ছোটবেলায় সমাজ বিজ্ঞানের বইতে আমরা পড়তাম ভারতবর্ষের সম্পদের উৎস তার বৈচিত্র্যময়তা। কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে যে 'বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান'স্লোগান ক্রমশ পাল্টে এখন one nation-one product-one language-one culture স্লোগান অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমাদের দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেমন হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান প্রকল্পের ঢক্কানিনাদে চিরাচরিত unity in diversityর কথা হারিয়ে যাচ্ছে, সেরকম গোটা পৃথিবী জুড়ে একই হাওয়া। ভেবে দেখুন, ২০২৩সালের G20 সম্মেলনের ট্যাগলাইন। দমদম বিমানবন্দর থেকে শহরে ঢোকার রাস্তা ছেয়ে গেছে বিশাল বিশাল হোর্ডিং-এ : “ এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ" (“One Earth. One Family. One Future”)
আসলে, আমরা যদি বৃহৎ অঞ্চল জুড়ে একচ্ছত্র শাসনব্যবস্থা কায়েম রাখার কথা ভাবি তাহলেই দেখবো মানবসমাজের চালিকাশক্তি যে বহুত্ব তাকে অস্বীকার করার প্রয়োজন পড়ছে। জাতীয় ক্ষেত্রে তার উদাহরণ হল দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ক্রমশ দুর্বল করে তোলার নানান তোড়জোড়। আর আন্তর্জাতিক পরিসরে দেখা যাচ্ছে যে জাতি সংঘ, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, IMF, প্রভৃতি অতিরাষ্ট্রিক সংস্থা যেসব নীতি নির্ধারণ করে দিচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন সদস্য রাষ্ট্রগুলি সেই গঠনতন্ত্রের ছকে নিজেদের জাতীয় শাসন–পরিকাঠামোকে নতুনভাবে সাজিয়ে নিচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে পৃথিবী জুড়ে যে সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্রগুলির উত্থান হয়েছিল (তাদের সার্বভৌম ক্ষমতার ব্যপ্তি নিয়ে অব্যশই সেগুলির জন্মলগ্ন থেকে নানান প্রশ্ন ছিল, কিন্তু) দেখা গেল ওয়াশিংটন কনসেনসাস পরবর্তী সময় থেকে তাদের জাতীয় পরিসরের বিভিন্ন বিষয়ে অতিরাষ্ট্রিক সংস্থাগুলি নীতি নির্ধারণ এবং আইন প্রণয়নে বড়ো ভূমিকা নিচ্ছে। নয়া উদারনৈতিক অর্থনীতির ঘোষিত উদ্দেশ্য গোটা পৃথিবী জুড়ে একটিমাত্র বাজার তৈরি করা (free market economy), যে বাজারের কর্তৃত্ব থাকবে সরাসরি অতিরাষ্ট্রিক সংস্থাগুলির হাতে। বিশ্ব জুড়ে একটিমাত্র বাজার যদি কায়েম করতে হয় তাহলে বিশ্ব জুড়ে এক সংস্কৃতি, এক শাসনব্যবস্থা, একরকম চাহিদা, একরকম ক্রয়ক্ষমতা, এক পণ্য এসব কায়েম করা দরকার। পৃথিবী জুড়ে বিভিন্ন বাজারে যদি পণ্যের চাহিদা একরকম হতে হয় তাহলে সব দেশে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এবং চাহিদা এক হতে হবে। ক্রয়ক্ষমতা এবং চাহিদা এক হতে গেলে সংস্কৃতি এবং শাসনব্যবস্থা এক হতে হবে। অর্থাৎ পৃথিবী জুড়ে এক বিশ্বব্যবস্থা কায়েম হতে হবে। পৃথিবী জুড়ে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে উৎখাত বা প্রতিস্থাপন করা সম্ভব শুধুমাত্র দীর্ঘদিনব্যাপী ধারাবাহিক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে। এই দীর্ঘ পরিবর্তনের অছি হিসেবে এইসব অতিরাষ্ট্রিক সংস্থাগুলির আত্মপ্রকাশ ও বাড়বাড়ন্ত।
