
কর্পোরেট ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের যুদ্ধবাজ সরকারদের হাতে কৃত্রিম জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিকতম যুদ্ধাস্ত্র। এই অস্ত্র ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় প্রথম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করে। ভারতে সেই পঞ্চাশের দশক থেকে ক্ষরাপ্রবণ অঞ্চলে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টিপাত বাড়ানোর পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। বর্তমানে ভারত সরকারের পরিবেশ মন্ত্রকের অধীন CAIPEEX প্রোজেক্টের রিপোর্টে জানানো হয়েছে যে কর্ণাটক, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চলে গত বর্ষায় ১৮% বেশি বৃষ্টি হয়েছে। এবিষয়ে আমাদের রাজ্যসভায় হওয়া আলোচনা থেকে জানা যাচ্ছে যে ভারতের হাতে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি ভালভাবেই মজুত রয়েছে। অভাব রয়েছে কেবল কর্পোরেট মুনাফার হিসাবের বাইরে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার। প্রকৃতি পরিবেশকে রক্ষা করার বদলে কর্পোরেট ঔদ্ধত্য জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, কারণ জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যে কোন জায়গার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা-খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

সম্প্রতি কলকাতার রাস্তা থেকে ঐতিহ্যবাহী হলুদ ট্যাক্সি উধাও হয়ে যাচ্ছে। পুরনো বেসরকারি বাসের অনেক রুট বাতিল হতে চলেছে কারণ পুরনো বাসগুলির মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে আর নতুন লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে না। বছর পনেরো আগে রমরমিয়ে এসেছিল যে গ্যাসের অটো তার বদলে আসতে শুরু করেছে নতুন ইলেকট্রিক অটো (এবারেও অটো বেচছে সেই হামারা বাজাজ)। বেশ কিছু বছর যাবৎ কলকাতা সহ দেশের সব মেট্রো শহরে আইন জারি করা হয়েছে ১৫ বছরের পুরনো কমার্শিয়াল গাড়ির লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। পুরনো গাড়ির ইঞ্জিনে জ্বালানি দহন করার ফলে যে সমস্ত বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন হয় তার দূষণ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই সরকারি উদ্যোগ। আপাতভাবে এই প্রচেষ্টা সাধুবাদের যোগ্য এবং অবশ্য প্রয়োজন বলেই মনে হয়। কিন্তু বিষয়টিকে একটু বৃহৎ প্রেক্ষাপটে দেখা দরকার।

২২, ২৩ ও ২৪ শে মে, ২০২৫ পনেরো বছরের পুরোনো কমার্শিয়াল গাড়ির লাইসেন্স বাতিলের বিরুদ্ধে বেসরকারি বাস মালিকদের সংগঠনের পক্ষে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। শুক্রবার, ২৩ শে মে, বিকেলে যাদবপুর ৮বি বাস স্ট্যান্ড এবং সংলগ্ন এলাকার অটো স্ট্যান্ডগুলোতে জনস্বাস্থ্য মোর্চার তরফে প্রচার কর্মসূচি নেওয়া হয়।
প্রতি পনেরো বছর অন্তর লাইসেন্স বাতিলের জুলুমে আমাদের শহরের সস্তার গণপরিবহন ব্যবস্থা ধুঁকছে। এই নতুন আইন কি আদৌ শহরে বাতাসের মান ফিরিয়ে আনতে পারবে? এই বিষয়ে আমাদের লিফলেট এখানে পড়ুন। বেশ কয়েকজন অটো চালকের সঙ্গে জনস্বাস্থ্য মোর্চার সদস্যদের কথপোকথনে উঠে আসে কোর্টের হতাশাজনক রায়ের কথা। নতুন আইনের ফলে বাস, অটো ও ট্যাক্সি মালিকরা প্রতি পনেরো বছর অন্তর নতুন গাড়ি কেনার জন্য নতুন ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ছে। বাসের পুরোনো রুট উঠে যাওয়ায় কর্মহারা হচ্ছে অনেক মানুষ। সহজলভ্য গণপরিবহন ব্যবস্থা শক্তিশালী করে গড়ে তোলার দাবি জানিয়ে আজ থেকে আমাদের প্রচার কর্মসূচি শুরু হল।

