্বাস্থ্য পরিচয়পত্র বা হেলথ আই ডির মধ্যে বেঁধে ফেলে মানুষকে একধরনের স্বাস্থ্য নজরদারীর দিকে ঠেলে দেওয়ার রাস্তা পরিস্কার করছে। মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকারের স্লোগান 'সকলের জন্য স্বাস্থ্য' আজ হয়ে দাঁড়িয়েছে বীমা কোম্পানির বিজ্ঞাপনের ট্যাগলাইন।

বীমা নিবিড় স্বাস্থ্য পরিষেবার আর একটি মারাত্মক বিপদের দিক রয়েছে। স্বাস্থ্যবীমার সাথে জুড়ে যায় মেডিকেল কমপ্লায়েন্স বা বাধ্যতামূলকভাবে চিকিৎসকের কথা শুনে চলার বিষয়টি। করোনার সময় আমরা দেখেছি কিভাবে বকলমে অপরীক্ষিত টিকাকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল জীবিকার শর্ত হিসেবে। বীমানিবিড় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্যা হল মানুষের চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করার ওপর বীমা কোম্পানিগুলো নানান নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে থাকে। ভারতবর্ষের প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার রয়েছে চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করার। সেক্ষেত্রে ধরুন চিকিৎসক আপনাকে পরামর্শ দিলেন কোন নতুন অপরীক্ষিত ওষুধ অথবা প্রতিষেধক নেওয়ার জন্য। (যেমনটা করোনাকালে বহু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাঁদের কিডনি বা হৃদযন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত রোগী, বয়স্ক মানুষ এবং শিশু, গর্ভবতী মহিলাদের good faith নিয়ে বলেছিলেন নতুন ধরনের এক বিতর্কিত জিন প্রযুক্তিতে তৈরি অপরীক্ষিত কোভিড ভ্যাক্সিন নির্ভয়ে নিতে। কোম্পানির ফ্যাক্ট শীট হয় তাঁরা পড়েও দেখেন নি, অথবা জেনেশুনে সত্য গোপন করেছেন বলে ধরে নেব।) বীমানিবিড় স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় তাহলে কর্পোরেটদের অধিকার আর এক ধাপ বাড়লো। এখন বিষয়টা দাঁড়ালো এই রকম :

আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ মানতে সব সময় বাধ্য। নাহলে সরকারি বা বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমা আপনার জন্য প্রযোজ্য হবে না। পুরনো বেসরকারি কাঠামো ছিল 'ফেলো কড়ি, মাখো তেল।' বিগত কয়েক বছরে কাঠামোগত যে পরিবর্তনগুলো এসেছে তার সারমর্ম হল আপনি-আমি কড়ি ফেললেও তেল জুটবে কিনা তা নির্ভর করছে আমাদের বাধ্যতার অনুশীলনের ওপর।

 

পর্ব ২ : স্বাস্থ্য সংকট - হিমশৈল্যর শিখরমাত্র দৃশ্যমান

 

এবছর গর্বা নাচের মরশুমে গুজরাটে সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তর এক অভূতপূর্ব ব্যবস্থা নিয়েছিল। স্বাস্থ্য দপ্তর আশঙ্কা করছিল যে গর্বার মরশুমে নাকি এবছর প্রচুর মানুষ নাচতে নাচতে আকস্মিক হার্ট আট্যাকে আক্রান্ত হতে পারে। তাই শহরে বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের কার্ডিয়াক ইমারজেন্সির জন্য তৈরি ছিল মেডিকাল ভ্যান। বহু হাসপাতাল সক্রিয় ছিল কার্ডিয়াক ইমারজেন্সির জন্য। স্বাস্থ্য দপ্তরের আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়েছে। এতো তৎপরতা সত্ত্বেও সব মৃত্যু এড়ানো যায় নি। বহু খেলোয়াড় প্রাণ হারাচ্ছে খেলার ময়দানে। সমসাময়িক আরেকটি তথ্য চমকে দেওয়ার মতো। মার্চ ২০২৩ এ দেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে যে এই সময় নাগাদ প্রতিদিন গড়ে দেশে দেড় লক্ষ মানুষের হৃদযন্ত্র বিকল হচ্ছে। বিশেষত অল্প বয়সীদের মধ্যে এর কোন পূর্ব লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছে না। দেশজুড়ে বাড়ছে ব্রেন স্ট্রোকের সংখ্যা।