বিগত ২৫-৩০ বছরের ইতিহাস দেখলে সহজেই বোঝা যায় যে জাতি সংঘ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, G20, IMF, WEF যেসমস্ত নীতি অনুসরণ করে বা তারা যা লক্ষ্য স্থির করে সেগুলির মধ্যে সাযুজ্য খেয়াল করার মতো। ২০১৫ সালে পরবর্তী ১৫বছরের জন্য জাতি সংঘ ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে। লক্ষ্যমাত্রাগুলি UN Sustainable Development Goals for 2030 বা UN SDGs 2030 Agenda হিসেবে পরিচিত। বিশ্ব ব্যাঙ্ক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, G20, প্রত্যেকেই অবিকৃতভাবে এই ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা অনুসরণ করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নিজেই ঘোষণা করছে যে জাতি সংঘ নির্ধারিত ১৭টি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ১৬টি বিষয়ের সাথে স্বাস্থ্য বা জনস্বাস্থ্যের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। নব্বই-এর দশক জুড়ে এবং ২০০০সালে গৃহীত জাতি সংঘের Millennium Development Goalsএও স্বাস্থ্যের এবং জনস্বাস্থ্যের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। ১৯৯০ এবং ২০০০ পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থাগুলি যেসব নীতি ও লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করে তার জনস্বাস্থ্য প্রশ্নে এক বিরাট অংশ জুড়ে ছিল নানান সংক্রামক রোগের মোকাবিলা। অথচ ২০২০সালে দেখা যাচ্ছে সেই সংক্রামক রোগের প্রশ্নে গোটা পৃথিবী একসাথে থমকে দাঁড়াচ্ছে। জনস্বাস্থ্য ও সংক্রামক রোগকে ব্যবহার করে এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ আজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এই নয়া উদারনীতির যুগে সদস্য রাষ্ট্রগুলিকে এক ঝাঁক পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এক নতুন দিশা দেখাতে চায়। সেই উদ্দেশ্যে 2005 সালে প্রস্তুতি শুরু হয়। 2007সালে সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলি মিলে International Health Regulations 2005 গ্রহণ করে। এই নতুন নিয়ম অনুসারে সংক্রামক রোগ সনাক্তকরণ, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রয়োগ, সকলের জন্য সুলভ স্বাস্থ্য পরিষেবা, প্রভৃতি লক্ষ্য স্থির করা হয়। আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল এই IHR 2005 এ: সমস্ত সদস্য দেশগুলি বদ্ধপরিকর থাকবে উপরোক্ত বিষয়গুলো নিজের নিজের দেশে লাগু করার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে এবং প্রয়োজনে দেশের আইন পাল্টাতে।
নব্বই-এর দশকে জাতিসংঘের মূল লক্ষ্যগুলি ছিল আন্তর্জাতিক আইন সুসংহত করা এবং বিভিন্ন জাতিরাষ্ট্রগুলি যেন পারমাণবিক, রাসায়নিক ও অন্যান্য ধরনের গণহত্যার সরঞ্জাম পরিহার করে সেবিষয়ে নজর রাখা। সংক্রামক রোগের প্রশ্নে নব্বই-এর দশকের ফোকাস ছিল ম্যালেরিয়া ও HIV-AIDS। ভারতের ক্ষেত্রে বলা হয় আশির দশকে ম্যালেরিয়া মোকাবিলায় ভারত যথেষ্ট উন্নতি করেছিল। কিন্তু নব্বই-এর দশকে IMF/বিশ্ব ব্যাঙ্কের-এর কাছ থেকে নেওয়া ঋণ এবং গ্যাট চুক্তিকে কেন্দ্র করে এলো একগুচ্ছ austerity measure বা জাতীয় ব্যয় কর্তন। তার প্রভাব পড়লো স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে। নব্বই-এর দশকে মধ্য-ভারতের বনাঞ্চলে অস্বাভাবিক হারে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এই মৃত্যুগুলির সব হিসাব সরকারি তরফে যথাযথভাবে নথিভুক্ত হয়নি। কারণ রোগনিরাময়ে সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা খাড়া করার প্রয়োজন ছিল। সাংবাদিক পি সাইনাথ নব্বই-এর দশকে উড়িষ্যার মালকানগিরি অঞ্চলে ম্যালেরিয়া সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ে তাঁর তথ্যানুসন্ধান রিপোর্টে যে চিত্র এঁকেছেন তা ভয়াবহ। রিপোর্টটিতে দেখা যাচ্ছে মালকানগিরিতে একজন আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে রক্তপরীক্ষা করিয়ে চিকিৎসা পৌঁছাতে কম করে সময় লাগে ২১দিন, যে সময়ের ব্যবধানে একজন রোগীর মৃত্যু হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এর কারণ ছিল মূলত