দলিত আন্দোলনের নেতা শরদিন্দু বিশ্বাস (উদ্দীপন)-কে একটি ফেসবুক পোস্টের জন্য নরেন্দ্রপুর থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে সারাদিন বসিয়ে রেখে অপদস্থ করার পর তাঁকে কেস দেওয়া হয়। ৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর গ্রেফতারির প্রতিবাদে কামালগাজিতে আয়োজিত একটি পথসভায় পুলিশ আক্রমণ নামিয়ে আনে। সভা ভেঙে দিয়ে বেশ কয়েকজন গণ আন্দোলন কর্মীকে গ্রেফতার করে। পরে তাঁদেরকে মুক্তি দেওয়া হলেও স্লোগানিং করার অভিযোগে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে তাঁদের উপর বর্বরভাবে লাঠি চার্জ করে নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ । ৯ জন কর্মীকে গ্রেফতার করে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। আজ ৯ ফেব্রুয়ারি শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ২ জন মহিলা গণ আন্দোলন কর্মীকে বারুইপুর আদালত থেকে মুক্তি দেওয়া হলেও, বাকি ৭ জন গণ আন্দোলন কর্মীকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গ্রাফের পক্ষ থেকে আমরা তীব্র ভাবে এই অগণতান্ত্রিক পুলিশি সন্ত্রাসের বিরোধিতা করছি। কোভিড ন্যারেটিভকে সামনে রেখে জনস্বাস্থ্যের অজুহাত খাড়া করে একের পর এক মিটিং-মিছিল বন্ধ করে একটা পুলিশি রাষ্ট্র বানাবার প্রচেষ্টা বিগত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা স্পষ্টভাবে এই রাজ্যে দেখতে পাচ্ছি। সারা দেশের মতন এই রাজ্যেও মহামারী আতঙ্ককে কাজে লাগিয়ে স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারকে দমন করার প্রবল প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রসঙ্গত গতকালই হিন্দুত্ববাদীরা কর্ণাটকে হিজাব পড়ার কারণে একজন মুসলিম স্কুল ছাত্রীকে ঘিরে ধরে 'জয় শ্রীরাম' শ্লোগান তুলে একটা আতঙ্কের পরিবেশ রচনা করার চেষ্টা করে বলে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখতে পাওয়া গেছে। সেক্ষেত্রে মেয়েটি ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদে 'আল্লাহু আকবর' বলায় সামাজিক মাধ্যমে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল ভয়ের পরিবেশ তৈরি করছে কারা। একদিকে পুলিশ-প্রশাসন অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদীরা এবং বিভিন্ন শাসক রাজনৈতিক দল। যারা মহামারীর পরিবেশ ও পরিস্থিতির অজুহাতে সামগ্রিকভাবে জনস্বার্থ এবং গণতন্ত্রকে পদদলিত করতে চাইছে। তাই গ্রাফের পক্ষ থেকে সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের কাছে আমাদের আবেদন, জনস্বাস্থ্যের অজুহাতে পুলিশি রাষ্ট্র তৈরি করার এই প্রবণতার বিরোধিতা করুন। মানুষের গণতান্ত্রিক এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকারের পাশে দাঁড়ান।
নরেন্দ্রপুরে সাত ফেব্রুয়ারির পুলিশি অত্যাচারের ঘটনায় দোষী পুলিশ আধিকারিকদের শাস্তি চাই। ওইদিনের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া সমস্ত গণ আন্দোলন কর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি চাই।
সংগ্রামী অভিনন্দন সহ
গ্রাফ সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি
৯/২/২০২২