যে কোন সংকট পরিস্থিতিকে দক্ষিণপন্থী রাজনীতিও চেষ্টা করে, জনগণের সংকটমুক্তির লড়াইয়ে সামিল হয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে। দক্ষিণপন্থী রাজনীতি যেহেতু এই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের চেষ্টা করছে, তাদের আন্দোলনের বিরোধিতা করাটাই বামপন্থার পরকাষ্ঠা - এভাবে দেখার মধ্যে একটা যান্ত্রিকতা আছে। বরং বামপন্থী রাজনীতির কাজ হওয়া দরকার ছিল, দক্ষিণপন্থী রাজনীতির স্বার্থকে উন্মোচন করতে জনগণের সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া। রাষ্ট্রের তৈরি কোভিড বয়ান-কে মান্যতা দিয়ে বামপন্থী রাজনীতির যে অংশ বিজ্ঞানের দাবি করছেন, তাঁরা আসলে, দক্ষিণপন্থী রাজনীতির স্বার্থকেই পুষ্ট করছেন।
গত দুবছর ধরে কোভিড বিধির নামে যে সামাজিক বিধিনিষেধ গুলো রাষ্ট্র আমাদের জনজীবনে চাপিয়ে দিচ্ছে এবং রাখছে, যেমন বাধত্যতামূলক মাস্ক পরা, লকডাউন এবং জায়গায় জায়গায় আংশিক লকডাউন, জীবন জীবিকার জায়গা থেকে মানুষকে উৎখাত করা,ভ্যাকসিন এর বাধ্যবাধকতা, ইত্যাদি তা সবই হচ্ছে জনস্বাস্থ্য কে সামনে রেখে, বলা ভালো জনস্বাস্থ্য কে অজুহাত করে। তাই এই সামগ্রিক অবস্থার মোকাবিলায় আমাদের প্রয়োজন জনস্বাস্থ্যর গড়ে ওঠার ধারণা, জনস্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়া আর একবার একটু ঝালিয়ে নেওয়া এবং প্রয়োজন, এর বিরুদ্ধে জন আন্দোলনে জনস্বাস্থ্যকেই হাতিয়ার করে তোলা।
যুক্তি যখন প্রতিষ্ঠান আর ক্ষমতা-র মান্যতার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে, তখন এক বেজায় সমস্যা তৈরি হয়। ক্ষমতার দাপটকেই 'যুক্তি'-র প্রমাণ হিসেবে দাবি করা হয়। 'কোভিড ১৯-এর নামে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রে যে পাহাড়প্রমাণ অন্যায় এবং মিথ্যাচার সংঘটিত হচ্ছে, সারা পৃথিবী জুড়ে ক্ষমতাশালীদের যে আখ্যান এই অন্যায় এবং মিথ্যাচারকে ‘নিউ নরমাল’ আর ‘গ্রেট রিসেট’ বলে চালানোর চেষ্টা করছে, স্বঘোষিত যুক্তিবাদীরা তাদের সুরেই পোঁ ধরেছেন। এই চিৎকৃত আত্মরতি, নির্বোধ এবং বদ রসিকতা অনেক সময় কুৎসিত মনে হয়।'
ভাইরাসের দোহাই দিয়ে লকডাউনের পর লকডাউন হবে। ভ্যাক্সিনের পর ভ্যাক্সিন। প্রথমে ভ্যাক্সিন এসেছিল এই বলে যে ভ্যাক্সিন নিলে আর কারোর করোনায় আক্রান্ত হয়ে কোভিড হবে না। একটু পরে বয়ান পাল্টে গেলো। বলা হল, ভ্যাক্সিন নিলেও কোভিড হতেই পারে তবে রোগের প্রাবল্য কমবে। তারপর যখন দেখা গেল দুটো ভ্যাক্সিন নিয়েও সিরিয়াস পেশেন্ট হিসেবে মানুষ হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে ও মারাও যাচ্ছে (উদাহরণ: ইজরায়েল), তখন বলা হল, ওহো, ভাইরাসটা দুর্ধর্ষভাবে খালি তার নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আসছে! তাই তৃতীয় ভ্যাক্সিন চাই বা বুস্টার ডোজ। ভারতে সিরাম ইনস্টিটিউট এর মালিক আদার সি পুনেওয়ালার সে কী গর্জ্জন! সুপ্রীম কোর্টের বিচারপতিরা যেন ভ্যাক্সিনের বিরোধিতা নিয়ে আগামি তিন বছর কোন মামলা না-শোনেন এবং প্রতিটি নাগরিক যেন ভ্যাক্সিন নেয় তা সুনিশ্চিত করার জন্য সরকারকে যেন নির্দেশ দেন। এদিকে সরকার প্রথমে বলল, ভ্যাক্সিন নিখরচায় দেওয়া হবে; তারপর বলল, না, না, বাজার থেকেই কিনতে হবে। মহামারী, অতিমারী যদি জনস্বাস্থ্যের সংকট হয় তাহলে একজন নাগরিকও বাজার থেকে ভ্যাক্সিন কিনবেন, এটা কি ন্যায়?