স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যয় সংকোচন। গ্রামে গ্রামে যেসব স্বাস্থ্যকর্মী বাড়ি বাড়ি গিয়ে রোগ সনাক্তকরণ, রক্তপরীক্ষা ও ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার কাজ করতেন তাঁদের রোজগারে ভাঁটা পড়ে সরকারি ব্যয় সংকোচন প্রকল্পের কারণে, হ্রাস টানা হয় ওষুধের ক্ষেত্রে। তাই সাইনাথ বলছেন যে ম্যালেরিয়া নির্মূল হওয়া দূরঅস্ত, মালকানগিরি জেলায় যেরকম সরকারি উদ্যোগ নব্বই-এর দশকের শুরুতে দেখা যাচ্ছিল তাতে ২০০০সালের মধ্যে 'সকলের জন্য ম্যালেরিয়া'সুনিশ্চিত। সেসময় কলেরা এবং আন্ত্রিকের কারণেও প্রচুর মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। জলবাহিত বা মশাবাহিত রোগের প্রকোপ আজকেও আমাদের মতো দেশে মারাত্বক। শুধু অবশ্য সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও জাতি সংঘের নব্বই-এর দশকের নীতি হতাশাজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে পৃথিবী জুড়ে। পারমাণবিক, রাসায়নিক ও অন্যান্য ধরনের গণহত্যার সরঞ্জামকে অজুহাত হিসেবে খাড়া করে ২০০০ পরবর্তী সময় থেকে আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধ শুরু হয় এবং চলে এক দশকেরও বেশি সময় জুড়ে। আসলে এই অতিরাষ্ট্রিক সংস্থাগুলির গৃহীত নীতি এবং তার প্রকৃত বাস্তবায়নের মধ্যে প্রচুর ফারাক চোখে পড়ে। বা বলা যেতে পারে হয়তো অস্ত্র পরিহার করার প্রশ্ন তোলা হয়েছিল যুদ্ধ লাগানোর উদ্দেশ্যে। ইরাকে যে রাসায়নিক অস্ত্রশস্ত্র অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি সেটা সকলেরই জানা আছে। আর আল কায়দার অর্থের উৎস আজ আর আমাদের অজানা নয়। আমরা আগেই বলেছি যে বহুজাতিক সংস্থাগুলির ঐতিহাসিক দায়িত্ব বিশ্বজুড়ে একটিমাত্র বাজার তৈরি করা। আর এই প্রশ্নে আন্তর্জাতিক আইন ও যুদ্ধপরিস্থিতি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, সেরকম সংক্রামক রোগের বিষয়টিকেও জাতি সংঘ থেকে শুরু করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অত্যন্ত জরুরি বিষয়ের তকমা দিচ্ছে। সংক্রামক রোগের প্রশ্নে দুটি বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করবো। সংক্রামক রোগের ক্ষেত্রে বলা যেতে পারে যে আপাতত টিকাকরণকে একমাত্র সমধান হিসেবে দেখানো হচ্ছে। করোনা / ফ্লু, চিকেন পক্স, হাম, হেপাটাইটিস, প্রভৃতি রোগের মোকাবিলায় টিকা ব্যবহার করা হচ্ছে। ম্যালেরিয়া, টি বি প্রভৃতি চিরাচরিত রোগের জন্য বাজারে আসছে নতুন জিন-পরিবর্তিত প্রযুক্তিতে তৈরি টিকা। দ্বিতীয় বিষয়টি হল রোগ সনাক্তকরণ। HIV থেকে শুরু করে SARS, MERS, ইবোলা, করোনা, প্রভৃতি হালে আবিষ্কৃত প্রত্যেকটি সংক্রামক রোগ নির্ণয় করার জন্য ব্যবহৃত হয় PCR যন্ত্র যার আবিষ্কর্তা নিজেই সন্দিহান এই পরীক্ষার ফল আদৌ রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা চলে কিনা সেই প্রশ্নে। PCR যন্ত্র ব্যবহার করে রোগ সনাক্তকরণের ভিত্তিতে বিভিন্ন অঞ্চলে SARS এবং MERSএর মতো রোগের জন্য আংশিক লকডাউন, মাস্ক, দুরত্ববিধি ও আইসলেশনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল ২০০০ পরবর্তী সময় থেকেই। পুরনো ধারনাকে নাকচ করে এইসময় থেকে শ্বাসযন্ত্রে ভাইরাসের সংক্রমণের মোকাবিলায় টিকার ব্যবহার শুরু হয়। ফ্লু ভ্যাক্সিন মার্কিন মুলুকে যথেচ্ছ ভাবে জনতার মধ্যে প্রয়োগ করা হয়, বিশেষত প্রৌঢ় এবং বৃদ্ধদের মধ্যে। একটু খোঁজখবর নিলে যেকেউ আন্দাজ করতে পারবেন যে ফ্লু টিকা প্রয়োগ করে ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং নিউমোনিয়ার থেকে আদৌ মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। লক্ষ্য করার মতো বিষয় হল ২০০০ পরবর্তী সময়ে যা যা নতুন টিকা বাজারে