ছোটবেলায় সমাজ বিজ্ঞানের বইতে আমরা পড়তাম ভারতবর্ষের সম্পদের উৎস তার বৈচিত্র্যময়তা। কিন্তু ইদানিং দেখা যাচ্ছে যে 'বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান'স্লোগান ক্রমশ পাল্টে এখন one nation-one product-one language-one culture স্লোগান অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমাদের দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে যেমন হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুস্থান প্রকল্পের ঢক্কানিনাদে চিরাচরিত unity in diversityর কথা হারিয়ে যাচ্ছে, সেরকম গোটা পৃথিবী জুড়ে একই হাওয়া। ভেবে দেখুন, ২০২৩সালের G20 সম্মেলনের ট্যাগলাইন। দমদম বিমানবন্দর থেকে শহরে ঢোকার রাস্তা ছেয়ে গেছে বিশাল বিশাল হোর্ডিং-এ : “ এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ" (“One Earth. One Family. One Future”)
বিশ্বের চার ভাগ ক্ষুধার্ত মানুষের এক ভাগ বাস করে ভারতে। ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে বিশ্ব ক্ষুধা সূচক সারণীতে ভারতের স্থান ১২৫টি দেশের মধ্যে ১০৭ থেকে নেমে ১১১নম্বরে পৌঁছেছে এবং দেখা যাচ্ছে শিশুমৃত্যু, অপুষ্টি আর অ্যানিমিয়ার ক্ষেত্রে ভারতের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আবার পৃথিবীর যে পঞ্চাশটি দেশে স্বাস্থ্য খাতে সরকারি বরাদ্দ সর্বনিম্ন ভারতবর্ষ সেই তালিকাতেও রয়েছে। অথচ আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ম্ভর। পৃথিবীর বহু দেশের খাদ্য সুরক্ষা নির্ভর করে ভারত থেকে রপ্তানি হওয়া শস্যের ওপর। এবিষয়ে লিখেছেন শ্রী সন্দীপন মিত্র।
বিশ্বজুড়ে এবং আমাদের দেশে যথেচ্ছ স্টেরয়েড ব্যবহার করার মতো করোনার অতিচিকিৎসা প্রোটোকল বা অপরীক্ষিত টিকার গণপ্রয়োগ এক অভূতপূর্ব জনস্বাস্থ্য সঙ্কট ডেকে এনেছে। বিশেষত স্কুলপড়ুয়া, অল্পবয়সী এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ দ্রুত মাত্রাছাড়া হয়ে চলেছে। একটি জনস্বাস্থ্য সংগঠন হিসেবে মানুষের সামনে যথাযোগ্য প্রমাণ সহযোগে সেকথা তুলে ধরার দায় আমাদের ওপর বর্তায়। সেই ভাবনা থেকে আমরা সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল এবং বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে একটি সমীক্ষা চালাই।
আমরা দেখেছি ২০১৯ থেকে ২০২২ সময়সীমায় বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, রক্তক্ষরণজনিত সমস্যা এবং স্ট্রোক যথাক্রমে প্রায় ৪৫৫%, ৪৪৫%, ৩৪৩%, ৪৯১% এবং ৮১১% বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে সংখ্যাগুলি নিজেরাই কথা বলছে। মনে রাখতে হবে যে এই দুটি হাসপাতালে ইমারজেন্সি পরিষেবা না থাকার কারণে রক্তক্ষরণ, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের রোগীরা এখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আসেন না। তাই আমরা মনে করছি যে দেশের জনতার মধ্যে এইসব রোগের প্রকোপ আরও বেশি সংকটজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেলুড়ের শ্রমজীবী হাসপাতালে ইমারজেন্সি পরিষেবা না থাকলেও হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা করানো রোগীর সংখ্যা প্রতি বছরে ৫০০০এর আশেপাশে থাকে। করোনাকালেও এর খুব একটা হেরফের হয়নি। এই হাসপাতালের সাথে যুক্ত দক্ষ এবং অকুতোভয় ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বাস্থ্য আন্দোলনের সাথে যুক্ত অক্লান্ত কর্মীদের জন্য তা সম্ভব হয়েছিল।
বিশ্বজুড়ে এবং আমাদের দেশে যথেচ্ছ স্টেরয়েড ব্যবহার করার মতো করোনার অতিচিকিৎসা প্রোটোকল বা অপরীক্ষিত টিকার গণপ্রয়োগ এক অভূতপূর্ব জনস্বাস্থ্য সঙ্কট ডেকে এনেছে। বিশেষত স্কুলপড়ুয়া, অল্পবয়সী এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের পরিমাণ দ্রুত মাত্রাছাড়া হয়ে চলেছে। একটি জনস্বাস্থ্য সংগঠন হিসেবে মানুষের সামনে যথাযোগ্য প্রমাণ সহযোগে সেকথা তুলে ধরার দায় আমাদের ওপর বর্তায়। সেই ভাবনা থেকে আমরা সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতাল এবং বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে একটি সমীক্ষা চালাই।