বিশ্বের সব থেকে বেশি ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ নাকি থাকে আমাদের দেশে। উচ্চরক্তচাপ এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগের পরিমাণ জনতার মধ্যে ক্রমশ ঊর্ধ্বগামী।

 

করোনা অতিমারীর সময় সরকার সংক্রামক রোগের ভয় দেখিয়ে সমস্ত সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাবতীয় রোগের চিকিৎসা বন্ধ রেখেছিল। যক্ষ্মা, ক্যান্সার, কিডনির অসুখ, প্রভৃতি নানা সমস্যায় আক্রান্ত মানুষ সেদিন বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারিয়েছেন। সম্প্রতি ইন্ডিয়ান সোসাইটি ফর নেফ্রোলজির চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, “অতিমারীর সময়ে কিডনির অসুখে আক্রান্ত যত জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের সকলে করোনা সংক্রমিত ছিলেন না। বরং, ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ রোগীর মৃত্যু হয়েছিল সময়ে ডায়ালিসিসের অভাবে।”পাশাপাশি করোনা চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রোটোকল ট্রিটমেন্ট এবং জিন-পরিবর্তন প্রযুক্তিতে তৈরি অপরীক্ষিত করোনা টিকার কুপ্রভাব জনতার মধ্যে নানান রোগ ব্যধির পরিমাণ লাগামছাড়া মাত্রায় বাড়িয়ে দিয়েছে। এসব কিছুকে 'লং কোভিড' নামে চিহ্নিত করে সরকার প্রয়োজনীয় গবেষণা বন্ধ রাখছে, তথ্য গোপন করছে। বহু অপচেষ্টার পরেও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের সাথে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ইত্যাদির কোন যোগাযোগ প্রমাণ করা যায়নি। বরং পৃথিবী জুড়ে করোনার যে চিকিৎসাবিধি ব্যবহৃত হয়েছিল তার আদৌ কোন যৌক্তিকতা ছিল কি? শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত করোনা পজিটিভ এবং শ্বাসতন্ত্রের রোগলক্ষ্মণ মুক্ত করোনা পজিটিভ মানুষদের ওপর একইরকমভাবে যথেচ্ছ স্টেরয়েড ব্যবহার আমরা এই করোনাকালে দেখেছি। জিন পরিবর্তন প্রযুক্তির দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে বিস্তর মতপার্থক্য রয়েছে বহুকাল ধরে। সেই স্বল্পপরীক্ষিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে অতি দ্রুততার সাথে বাজারে নিয়ে আসা হয়েছিল করোনা টিকা। বিতর্কিত প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি এই করোনা টিকা কিন্তু ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই গণহারে প্রয়োগ করা হয়েছিল। বিধি ভাঙা যৎসামান্য ক্লিনিকাল ট্রায়াল যা হয়েছিল তার ফলাফল সরকার প্রকাশ করতে অস্বীকার করেছে। কেন্দ্রীয় সরকার দেশের সুপ্রিম কোর্টে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে যে সরকার নাকি মানুষকে টিকা নিতে বাধ্য করেনি এবং টিকার কার্য্যকারীতা বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তথ্য জনসমক্ষে আনা যাবে না। জনতাকে বিশ্বাস রাখতে হবে ১০০% নিরাপদ ঘোষণার ওপরে। বিশ্বাস রাখতে হবে অপ্রামানিত 'লং কোভিড' তত্ত্বের ওপর। মনে রাখতে হবে যে বাড়ছে দূষণ (আর তার জন্য দায়ী কেবল আপনি-আমি)। করোনা পূর্ববর্তী সময়ে দূষণ বা আমাদের দৈনন্দিন যাপন আজকের থেকে খুব আলাদা কিছু ছিল না। তাহলে আজকে খেলার মাঠে অল্পবয়সী খেলোয়াড়দের অকস্মাৎ হৃদরোগে মৃত্যু এতোটা বেড়ে গেল কেন? গর্বা নাচের সময়ে অতিমারীর আগে কেন কার্ডিয়াক ইমারজেন্সি ইউনিট তৈরি রাখার প্রয়োজন হত না? দেশের 'একুশে আইনে' প্রশ্নগুলো না করাই শ্রেয়। বিশেষজ্ঞরা সহমত না হলেও সাধারন কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন মানুষের আজ বুঝতে অসুবিধে হয় না যে পরিকল্পিত অতিমারী আজ এক অভূতপূর্ব স্বাস্থ্য সংকট ডেকে এনেছে যার দায় সরকার বেমালুম ঝেড়ে ফেলতে চাইছে।