এসেছে (হেপাটাইটিস, HPV, MMR, MR, ফ্লু, করোনা) তার অধিকাংশ হল জিন-পরিবর্তন প্রযুক্তিতে তৈরি। বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে এবং আমাদের দেশে জিন-পরিবর্তন প্রযুক্তিতে তৈরি বীজ নিয়ে নানান সামালচনার ঝড় উঠছে। আমাদের ভেবে দেখা উচিত যে জেনেটিক্যালি মডিফায়েড অর্গানিজম টিকার মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলে তার কি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেবিষয়ে কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি বা হচ্ছে না। পরীক্ষা-পর্যবেক্ষণ-সিদ্ধান্ত - এই বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিকে উপেক্ষা করে কার নির্দেশে এইসব অপরীক্ষিত বা স্বল্পপরীক্ষিত টিকা জনতার মধ্যে যথেচ্ছভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। দেখা যাচ্ছে অতিরাষ্ট্রিক সংস্থাগুলির সাথে হাতে হাত মিলিয়ে চলে কর্পোরেট লবি এবং GAVI বা বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মতো সংস্থা যারা জনহিতকারীর ভেক ধরে বিভিন্ন দেশে ব্যবসা ফেঁদে রেখেছে। হ্যাঁ, ভেক বলতে বাধা নেই। ২০০৯ সালে অন্ধ্রপ্রদেশ এবং গুজরাতে সেরভিকাল ক্যান্সারের প্রতিষেধক হিসেবে HPV টিকার পরীক্ষা চলাকালীন ছয়টি শিশুর মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিয়ে লোকসভায় একটি বিস্তারিত আলোচনা হয়। দেখা যায় GAVI এবং বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের মতো সংস্থা বেশ কিছু জাতীয় আইনকে উপেক্ষা করে শিশুদের ওপর ক্লিনিকাল ট্রায়াল চালাচ্ছিল। HPV টিকার তৃতীয় দফার ক্লিকিনাল ট্রায়াল কেন্দ্রীয় সরকার ২০১০ সালে বাতিল করে। অথচ দেখা যায় ২০১৭-২০১৮সালে অন্ধ্রপ্রদেশে HPV টিকাকরনের ফলে আরও চারটি আদিবাসী শিশুর মৃত্যু হয়। ট্রায়াল খারিজ হয়ে গেলেও দেখা যাচ্ছে ব্যবসা চলতেই থাকে। এই মুহূর্তে আমাদের রাজ্যের স্কুলগুলিতে MR টিকাকরণ চলছে। এই টিকার ফলে ২০১৮ এবং ২০২২ সালে কর্ণাটক এবং উত্তরপ্রদেশে শিশুমৃত্যু ঘটেছে। গত এক মাসের সংবাদপত্র বলছে MR টিকায় আমাদের রাজ্যে দুটি শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। (অদ্ভুতভাবে দেখা যাচ্ছে সংবাদপত্রে এই খবর ছাপা হলেও একই সংবাদপত্রের অনলাইন এডিশনে এই খবর খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ)। বর্তমানে হৃদরোগ, স্নায়ুতন্ত্রের নানান সমস্যা, প্রভৃতি আরও নানাবিধ রোগের প্রকোপ যে জনতার মধ্যে ব্যাপক হারে বেড়ে চলেছে, অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে সেগুলি পরীক্ষামূলক করোনা টিকার গণপ্রয়োগের ফল। বিভিন্ন দেশের সরকার এবং অতিরাষ্ট্রিক সংস্থাগুলির তরফে এক্ষেত্রে জনতার মধ্যে সমীক্ষা চালিয়ে বিষয়টির বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কোন নিষ্পত্তি করার প্রচেষ্টা চোখে পড়ছে না। বরং অতিরাষ্ট্রিক শক্তি তাদের সমস্ত বল প্রয়োগ করে যাবতীয় বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন এবং বিরুদ্ধ স্বরকে চাপা দিতে চায়। আমাদের দেশের কেন্দ্রীয় সরকারকে যখন দেশের উচ্চতম আদালতে করোনা টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তখন পরিসংখ্যানের হিসেব দেওয়ার পাশাপাশি সরকার জানায় যে জনতাকে তারা টিকা নিতে বাধ্য করেনি। অত্যন্ত সুচারুভাবে পরীক্ষা মূলক টিকার অপপ্রয়োগের দায় সরকার ঝেড়ে ফেলে। আমাদের দেশে এবং অন্যত্র জাতিরাষ্ট্রগুলির সরকার সরাসরিভাবে অতিরাষ্ট্রিক সংস্থা বা বকলমে কর্পোরেটদের আজেন্ডাকে নির্লজ্জভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে উৎসাহী। কর্পোরেট লবির আগ্রহের কারণ বুঝতে অসুবিধা হয়না যখন দেখি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং GAVI বলছে টিকা প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করলে দশ বছরের মধ্যে ফিরে আসবে তার বহুগুণ।
