শেষ মেশ ঝুলি থেকে বেড়ালটা বেরিয়েই পড়লো।
২০২১ সালের জানুয়ারী থেকে শুরু হয়েছে কোভিড ১৯ রোগের গন টীকাকরণ। শুরুতে সরকারী নানা পদস্থ ব্যক্তিদের তরফে, একে বলা হয়েছিল একশ শতাংশের বেশী নিরাপদ। এবং ইউনিয়ন এবং রাজ্য সরকারগুলোর দপ্তর গুলোও এই একই কথা প্রচার করেছিল।
এই নিরাপত্তার আশ্বাস এর ওপর ভর করেই চালু হয়েছিল সরকারী মদতে গনটীকাকরণ। এর পর সরকারী আদেশ নামা দিয়ে টীকাকরন কে জন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হোলো, সংসদ, বিধানসভা ইত্যাদি কে এড়িয়ে। চলাফেরা, এবং জীবিকা নির্বাহের শর্ত করা হোলো কোভিড টীকা কে।
আমাদের সংগঠন, Global Rational Alliance for Public Health (GRAPH), এই টীকা সম্পর্কে কিছু স্পষ্ট বক্তব্য রেখে এসেছে, টীকা করণ শুরু হওয়ার সময় থেকেই। এক, এই কোভিড রোগের বা এরকম শ্বাসতন্ত্রের কোনো ভাইরাস সংক্রমণের জন্য গন টীকাকরনের প্রয়োজন নেই, কারন ৮৫ শতাংশের ওপরে সংক্রমন আপনা থেকেই চলে যায়। । দুই, এই গন টীকাকরণ দিয়ে এই রোগের প্রকোপকে জনগনের মধ্যে কমিয়ে ফেলা যায় না। তিন, এই টীকা এখনো সম্পূর্ণ অনুমতি পায়নি, প্রার্থী টীকার পর্য্যায়ে রয়েছে। এবং চার, এই টীকা তার তৈরী হওয়ার বিশেষ পদ্ধতির কারনেই বিপজ্জনক।
টীকা দেওয়া শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই দেশ বিদেশের বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেল এর খারাপ প্রতিক্রিয়ার চিত্রটা। বিপদ এর চিত্রটা। সেটা এতটাই যে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ মহল থেকে দাবী উঠতে লাগলো গন টীকাকরণ কর্মসূচী স্থগিত করার।
এর পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য যে, টীকা প্রস্তুতকারকেরা তাদের পন্যের বিবরন দিয়ে রেখেছিল তাদের ওয়েবসাইটে। সেখানে তারা স্পষ্ট লিখে রেখেছিল, কোন কোন ক্ষেত্রে টীকা নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে, আর কোন কোন ক্ষেত্রে টীকার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো তথ্য নেই।
জন মানুষের তরফে, কিছু সংগঠন এর তরফে প্রশ্ন উঠতে লাগলো। আদালতে মামলা হতে লাগলো। জ্যাকব পুলিয়েল এর করা জনস্বার্থ মামলায় ইউনিয়ন সরকার সর্বোচ্চ আদালতে হলফ নামা দিয়ে জানালো যে টীকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়নি। এবং সাথে সাথে এও জানালো যে টীকার কিছু কিছু খারাপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে এবং সেই সব তথ্য নিয়ে পরীক্ষা নীরিক্ষা চলছে।
তারপর গত ৪ঠা ফেব্রুয়ারী, ২০২২, ইউনিয়ন সরকার লোকসভায় জানায় যে গত ৩০শে জানুয়ারি অবধি, যা তথ্য পাওয়া গেছে, সেই অনুযায়ী ভারতে টীকাকরণ এর ফলে খারাপ প্রতিক্রিয়ার ঘটনা ৭০,১০২। মৃত্যু ১০১৩। মৃত্যুর ক্ষেত্রে কোভিশিল্ডের জন্য ৯২১, কোভ্যাক্সিনের জন্য ৯২, স্পুটনিক এর জন্য ০।
এক্ষেত্রে একথা মনে রাখা উচিৎ যে এই তথ্য কতদিনকার সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে সেকথা স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়নি। সরকার যে তথ্য ঝাড়াই বাছাই করে কাজ করে, সাধারণত সে তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে বেশ কিছু মাস আগে। ৩০শে জানুয়ারি সরকার যে তথ্য বিশ্লেষণ করেছে, সেটা কবে সংগৃহীত, সে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। তার মানে, লোকসভায় দেওয়া এই তথ্য বর্তমানের ক্ষেত্রেও আংশিক হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তাছাড়াও একথা মনে রাখা উচিৎ যে সরকারের তরফে দেওয়া হয়েছিল কোভ্যাক্সিন এবং সেক্ষেত্রেই মৃত্যুর সংখ্যা দেখাচ্ছে কম। সরকারী হিসেবের মধ্যে কোনো পক্ষপাত নেই তো?
আমাদের দেশে সাধারণ ভাবে তথ্য রাখার অভ্যাস এবং ব্যবস্থা বেশ অবহেলিত। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের ক্ষেত্রেও। বিশেষত ওষুধ ইত্যাদির খারাপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে তথ্য রাখার ব্যবস্থা। তাহলে লোকসভায় পেশ করা এই হিসেব কে সম্পূর্ণ ভাবাটা বোধহয় বুদ্ধিমানের মতো কাজ হবে না।
অর্থাৎ আমরা বুঝতে পারছি যে ইউনিয়ন সরকার একটা আংশিক রিপোর্ট আমাদের দিয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে যে টীকা বিভিন্ন মানুষের ক্ষেত্রে বেশ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এযাবৎ সব টীকাকরণের পুরো তথ্য পাওয়া গেলে হয়ত দেখা যেত যে এই সংখ্যা অনেক বেশী।
তাহলে, নিরাপদ বলে প্রচার করে, যে মানুষদের টীকা দেওয়া হোলো এবং তার ফলে তাদের খারাপ শারীরিক প্রতিক্রিয়া হোলো বা মৃত্যু হোলো, তাদের এই ক্ষতির দ্বায়িত্ব কে বা কারা নেবে? এবং কিভাবে সে দ্বায়িত্ব নেবে? এ তো মানুষের জীবন নিয়ে প্রতারণা হয়েছে, ছিনিমিনি খেলা হয়েছে! আজ সেই সব মানুষেরা তো শুধুমাত্র কিছু সংখ্যায় পরিনত হলেন!
আমরা আজ তাই দাবী করছি রাষ্ট্রের কাছে, কর্পোরেট গন মাধ্যমের কাছে, এবং তাদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে যারা প্রচার চালিয়ে ছিলেন, তাদের কাছে। দ্বায়িত্ব শ্বীকার করুন, ভুল স্বীকার করুন, ভুলের খেসারত কিভাবে দেবেন তার পরিকল্পনা করুন, এবং এই ভুলের পুনরাবৃত্তি রোখার জন্য গন টীকাকরণ কর্মসূচী বাতিল করুন।

লেখক সম্পর্কে

GRAPH_AVATAR_IMG
ডা. ভাস্কর চক্রবর্তী লেখক পেশায় চিকিৎসক।কলকাতায় থাকেন।