 

২০০০এর দশকের গোড়ায় যখন খবর সংবাদপত্রের পাতায় কৃষক আত্মহত্যার খবর প্রায় সবার চোখ সওয়া হয়ে যাচ্ছিল তখন সুচারুভাবে 'কৃষক' শব্দের সরকারি সংজ্ঞা বদলে দেওয়া হয়েছিল। তার ফলে খবরের কাগজের পাতার অস্বস্তি কাটানো সম্ভব হয়েছিল। মানুষের ধর্ম পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া। অতএব করোনাকালে ময়দানে নামার আগেই টিকা প্রস্তুতকারক কোম্পানি, বিভিন্ন দেশের সরকারি বিশেষ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেশগ্যরা মিলে প্রতিষেধক শব্দের সংজ্ঞা সুবিধামতো পাল্টে নিয়েছিলেন। প্রতিষেধক এখন আর ঠিক প্রতিষেধক নয়... টিকা এখন আর রোগ আটকায় না, কেবল মৃত্যু ঠেকাতে পারে হয়তো অথবা রোগের প্রকোপ কমাতে পারে হয়তো। কথার আইনি মারপ্যাঁচ খেয়াল করার মতো।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংজ্ঞা বদলে গেছে করোনাকালে। জনস্বাস্থ্যের পরিধি সংকুচিত হয়ে এখন কেবল সংক্রামক রোগের টিকাকরণ জনস্বাস্থ্যের সাথে সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

যথেষ্ট পরিমাণে পুষ্টিকর খাদ্য, বসবাসের উপযুক্ত সুস্থ পরিবেশ জনস্বাস্থ্যের প্রাথমিক দাবী। অথচ বিশ্বের চার ভাগ ক্ষুধার্ত মানুষের এক ভাগ বাস করে ভারতে। ২০২২ থেকে ২০২৩সালে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক সারণীতে ভারতের স্থান ১২৫টি দেশের মধ্যে ১০৭ থেকে নেমে ১১১নম্বরে পৌঁছেছে এবং দেখা যাচ্ছে শিশুমৃত্যু, অপুষ্টি আর অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে ভারতের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আবার পৃথিবীর যে পঞ্চাশটি দেশে স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দ সর্বনিম্ন ভারতবর্ষ সেই তালিকাতেও রয়েছে। পৃথিবীর যে সব দেশে চিকিৎসার সব থেকে বেশী খরচ রোগী বা তার পরিবার নিজেরা বহন করেন ভারত সেই তালিকায় রয়েছে পঞ্চম স্থানে। আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও জনস্বাস্থ্যের বেহাল দশা। সরকারি তথ্য অনুসারে ২০১৯-২০২১ সময়সীমায় ভারতবর্ষের ৩৬টি রাজ্য ও ইউনিয়ন টেরিটরির মধ্যে আমাদের রাজ্য শিশুমৃত্যুর ক্ষেত্রে রয়েছে সারণীর অষ্টম স্থানে। বয়সের অনুপাতে কম ওজনের শিশু এবং মহিলা অপুষ্টির ক্ষেত্রে আমাদের রাজ্য রয়েছে সারণীর নবম স্থানে। অথচ শিশুদের মিড ডে মিলের বরাদ্দ বাড়ে নি। দেশের মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে ফর্টিফায়েড চাল এবং জি এম শস্যের মতো বিতর্কিত প্রযুক্তি নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীর সময় থেকে আমরা আরও বেশী করে দেখেছি যে দেশের মানুষের সার্বিক স্বাস্থ্য গড়ে তোলার দিকে বিন্দুমাত্র নজর না দিয়ে কেবল সংক্রামক রোগের চিকিৎসা এবং স্বল্পপরীক্ষিত টিকা ব্যবহার করে গণটিকাকরণ গুরুত্ব পেয়েছে।