আসা যাক লকডাউন প্রসঙ্গে। আমাদের দেশে খুচরো ও মাঝারি ব্যবসা যখন নোটবন্দীর ধাক্কা সবে সামলে উঠেছিল ঠিক তখন এলো লকডাউন। সংক্রামক রোগের ভয় দেখিয়ে পৃথিবী জুড়ে মানুষকে একসাথে গৃহবন্দী করা হল। আমাদের দেশে ব্রিটিশ আমলের তামাদি মহামারী আইন ও ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যাক্ট ব্যবহার করে জমায়েত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। অন্য সব দেশেও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করা হল। মানুষে মানুষে সামাজিক দূরত্ব তৈরি করে আমাদের দেশে একের পর এক জনবিরোধি আইন পাশ করা হয়েছে। অতিরাষ্ট্রিক সংস্থার নির্দেশে ভারতসহ প্রত্যেকটি জাতিরাষ্ট্র তাদের দেশের বাজার বন্ধ করে অনলাইন কেনাবেচার সাথে যুক্ত বহুজাতিক কর্পোরেটদের সুবিধা করে দেয়। লকডাউনে ক্ষুদ্র পুঁজি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর বিশেষ কিছু বৃহৎ পুঁজির কলেবর স্ফীত হয়েছে। করোনা কালের দুবছরে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আর্থসামাজিক ফারাক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বে বিলিয়নেয়ারের সংখ্যা বেড়েছে, বেড়েছে বিলিয়নেয়র ক্লাবের কুক্ষিগত মোট সম্পদ, যদিও আজেন্ডা ২০৩০র অন্যতম ছিল আর্থিক ও সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণ। UN আজেন্ডা ২০৩০র ক্ষুধা নিরসন প্রকল্পকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ভারত বিশ্ব ক্ষুধা সারণিতে সব থেকে নিচের সারিতে নেমে গেছে।
জনস্বাস্থ্যকে কেন্দ্র করে যে লকডাউন হল তাতে পকেট ভরল কর্পোরেটের। পুঁজির সংকটের থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার জন্য কর্পোরেটরা কর্মী সংকোচনের মাধ্যমে মুনাফা ধরে রাখার মরিয়া চেষ্টা করলো। তাতে সাধারন মানুষ হাজারে হাজারে কাজ হারালো, আর যারা বেকারত্বের গ্লানি থেকে রেহাই পেয়ে গেল তাদের জন্য এলো নতুন শ্রম আইন। এদিকে জনস্বাস্থ্যের দোহাই দিয়ে সমস্ত স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালে করোনা ছাড়া যাবতীয় অন্যান্য রোগের চিকিৎসা বন্ধ রাখা হয়েছিল প্রায় দুবছর। এই মুহূর্তে আমাদের দেশের সামগ্রিক জনস্বাস্থ্যের ওপর অপরিক্ষিত টিকার প্রভাব যেমন পড়েছে সেরকম দুই বছর ধরে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা বন্ধ রাখার প্রভাবের কোন হিসাব সরকার করেনি। তাহলে আজ কি দাঁড়ালো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আর আজেন্ডা ২০৩০র সুলভ স্বাস্থ্যের প্রতিশ্রুতি? আসলে লকডাউনেরও অনেক আগে থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার International Health Regulations ২০০৫ অনুসারে সকলের জন্য সুলভে স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা আমাদের দেশে পাল্টাতে থাকে। একসময় আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক পরিসরে স্বাস্থ্য আন্দোলনের কেন্দ্রীয় বিষয় ছিল দেশের প্রত্যেকটি মানুষের জন্য বিনামূল্যে / স্বল্পমূল্যে সরকারি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গ্রামীণ হাসপাতাল, শহরাঞ্চলের সরকারি হাসপাতাল, সব জায়গায় স্বাস্থ্যের বেহাল দশা করে রাখা হল। সেই সুযোগে PPP মডেলের নামে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে গেল বেসরকারি পুঁজি। প্রমাণনির্ভর চিকিৎসা পদ্ধতিতে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারন মানুষকে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বেসরকারি