অতিমারি চুক্তিতে সমর্থন জানালো ভারত। আমেরিকা, রাশিয়াসহ ১১টি দেশ ভোট দানে বিরত থাকল।
গত ২০শে মে, ২০২৫ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বার্ষিক সম্মেলনে প্যান্ডেমিক ট্রিটি বা অতিমারি চুক্তি আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়েছে। চুক্তির অন্তর্গত Pathogen Access and Benefit-Sharing (PABS) System নামের সেন্ট্রাল সার্ভারে তথ্য প্রদান করার বিষয়ে বেশ কিছু আলোচনা এখনও বাকি রয়েছে। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সেই আলোচনা সেরে ফেলার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যদিও সদস্য দেশগুলির এই PABS সার্ভারের বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেক। PABS এর খসরা তৈরি হওয়ার আগে তড়িঘড়ি প্যান্ডেমিক চুক্তি পাশ করানো হল WHO এর বার্ষিক অধিবেশনে।

বিজয়গড় ও বাঘা যতীন রাজ্য সাধারন হাসপাতালে বহির্বিভাগে সমীক্ষা চালিয়ে প্রাপ্ত প্রাথমিক কিছু তথ্য।
দক্ষিণ কলকাতার দুটি সরকারি হাসপাতালে প্রাথমিক সমীক্ষা থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জনস্বাস্থ্য মোর্চা'র একটি রিপোর্ট। আরও কিছুটা সময় গেলে হাসপাতাল দুটির উপর নির্ভরশীল মানুষদের মধ্যে ধারাবাহিক ভাবে কাজ করে গেলে মোটামুটি একটি ছবি হয়তো আমরা বুঝতে পারবো। এটি সেই কাজেরই একটি ছোট অংশ।
চাষের জমি, পানীয় জল, পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল, ভূগর্ভস্থ খনিজ - প্রকৃতির সমস্ত সম্পদ বহুজাতিক কোম্পানিদের কাছে মুনাফাদায়ী পণ্য মাত্র, তারা পরিবেশ রক্ষার পরোয়া করে না। কর্পোরেটদের নির্ধারণ করা উন্নয়নের যে মডেল আমাদের দেশে/ রাজ্যে বহাল রয়েছে তাতে পারমাণবিক শক্তির মতো বিপজ্জনক বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতি বর্তমানে 'ক্লিন এনার্জি' বা পরিবেশ বান্ধব শক্তির তকমা পাচ্ছে! পাশাপাশি কর্পোরেট ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের যুদ্ধবাজ সরকারদের হাতে কৃত্রিম জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিকতম যুদ্ধাস্ত্র। আমাদের রাজ্যসভায় হওয়া আলোচনা থেকে জানা যাচ্ছে যে ভারতের হাতে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি ভালভাবেই মজুত রয়েছে। অভাব রয়েছে কেবল কর্পোরেট মুনাফার হিসাবের বাইরে বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার। প্রকৃতি পরিবেশকে রক্ষা করার বদলে কর্পোরেট ঔদ্ধত্য জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, কারণ জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যে কোন জায়গার বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা-খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।


গতকাল ২৭শে সেপ্টেম্বর WBJDF এর ডাকা গণ কনভেনশনে তিলোত্তমা আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে জনস্বাস্থ্য মোর্চা উপস্থিত ছিল। আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের নেতৃত্বের হাতে আমরা আমাদের বক্তব্য লিখিত আকারে পৌঁছে দিয়েছি। আমাদের লেখা খোলা চিঠিটি এই পোস্টের সঙ্গে দেওয়া রয়েছে।
আন্দোলনের ৫০ দিন পার করে আমরা দেখছি রাজ্য বা কেন্দ্র কোন প্রশাসনের থেকেই সুবিচার সহজলভ্য নয়। তিলোত্তমার জন্য সুবিচার ছিনিয়ে আনতে, সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার অরাজকতার সমাপ্তি ঘটাতে আমাদের আজ এক বৃহত্তর জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের ডাক দিতে হবে। চিকিৎসক, স্বাস্থ্য কর্মী ও আপামর জনগণকে সংঘবদ্ধ হয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের দাবিগুলো জোরদার করতে হবে। তবেই প্রতিটি প্রান্তিক রোগী বিনামূল্যে যুক্তিপূর্ণ স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে পারেন। একমাত্র সেদিন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বা হাসপাতালে ডাক্তার, চিকিৎসক বা রোগী ও তাঁর পরিবার সুরক্ষা পাবেন। সেই লক্ষ্যে আমাদের সকলের এই তিলোত্তমা আন্দোলন জারি থাকবে।


তিলোত্তমার জাস্টিসের দাবি আজ এক বৃহত্তর আন্দোলনের রূপ নিয়েছে। এই স্বতঃস্ফূর্ত জনজাগরণকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আজ সময়ের দাবি।
পাতা 1 এর 4