আমাদের রাজ্যে সকলের জন্য করোনা টিকা দেওয়া শেষ হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই স্কুলগুলিতে চালু হল হাম রুবেলার টিকাকরণ। জি এম প্রযুক্তিতে তৈরি MR টিকার ফলে ২০১৮ এবং ২০২২ সালে কর্ণাটক এবং উত্তরপ্রদেশে শিশুমৃত্যুর কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। ২০২২ সালে আমাদের রাজ্যের সংবাদপত্রেও দেখা গেছে MR টিকার ফলে শিশুমৃত্যু। অথচ অদ্ভুতভাবে একই কাগজের অনলাইন এডিশনে ওই খবর পাওয়া যাচ্ছে না। ২০১২য় সংসদে গৃহীত সিদ্ধান্তর পরেও ২০১৭-২০১৮ সালে অন্ধ্রপ্রদেশে HPV টিকাকরণের ফলে চারটি আদিবাসী শিশুর মৃত্যু হয়। ফার্মা ব্যবসায়ীদের জন্য সব থেকে লাভজনক এবং ঝুঁকিবিহীন বিনিয়োগের মাধ্যম হল ভ্যাক্সিন বা প্রতিষেধক।

গত এক বছরে চার লাখের বেশি ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়েছে ভারতে। এই সংখ্যাটি নেহাত ক্ষুদ্র নয়। আমাদের দেশ নাকি ক্রমশ ভ্যাক্সিন মাফিয়াদের মৃগয়াক্ষেত্র হয়ে উঠছে। হতদরিদ্র ক্ষুধার্ত জনতা যখন ক্লিনিকাল ট্রায়ালের সম্মতিপত্রে সই করে তখন ভাতের থালা ছাড়া আর কিছু তার মাথায় থাকে না। গিনিপিগ বনে যাওয়ার সম্মতি সে নিজেই দিচ্ছে ধরে নিয়ে ক্ষান্ত থাকা যায় কি?

 

 

পর্ব ৩ : জোর যার মুলুক তার

 

দেশব্যাপী লকডাউনে আমরা সম্মতি দিই নি। পাড়ার বাজার বন্ধ রেখে অনলাইনে বেচা কেনায় আমরা সম্মতি দিই নি। সাধারন মানুষের জন্য গণপরিবহন বন্ধ রেখে কেবল সরকারি আধিকারিক আর করোনা যোদ্ধাদের জন্য স্টাফ ট্রেন চালানোয় আমরা সম্মতি দিই নি। গঙ্গায় ভেসে আসা লাশের ছবি বা ড্রোন উড়িয়ে শ্মশানের জ্বলন্ত চিতার ভিডিও দেখিয়ে সেদিন প্যানিক আর গণ হিস্টিরিয়া তৈরি করা হয়েছিল, মানুষের থেকে ধোঁকামারীর সামাজিক স্বীকৃতি আদায় করা হয়েছিল।পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে সেদিন আমাদের দেশেও সরকার, সংবাদমাধ্যম আর কর্পোরেটরা মিলে আমাকে - আপনাকে ভুল বুঝিয়ে সামাজিক সম্মতি আদায় করে নিয়েছিল। আমরা সম্মতি দিয়েছিলাম গৃহবন্দী থাকবো, পড়শিকে গৃহবন্দী রাখবো, তার অন্নজলের সংস্থান না থাকলেও। দেশের প্রচুর গণ্যমান্য ব্যক্তি টিভির পর্দায় এসে আমাদের বলেছিলেন বন্দীদশা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ হচ্ছে জিনপরিবর্তন প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি অপরীক্ষিত টিকা। আমরা সেকথাও মেনে নিয়েছিলাম। আমাদের মধ্যে যারা সেদিন একথা মেনে নেয় নি তাদের অধিকাংশকে ওই অন্নজলের সংস্থান কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখিয়ে টিকা নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। ছলে বলে কৌশলে আমাদের দেশের ৮৮% জনতাকে করোনা টিকা দেওয়া হয়েছে। করোনা ছাড়াও, MR, HPV, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া প্রভৃতি হরেক রকম সংক্রামক রোগের ভয় দেখিয়ে নানা ধরনের জি এম ভ্যাক্সিন সরকার আমাদের দিচ্ছে। সেক্ষেত্রে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমাদের সম্মতির প্রশ্ন পর্যন্ত উঠছে না। বিভিন্ন ধরনের আই ডি কার্ড, বায়োমেট্রিক ইত্যাদি করানোর পরেও সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্র বা হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না। স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে গিয়ে জেরবার হতে হচ্ছে মানুষকে। করোনা অতিমারির পরিসমাপ্তি ঘোষণা করার পরেও কিছুদিন অন্তর করোনা ভীতি ছড়ানো, মাস্ক আর টিকার প্রচার করা রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একটা কথা স্পষ্ট যে শাসক আজ জনস্বাস্থ্যকে হাতিয়ার করে সাধারন মানুষের ওপর এক অভূতপূর্ব আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। অতএব, জনস্বাস্থ্যের প্রশ্নে আজ আমাদের সংগঠিত হতে হবে।

মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া এই কৃত্রিম স্বাস্থ্য সঙ্কটের বিষয়ে আমাদের অবগত হতে হবে। সর্বস্তরে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে যাতে এই বিপুল সঙ্কটের দায় সরকার স্বীকার করে। পাশাপাশি চিকিৎসা পরিষেবার ধারাবাহিক বেসরকারিকরণ এবং বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্যবীমার নামে কর্পোরেট লবিকে পুষ্ট করার চক্রান্ত বাতিল করতে হবে। স্বল্পপরীক্ষিত এবং বিতর্কিত জিন পরিবর্তন প্রযুক্তিতে তৈরি খাদ্য বা টিকার সর্বাঙ্গীণ বিরোধিতা প্রয়োজন, এর বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। শিশুদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এগুলির প্রভাব থেকে রক্ষা করতে হবে।

সাধারন মানুষের ওপর নেমে আসা এই আক্রমণকে আমাদের সংগঠিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিহত করতে হবে।

 

পৌলমী

৩১শে ডিসেম্বর, ২০২৩ ।

কলকাতা ।

 

 

তথ্যসূত্র :

1) https://www.deccanherald.com/india/new-criminal-code-bills-doctors-exempted-from-criminal-prosecution-in-medical-negligence-deaths-2819985

 

2) https://m.economictimes.com/news/india/amit-shah-announces-plan-to-amend-criminal-law-bill-exempting-doctors-from-criminal-prosecution-in-medical-negligence-cases/amp_articleshow/106162130.cms

 

3) https://www.delhimedicalnegligence.com/post/stats-on-medical-negligence-cases-in-india-in-comparison-to-other-countries#:~:text=Medical%20Negligence%20Cases%20in%20India%20Statistics&text=As%20per%20the%20National%20Library,110%25%20jump%20in%20annual%20numbers

 

4) https://indianexpress.com/article/india/rajya-sabha-passes-jan-vishwas-forest-mining-bills-8873945/

 

5) https://www.nationalheraldindia.com/national/a-prescription-for-disaster

 

6) https://www.facebook.com/photo/?fbid=255315560578984&set=pb.100083016266742.-2207520000 - ফেসবুক পেজ, জনস্বাস্থ্য মোর্চা

 

7) https://www.downtoearth.org.in/news/hpv-vaccine-deaths-parliament-panel-indicts-path-health-officials-42074

 

8) https://hsrii.org/wp-content/uploads/2014/07/72.pdf - HPV ভ্যাক্সিন সংক্রান্ত রাজ্যসভার আলোচনার রিপোর্ট। আগস্ট, ২০১৩ ।

 

9) https://sansad.in/getFile/annex/253/AU925.pdf?source=pqars - করোনা ভ্যাক্সিন সংক্রান্ত রাজ্যসভার আলোচনার রিপোর্ট। সরকার বলছে টিকা ১০০% নিরাপদ। ফেব্রুয়ারি, ২০২১

 

১০) https://www.indiatoday.in/health/story/why-are-so-many-heart-attack-cases-happening-during-garba-experts-explain-2452778-2023-10-23

 

১১) https://bartamanpatrika.com/home?cid=4&id=440711

 

 

লেখক সম্পর্কে

GRAPH_AVATAR_IMG
পৌলমী