সংস্থার দ্বারস্থ হতে হয়। পাশাপাশি নব্বই-এর দশক থেকে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠলো বেসরকারি নার্সিং হোম ও হাসপাতাল। ২০১৫সালে যখন UN আজেন্ডা ২০৩০ এলো তখন আমাদের দেশেও 'সকলের জন্য স্বাস্থ্য'স্লোগান বদলে গেল। কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্য সরকারের মধ্যে হুড়োহুড়ি লেগে গেল সকলের জন্য সুলভে স্বাস্থ্য বীমার বন্দোবস্ত করতে। আসলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার IHR2005 এবং UN আজেন্ডা ২০৩০তে যেভাবে সুলভ স্বাস্থ্যের বিষয়টি আলোচিত হয়েছিল তার অপব্যবহার যে কর্পোরেট পুঁজি এবং জাতিরাষ্ট্রগুলির শাসকেরা করবে সেটা বলা বাহুল্য। আবার মনে হয় যেন অতিরাষ্ট্রিকরা যেভাবে পুরনো ধারনার নতুন সংজ্ঞা খাড়া করে বা প্রযুক্তিকে বেঁকিয়ে-চুরিয়ে নিজের সুবিধামতো প্রয়োগ করে তাতে কর্পোরেট পুঁজির পথ সুগম হয়। প্রত্যেক দশকে অতিরাষ্ট্রিকদের নেওয়া বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রাগুলির সাফল্য এবং ব্যর্থতার খতিয়ান নিলে দেখা যাবে যে উভয়ক্ষেত্রেই লাভ হয়েছে কর্পোরেটের/ বৃহৎ পুঁজির আর হার হয়েছে সাধারন শ্রমজীবী মানুষের। প্রত্যেক ক্ষেত্রে নানান কারণে দেশীয় বাজার দুর্বল হয়েছে, শক্ত হয়েছে বিশ্বজুড়ে এক বাজারের ধারনা। এক বিশ্ব, এক বাজার আজেন্ডায় কর্পোরেটদের হাতের অস্ত্র হিসেবে কখনো ব্যবহৃত হয়েছে সংক্রামক ব্যধির অছিলায় খাড়া করা mass hysteria, আবার কখনো বা যুদ্ধ, ক্ষুধা, খাদ্য, পরিবেশ হয়েছে কর্পোরেটের হাতিয়ার। খাদ্য ও পরিবেশের প্রশ্ন ওতপ্রোতভাবে জনস্বাস্থ্যের সাথে জড়িত। দেখা যাচ্ছে খাদ্য ও পরিবেশের ওপর আজেন্ডা ২০৩০ বিশেষভাবে নজর দিতে বলছে।
২০২০ সালের একটি প্রতিবেদনে জাতি সংঘের তরফে জানানো হয়েছে যে ১৯৬০-২০১৫ সময়কালে পৃথিবী জুড়ে কৃষি সম্পদের উৎপাদন তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময় সীমার মধ্যে পৃথিবীর জনসংখ্যা বেড়েছে তার তুলনায় অনেক কম হারে। জাতি সংঘের হিসাব মতে ২০১৫ সালে মানবজাতি তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত কৃষিসম্পদ উৎপাদন করছিল। অথচ পৃথিবীর বহু মানুষ আজও অভুক্ত। ২০২২ সালে জাতি সংঘ আরেকটি প্রতিবেদনে স্বীকার করছে যে পৃথিবী জুড়ে ক্ষুধিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। ক্ষুধা নিরাময়ের প্রশ্নে অতিরাষ্ট্রিক সংস্থা বা কর্পোরেট লবি কখনো সরাসরি খাদ্যের বা সম্পদের বন্টন নিয়ে কথা বলে না। বিশ্বজুড়ে ক্ষুধিত মানুষের হাহাকারের কারণ যে সম্পদের অসম বণ্টন - এই সহজ কথাটা না বলে অতিরাষ্ট্রিক সংস্থা ও কর্পোরেট লবিমূল বিষয়টিকেই এড়িয়ে যেতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে অসুবিধা হয় না যখন দেখি অতিরিক্ত সম্পদ উৎপাদন হচ্ছে তা স্বীকার করার পরেও তারা জিন-প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফলন বাড়ানোর নিদান দেয়।
আমাদের দেশের ক্ষেত্রে কৃষিতে জিনপ্রযুক্তির ব্যবহার এবং জিন-প্রযুক্তিতে তৈরি টিকার ব্যবহারের ইতিহাস অনেকটা একরকম। ২০০২ সালে আমাদের দেশে বি টি তুলোর চাষের ছাড়পত্র দেওয়া হয়। ২০০৯সালে মাহিকো কোম্পানি বি টি বেগুনের বীজ বাজারে আনে। ২০১২সালে দেশের উচ্চতম আদালত বি টি বেগুন এবং অন্যান্য জি এম বীজের ক্লিনিকাল ট্রায়াল ও চাষের ওপর দশ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২০২২সালে আদালত নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে কর্পোরেট লবির চাপে GM সর্ষের চাষ শুরু করার তোড়জোড় চলছে।