২০১৯ থেকে ২০২১ সময়সীমায় সরবেড়িয়ার সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালে যত রোগী ভর্তি হয়েছেন তাঁদের মধ্যে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ এবং হৃদরোগ যথাক্রমে প্রায় ১৩৩%, ৩৩% এবং ১০০% বৃদ্ধি পেয়েছে। সুন্দরবন শ্রমজীবী হাসপাতালে মোট রোগীর পরিমাণ যথেষ্ট কম এবং হাসপাতালটিতে কোন ইমারজেন্সি পরিষেবা নেই। তাই এই হাসপাতাল থেকে এই সব রোগের মতো সমস্যার তথ্য এলাকার প্রামাণ্য চিত্র হিসেবে ধরে নেওয়া মুশকিল ছিল। সেই ভাবনা থেকে আমরা পরবর্তী সমীক্ষা চালাই বেলুড় শ্রমজীবী হাসপাতালে।
“দ্য ইকোলজিস্ট পত্রিকায় খুব সুন্দর একটি কার্টুন ছাপা হয়েছিল যার হেডিং ছিল ইভল্যুশন অফ সায়েন্স। ছবিটা এরকম—দুটো পাশাপাশি ছবির একটাতে গ্যালিলিও, তাঁর সামনে পোপ দাঁড়িয়ে। পোপ গ্যালিলিওকে বলছেন যে, তুমি যদি চার্চের ডগমা না মানো তাহলে তোমাকে পুড়িয়ে মারব। পরের ছবিতে পোপের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে কর্পোরেট বস,আর গ্যালিলিওরূপী পুশতাইকে সে বলছে যে, তুমি যদি কর্পোরেট ডগমা না মানো তাহলে তোমাকে মামলা করে সর্বস্বান্ত করে দেব। এই হাস্যকর অথচ ভয়ঙ্কর বিবর্তনটা বিজ্ঞানের কিন্তু হয়েছে।”
লিখেছেন অভ্র চক্রবর্তী
কোনও হুমকির সামনেও, আমি আমার ডাক্তারি বিদ্যাকে এমনভাবে ব্যবহার করব না যাতে নাগরিক স্বাধীনতা আর জনমানুষের অধিকার লঙ্ঘিত হয়” – হিপোক্রেটিসের শপথের অংশ, ডাক্তারদের শপথের অংশ। তাই অতিমারীর ঝঞ্ঝার মধ্যে গণ টিকাকরণ কতটা যুক্তিগ্রাহ্য, “লকডাউন” কার সর্বনাশ ডেকে আনে, আর কার পৌষ মাস, এই প্রশ্ন ন্যায্য। অতিমারী কি প্রকৃতির স্বাভাবিক সৃষ্টি, না কোনও গবেষণাগারের কৃত্রিম নির্মাণ, “কোভিড”-এ ভোগান্তি আর মৃত্যুর চেয়ে অনাহারের বিপন্নতা আর মৃত্যু মহীয়ান কিনা, এসব কথা তুলতেই হবে।
সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রথমত ও প্রধানত প্রয়োজন পুষ্টি। তাই জনস্বাস্থ্যের কথা ভাবতে হলে আগে জনগণের জন্য সুসম ও পুষ্টিকর খাদ্যের প্রয়োজনীয় যোগান ও জনগণের কাছে তা সহজলভ্য করার কথা ভাবতে হবে। এর উল্টো দিকে, খাদ্যের মধ্যে ক্ষতিকারক উপাদান থাকলে তা হবে ব্যক্তি ও জনসমষ্টির সুস্বাস্থের পরিপন্থি। তাই জনস্বাস্থ্যের ওপর জিএমওর প্রভাব বুঝতে হলে আগে এটা জানা দরকার জিএমও কি, এক্ষেত্রে খাদ্যের উপাদানে ক্ষতিকারক কিছু থাকে কিনা এবং থাকলে তা স্বাস্থ্যের কতটা ক্ষতি করতে পারে। কারণ ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে খাদ্যগুন আর বিবেচ্য হতে পারে না।
এক স্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মীর ডায়েরি থেকে করোনার সময়ের কিছু পাতা...
যুক্তি যখন প্রতিষ্ঠান আর ক্ষমতা-র মান্যতার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে, তখন এক বেজায় সমস্যা তৈরি হয়। ক্ষমতার দাপটকেই 'যুক্তি'-র প্রমাণ হিসেবে দাবি করা হয়। 'কোভিড ১৯-এর নামে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রে যে পাহাড়প্রমাণ অন্যায় এবং মিথ্যাচার সংঘটিত হচ্ছে, সারা পৃথিবী জুড়ে ক্ষমতাশালীদের যে আখ্যান এই অন্যায় এবং মিথ্যাচারকে ‘নিউ নরমাল’ আর ‘গ্রেট রিসেট’ বলে চালানোর চেষ্টা করছে, স্বঘোষিত যুক্তিবাদীরা তাদের সুরেই পোঁ ধরেছেন। এই চিৎকৃত আত্মরতি, নির্বোধ এবং বদ রসিকতা অনেক সময় কুৎসিত মনে হয়।'
আমাদের দেশে চিকিৎসা বরাবরই "পণ্য"। তবে ১৯৮৬ সাল থেকে সরকার "ক্রেতা সুরক্ষা আইন" করে চিকিৎসা পরিষেবাকে আইনী ভাবে "পণ্য" হিসেবে জনগণের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে । ফলে চিকিৎসা পরিষেবা ক্ষেত্র চিকিৎসা বাজারে পরিণত হয়েছে । দেশের চিকিৎসা বাজার মূলত বেসরকারী । তবে সরকারী ক্ষেত্র থেকে চিকিৎসা বিনামূল্যের বলা হলেও রোগী ও জনসাধারণকে বিভিন্ন ভাবে গাঁটের কড়ি খরচ করতে হয় । এ ধরনের একটি ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে চিকিৎসকরা রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রেসক্রিপশন প্রদান করেন ।
পাতা 1 এর 2