কী চলছে তাহলে?
কোভিড নিয়ে আজগুবী প্রচার করে আমরা একটা মানসিক ব্যাধিগ্রস্ত সমাজ তৈরি করে ফেললাম, ডাক্তারি ভাষায় এই ব্যাধির নাম, ‘অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার’ (উদ্বেগজনিত ব্যাধি)। সমাজটাকে এই ব্যাধি থেকে মুক্ত করতে না-পারলে বিপদ ভয়ানক।
বৃহৎ পুঁজির আঘাতে চিকিৎসা শাস্ত্রের, জনস্বাস্থ্যের আঙিনায় কি কি পরিবর্তন এলো? চিকিৎসকেরা কি ভুলে গেলেন যে ‘মেডিসিন সামটাইমস কিওরস, অফ্ন রিলীভস, বাট অলওয়েস কনসোলস’? কোনও একটা ‘ইল’ থাকলেই যে তার একটা ‘পিল’ থাকবে, এটাই কি হয়ে উঠল চিকিৎসার নতুন মন্ত্রগুপ্তি? সুভদ্র মানুষের ‘উন্নত স্বাস্থ্য চেতনার’ কর্পোরেট আলোকিত পথের ধারে জনস্বাস্থ্য যে পথের ভিখিরি হয়ে রইল, সেই দায় কার?
‘কোভিডের প্যানডেমিক’কে যখন আমরা চক্রান্ত বলছি, প্ল্যানডেমিক বলছি, তখন পাঠকের মনে এই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, তাহলে এই যে এত মানুষের সংক্রমিত হওয়া, এত মানুষের মৃত্যু, এসব কি সত্যই নয়? এগুলো কি ম্যাজিক? বিজ্ঞানের যুগে আমরা তো জানি যে ম্যাজিকের পেছনে থাকে বিজ্ঞান। মানুষের চোখকে ধোঁকা দেওয়ার কারসাজি। কোভিডের এই যে এত এত সংখ্যা, এও এক ধরণের ম্যাজিক। সংখ্যাকে বড় করে দেখানোর, মানুষের মনকে ধোঁকা দেওয়ার কারসাজি। এই কারসাজি লুকিয়ে রয়েছে কয়েকটি মাত্র প্রক্রিয়ার মধ্যে। আসুন আমরা বুঝে নিই এই প্রক্রিয়াগুলো।
ঠিক কোন উপায়ে ক্ষমতা-র প্রয়োজন-কে শাসিতের নিজের প্রয়োজন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়! ক্ষমতা-র তৈরি শাসনবিধিকে, স্বশাসিত অনুশাসন হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়! আতংক তৈরির চক্রান্ত-কে লুকিয়ে ফেলার সব থেকে ভালো উপায় হতে পারে, আতংকিত না হওয়ার যে কোন ভাষ্য-কে চক্রান্ত বলে দাগিয়ে দেওয়া।
(এই রচনাটি জুন ৫, ২০২১-এ ‘মেইনস্ট্রিম’ পত্রিকায় প্রকাশিত, কোবাড ঘান্দির প্রবন্ধ, ‘Origins of Corona and the Conspiracy Theorists’ -এর অনুসরণে লিখিত)
ঠিক কোন উপায়ে ক্ষমতা-র প্রয়োজন-কে শাসিতের নিজের প্রয়োজন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়! ক্ষমতা-র তৈরি শাসনবিধিকে, স্বশাসিত অনুশাসন হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়! আতংক তৈরির চক্রান্ত-কে লুকিয়ে ফেলার সব থেকে ভালো উপায় হতে পারে, আতংকিত না হওয়ার যে কোন ভাষ্য-কে চক্রান্ত বলে দাগিয়ে দেওয়া।
(এই রচনাটি জুন ৫, ২০২১-এ ‘মেইনস্ট্রিম’ পত্রিকায় প্রকাশিত, কোবাড ঘান্দির প্রবন্ধ, ‘Origins of Corona and the Conspiracy Theorists’ -এর অনুসরণে লিখিত)
ঠিক কোন উপায়ে ক্ষমতা-র প্রয়োজন-কে শাসিতের নিজের প্রয়োজন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়! ক্ষমতা-র তৈরি শাসনবিধিকে, স্বশাসিত অনুশাসন হিসেবে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যায়! আতংক তৈরির চক্রান্ত-কে লুকিয়ে ফেলার সব থেকে ভালো উপায় হতে পারে, আতংকিত না হওয়ার যে কোন ভাষ্য-কে চক্রান্ত বলে দাগিয়ে দেওয়া।
(এই রচনাটি জুন ৫, ২০২১-এ ‘মেইনস্ট্রিম’ পত্রিকায় প্রকাশিত, কোবাড ঘান্দির প্রবন্ধ, ‘Origins of Corona and the Conspiracy Theorists’ -এর অনুসরণে লিখিত)