জিন-প্রযুক্তিতে তৈরি বীজের প্রভাব জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ওপর কি মারাত্মক হতে পারে তা নিয়ে সারা পৃথিবীতে বহু স্বাধীন গবেষণা রয়েছে। অথচ ঠিক জিন-প্রযুক্তিতে তৈরি টিকার মতোই অতিরাষ্ট্রিক সংস্থা এবং জাতিরাষ্ট্রের সরকার এবিষয়ে কোন আলোচনা/সমালোচনা চায় না। দেখা যাচ্ছে পরিবেশ প্রসঙ্গে কার্বন নিঃসরণ নিয়ে অতিরাষ্ট্রিকরা চিন্তিত। অথচ অতিরিক্ত খাদ্য মজুত থাকা সত্ত্বেও তারা ফলন বাড়ানোর কথা বলছে, মানে আরও কার্বন নিঃসরণের নিদান দিচ্ছে। আবার দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বজুড়ে হাইব্রিড বীজ দিয়ে চাষ করার ফলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। তার উপর জি এম চাষের ফলে কৃষিজমিতে রাসায়নিক সারের ব্যবহার বাড়বে বৈ কমবে না। প্রশ্নটা তাহলে থেকেই যায় যে জি এম বীজের চাষে ক্ষুধা সমস্যা যখন মিটবে না বা পদ্ধতিটি যখন আদৌ পরিবেশ-বান্ধব নয় তখন সমস্ত অতিরাষ্ট্রিক সংস্থা কেন জি এম চাষের আজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
বিগত দুবছরের পৃথিবীব্যপী লকডাউন জারি করার অভিজ্ঞতাকে অতিরাষ্ট্রিক শক্তি আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা IHR2005 এর ভিত্তিতে সমস্ত সদস্য রাষ্ট্রগুলির সাথে একটি অতিমারি চুক্তিতে (Pandemic Treaty) আবদ্ধ হতে চাইছে। এই চুক্তি অনুসারে বিভিন্ন দেশের সরকার দায়িত্ব- সহকারে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্যে যাবতীয় সংক্রামক রোগের হিসাব রাখবে এবং সেই ডেটা আন্তর্জাতিক অতিরাষ্ট্রিক সংস্থা WHO এর কাছে নিয়মিত পাঠাবে। এরজন্য জাতীয় স্তরে data privacy সংক্রান্ত আইন বদলানোর প্রয়োজন পড়লে দেশগুলি সেই পদক্ষেপ নিতে চুক্তিবদ্ধ থাকবে। একইভাবে দেশগুলি চুক্তিবদ্ধ থাকবে WHO এর মতো অতিরাষ্ট্রিক সংস্থার পেটোয়া বিশেষজ্ঞদের নির্দেশে যেকোনো সময়ে সংক্রামক রোগের অজুহাতে আংশিক বা পূর্ণাঙ্গ লকডাউন নামিয়ে আনতে। সংক্রামক রোগের মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত নিরাময় ও প্রতিষেধকের বিধান দেশগুলি মেনে চলবে এই চুক্তিমাফিক। এই চুক্তি এক বিশ্ব, এক শাসনব্যবস্থা, এক বাজার প্রোজেক্টের অংশ ছাড়া আর কিছু নয়। ভারত নিয়মিতভাবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অতিমারি চুক্তি সংক্রান্ত সমাবেশগুলিতে অংশ গ্রহণ করছে। জাতীয় স্তরে দেখা যাচ্ছে নতুন জনস্বাস্থ্য বিল পার্লামেন্টে পেশ করার তোড়জোড় চলছে। ২০১৭সালের একটি খসড়া জনস্বাস্থ্য বিল সংশোধন করে একটি ড্রাফ্ট তৈরি হয়েছে যাবিশেষজ্ঞমণ্ডলীর মতামতের অপেক্ষায় রয়েছে। এদিকে রাজ্যস্তরে দেখা যাচ্ছে ইতিমধ্যেই ২০২২সালের মার্চ মাসে কেরালা সরকার একটি অর্ডিন্যান্স জারি করে অতিমারি চুক্তি এবং ২০১৭র খসড়া জনস্বাস্থ্য বিলের আদলে রাজ্যের আইন সাজিয়ে নিচ্ছে।
সাবেকি ধারণায় স্বাস্থ্য হল রাজ্যের দায়িত্ব। ২০২০সালের ২৪শে মার্চ দেশজুড়ে যখন কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউন ঘোষণা করে তখন গোটা দেশে করোনা রোগের সংক্রমণ ছিল নগণ্য। দেশজুড়ে মাহামারি আইন লাগু করার এবং লকডাউনের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত সেদিন দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে ধাক্কা দিয়েছিল। একইভাবে লকডাউনের নির্দেশ যেহেতু এসেছিল অতিরাষ্ট্রিক সংস্থার পক্ষ থেকে তাই এক্ষেত্রে জাতিরাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। WHOঅতিমারি চুক্তি এবং তার অনুসারী নতুন জনস্বাস্থ্য বিল দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ও জাতিরাষ্ট্রের সার্বভৌম ক্ষমতার পরিপন্থী। এগুলি সেই এক বিশ্ব, এক বাজার আজেন্ডাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস। আসলে ঐতিহাসিকভাবে দেখতে গেলে উদারনীতির উত্থান হয় বিশ্বজুড়ে পুঁজির সংকটের এক বিশেষ পরিস্থিতিতে, আশির দশকের মন্দার সময় থেকে। পুঁজির সংকটকে সামাল দিতে উদারনীতি বাজারের ওঠাপড়ার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরিভাবে নিজের হাতে রাখতে চায়। বিশ্ব জুড়ে বাজার নিয়ন্ত্রনের প্রচেষ্টা চলছে জনস্বাস্থ্যকে ব্যবহার করে। একচেটিয়া পুঁজির আগ্রাসনের ফলে জাতিরাষ্ট্রগুলির বহুত্বের ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। অতিরাষ্ট্রিক সংস্থাগুলি খোলাখুলিভাবে জাতিরাষ্ট্রের বিলয়ন প্রকল্প ঘোষণা করছে। ঐতিহাসিক/দার্শনিক যুবাল হারারি তাঁর বিভিন্ন লেখায় মানবজাতির ভবিষ্যতের যে চিত্র এঁকেছেন তাতে তিনি জিন ও AI প্রযুক্তির বিকাশের সাথে সাথে কিভাবে জাতিরাষ্ট্রের হাত থেকে শাসনক্ষমতা বহুজাতিক পুঁজি ও অতিরাষ্ট্রিক শক্তির হাতে চলে যাবে তা বিষদে ব্যাখ্যা করেছেন। হারারির লেখা কল্পবিজ্ঞান হতেও পারে। কিন্তু দমদম বিমানবন্দরের বাইরে G20 র ট্যাগলাইন দেখে WEF এর একটি পুরনো টুইট মনে পড়ে গেল : Welcome to 2030. I own nothing, have no privacy, and life has never been better। বুঝতে পারলাম আমরা হারারির কল্পবিজ্ঞানের জগতে তলিয়ে যাচ্ছি।
তথ্যসূত্র
1. “We are all living together on a single planet, which is threatened by our own actions. And if you don’t have some kind of global cooperation, nationalism is just not on the right level to tackle the problems, whether it’s climate change or whether it’s technological disruption.”
Yuval Noah Harari
2. We need ‘magic seeds’: What Bill Gates said on global hunger crisis
https://www.hindustantimes.com/world-news/we-need-magic-seeds-what-bill-gates-said-on-global-hunger-crisis-101663045347381.html
3.UN sustainable development goals for 2030
https://www.un.org/sustainabledevelopment/development-agenda-retired/#:~:text=On%201%20January%202016%2C%20the,Summit%20%E2%80%94%20officially%20came%20into%20force.
4. News on Millennium Development Goals
https://research.un.org/en/docs/dev/2000-2015
5. UN sustainable development goals for 2030 adopted by World Bankhttps://www.worldbank.org/en/programs/sdgs-2030-agenda
6. Health is key theme for UN SDGs 2030 Agenda; UN sustainable development goals for 2030 adopted by WHO
https://www.who.int/data/gho/data/themes/world-health-statistics
7. Everybody Loves A Good Drought – P. Sainath
“Malaria for All by 2000”
8. United Nations on Food Crisis
https://www.un.org/development/desa/undesavoice/highlights/2020/03/48819.html
9. HPV vaccine trials in India
https://www.deccanherald.com/content/63156/were-tribal-girls-guinea-pigs.html
10. Financial gains in vaccine industry
11. MR vaccine-related child death
12. Genetically modified seeds in India
https://pib.gov.in/PressReleseDetailm.aspx?PRID=1654492#:~:text=In%202002%20approval%20for%20the,to%20cotton%20bollworm%20was%20given.
https://www.thehindu.com/opinion/op-ed/the-twisted-trajectory-of-bt-cotton/article32566091.ece
13. The myth about GM seeds
Documentary on global agro-giant Monsanto
“The World According to Monsanto” (2008); Director Marie-Monique Robin
https://www.youtube.com/watch?v=ho0BWyZHQ5Y
14. Pandemic Treaty
15. Zero draft of WHO Pandemic Treaty
https://apps.who.int/gb/inb/pdf_files/inb3/A_INB3_3-en.pdf
16. WEF tweet